আইন অনুযায়ী যে কোনো নগরীতেই আবাসিক হোটেল এবং রেস্তোরাঁ চালাতে এর বাণিজ্যিক নিবন্ধন নেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু পর্যটননগরী কক্সবাজারে নিবন্ধন ছাড়াই চলছে অধিকাংশ আবাসিক হোটেল ও রেস্তোরাঁ। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস এবং রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, জেলায় হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস, কটেজ, রিসোর্ট রয়েছে মোট ৪৯৮টি। এ ছাড়া রেস্তোরাঁ রয়েছে চার শতাধিক। এর মধ্যে জেলা প্রশাসনের নিবন্ধন রয়েছে মাত্র ১৫০টি আবাসিক হোটেল এবং ৬৯টি রেস্তোরাঁর। এমন হোটেল-রেস্তোরাঁও আছে, যেগুলো আসলে নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্য নয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন এলাকা হিসেবে কক্সবাজারে বিপুল সংখ্যক হোটেল-রেস্তোরাঁ নিবন্ধনের বাইরে থাকায় সরকার প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের নাজির স্বপন কান্তি পাল বলেন, এক ও দুই তারকা মানের হোটেলগুলোর নিবন্ধন দিই আমরা। তিন থেকে পাঁচ তারকা মানের হোটেলগুলোর নিবন্ধন দেয় মন্ত্রণালয়। এক থেকে ৫০ কক্ষের হোটেলগুলোকে এক তারকা এবং ৫১ থেকে ১০০ কক্ষের হোটেলগুলোকে দুই তারকা হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। নিবন্ধনও দেওয়া হয় সে বিবেচনায়। কক্সবাজারে অধিকাংশ হোটেলই এক ও দুই তারকা মানের বলে জানান তিনি।
জানা গেছে, এক তারকা মানের হোটেলের নিবন্ধন পেতে সরকারের কোষাগারে জমা দিতে হয় ৩০ হাজার টাকা। দুই তারকা মানের হোটেলের জন্য ৫০ হাজার, তিন তারকা হোটেলের জন্য দিতে হয় দেড় লাখ টাকা। চার তারকা মানের হোটেলের জন্য ৫ লাখ এবং পাঁচ তারকা হোটেলের জন্য ৭ লাখ টাকা জমা দিতে হয়। নিবন্ধন নবায়নের ক্ষেত্রে এক তারকা হোটেলকে ৫ হাজার ও দুই তারকা হোটেলকে জমা দিতে হয় ১০ হাজার টাকা। তিন তারকা হোটেল ৫০ হাজার, চার তারকা হোটেল ১ লাখ এবং পাঁচ তারকা হোটেলের লাগে দেড় লাখ টাকা।
শহরের কলাতলী প্রধান সড়কে অবস্থিত হোটেল শামস প্লাজা, ইকরা বিচ হোটেল, গ্যালাক্সি রিসোর্ট, গ্রান্ড বিচ রিসোর্ট, স্বপ্নবিলাস, টাইড ওয়াটার, সি ওয়েলকাম, সি পয়েন্ট রিসোর্ট, সি ভিউ রিসোর্ট, রিম রিসোর্ট, আমারি রিসোর্ট, সুগন্ধা পয়েন্টের বি ব্লকে অবস্থিত ইউনিটি ইন হোটেল, বে-কুইন রিসোর্ট, ব্লু-ওশান গেস্ট হাউস, হাইপেরিয়ান বে-কুইন, হোটেল এবি গার্ডেন, সাকিরা বে, সোহাগ গেস্ট হাউস, হাউপেরিয়ান, সি ওয়ার্ল্ড, রিগ্যাল প্যালেস, হোটেল এসকে কামালসহ বেশকিছু হোটেলে তাদের নিবন্ধনের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে কর্মকর্তাদের কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি। রিম রিসোর্টের মালিক নাছির উদ্দিন দাবি করেন– হোটেল ব্যবসার জন্য যে নিবন্ধন নিতে হয়, সে বিষয়টিই তারা অবগত নন। এ বিষয়ে কোনো সময় ডিসি অফিস বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকেও তাগাদা দেওয়া হয়নি। শহরের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সামনে গণপূর্তের প্লটে শতাধিক কটেজ রয়েছে। এসব কটেজের একটিরও নিবন্ধন নেই।
জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) কে এম ইনজারুল হক অবশ্য বলছেন, নিবন্ধনের বিষয়ে চাপ প্রয়োগের জন্য বিভিন্ন সময় তারা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। অভিযানের আগে হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিকদের প্রথমে মৌখিকভাবে, এর পর চিঠিও দেওয়া হয়।
নিবন্ধনের বিষয়ে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়েছে। আসলে জেলা প্রশাসনের নিবন্ধন নিতে আরও ১১টি দপ্তরের কাগজের প্রয়োজন হয়। তাই এসব কাগজ সংগ্রহ করে নিবন্ধন নেওয়া কঠিন হয়ে যায়।
কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ডালিম বলেন, সব রেস্তোরাঁ যাতে নিবন্ধনের আওতায় আসে তার জন্য আমরা প্রশাসনের সঙ্গে একযোগে কাজ করছি। আশা করি দ্রুত অধিকাংশ রেস্তোরাঁ নিবন্ধনের আওতায় আসবে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হোটেল-রেস্তোরাঁ মালিকদের সঙ্গে গত দুই মাসে একাধিকবার বৈঠক করে দ্রুত নিবন্ধন নিতে আহ্বান জানিয়েছি। তারাও কথা দিয়েছেন, দ্রুত নিবন্ধনের জন্য আবেদন করবেন। সুত্র: সমকাল