কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে কে নিরাপদ, কে অনিরাপদ, ব্যক্তিগত আক্রমন ও নানা তর্কবিতর্কের মধ্যদিয়ে প্রচারণা শেষ হয়েছে। অপেক্ষার পালা শেষ হলেও পৌরবাসী কেমন মেয়র চান তার প্রতিফলন ঘটবে কাল ১২ জুন। তবে সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীই বিজয়ী হবেন বলে দাবী করেছেন। এদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে পৌর শহবে নিরাপত্তা মহড়া অনুষ্ঠিত হয়। নানা তর্কবিতর্কের মধ্যেই শেষ হয়েছে কক্সবাজার পৌর নির্বাচনের প্রচারণা।
আগামী কাল ১২ জুন কক্সবাজার পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে ৯৪ হাজার ৮০২ জন ভোটার পৌর পিতা ও ১২ জন কাউন্সিলর নির্বাচত করবেন। তৎমধ্যে মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী দুইজন আওয়ামী লীগ মনোনীত মাহবুবুর রহমান চৌধুরী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসেদুল হক রাসেদ। নির্বাচনে মেয়র পদে কেমন প্রার্থীকে ভোট দিতে চান পৌরবাসী তা নিয়ে শিক্ষিত ও বিভিন্ন পেশার লোকজন মতামত ব্যক্ত করেছেন। তবে অধিকাংশ ভোটারই মুখ খুলতে চান না।
কক্সবাজার শহরের ১২ নং ওয়ার্ডের ভোটার ডলফিন মোড়ের ব্যবসায়ি শফিউল আলম জানান, বিগত সময়ে আমরা বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার। আমাদের মত ভাসমান ব্যসায়িরা আতংকের মধ্যে আছি। কিছুদিন পরপরই আমাদের সবাইকে মোটা অংকের টাকা দিতে হয়। এই টাকা কারা নেয় তা সকলেই জানে। আমরা পৌর নির্বাচনে ভোটের মাধ্যমে এই অত্যচার থেকে পরিত্রাণ পেতে চাই। তাদের চাহিদামত টাকা না দিলেই আমার স্থানে অন্য একজনকে এনে বসিয়ে দেয়। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার কোন সুযোগ নেই। এই নির্বাচনে অনেক কিছু নির্ভর করছে। অনিরাপদ কোন প্রার্থী বিজয়ী হলে অসংখ্য ব্যবসায়িকে ব্যবসা ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হবে। তাই আমরা সতর্কতার সহিত ভোট দিতে চাই। কাকে ভোট দেব এটি বলা যাবে না।
শহরের ১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা শামসুল আলমের ছেলে মির কাসেম বলেন, আমরা সব সময় চাপের মধ্যে বসবাসকরি। রাজনীতি আমাদের মুখ্য বিষয় নয়। যাকে ভোট দিলে সরকার প্রদত্ত সকল সুবিধা আমরা পাব এবং চাপ মুক্ত হব এমন নিরাপদ প্রার্থীকে ভোট দেব। এই ওয়ার্ডের ভোটাররা প্রতিনিয়ত হুমকি ও ধমকির মুখে দিনযাপন করছে। আমরা ১নং ওয়ার্ডবাসী এই হুমকি-ধমকির অবসান ঘটাতে চাই। এই নির্বাচনটা আমাদের জন্য বড় সুযোগ। কে দলীয় প্রার্থী, কে নির্দলীয় প্রার্থী তা ভেবে দেখার সময় নেই। আমরা যাতে আজীবন নিরাপদে বসবাস ও প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা পেতে পারি এমন প্রার্থীকে ভোট দেব। আমরা সব রাজনৈতিক দলের সমর্থকরা ঐক্যবদ্ধভাবে ভোট দেব। যা ১২ তারিখ প্রমাণ হবে।
৭ নং ওয়ার্ডে বসবাসরত চাকরিজীবি আবুল কালাম বলেন, আমি ভিন্ন এলাকা থেকে এসে এখানে ভোটার হয়েছি। আমরা প্রার্থীর আচার-আচরণ দেখে শুনে ভোট দিতে চাই। ইতোমধ্যে কিছু বক্তব্য নিয়ে আমরা শঙ্খিত। আমরা যেহেতু ভিন্ন এলাকা থেকে এসে এখানে ভোটার হয়েছি, সেহেতু যিনি আমাদের সুন্দর করে বসবাসের সুযোগ করে দেবেন তাকেই আমরা ভোট দেব। উগ্র ও আধিপত্যবাদী কাউকে মেয়র হিসেবে দেখতে চাই না। আমাদের জন্য প্রতীক কোন বিষয় নয়। মেয়র পদে কে যোগ্য পৌরবাসী ইতোমধ্যে চিহ্নিত করেছেন। সুতরাং সৎ, যোগ্য ও অহংকারমুক্ত একজন মেয়র প্রার্থীকে আমরা ভোট দেব।
কক্সবাজার সিটি কলেজের একজন প্রভাষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, কক্সবাজারের মত একটি পর্যটন নগরীর মেয়র পদ অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। তাই এখানে একজন যোগ্য মেয়র প্রয়োজন। যিনি জাতীয় পর্যায়েও গুরুত্বপুর্ণ অবদান রাখতে পারবেন। বিভিন্ন সভা-সেমিনারে কক্সবাজারের নানা সমস্যার বিষয় চমৎকারভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন। যিনি আমাদের প্রতিনিধিত্ব করবেন তার বক্তব্য আচার-আচারণ নিশ্চই গ্রহনযোগ্য হতে হবে। তাই আমরা ভেবে চিন্তে ভোট দিতে চাই।
নৌকার প্রার্থী মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আমি চেষ্টা করছি দলের সবাইকে নিয়ে প্রচারণা চালাতে। আওয়ামী লীগে কোন সন্ত্রাস ও পেশীশক্তির রাজনীতি করে না। জনগণের ও উন্নয়নের রাজনীতিতে বিশ্বাসী জননেত্রী শেখ হাসিনা। আমি সব প্রার্থীকে সম্মান করি। কারো প্রতি আমার আপত্তি নেই। কিন্তু একটি পক্ষ টাকা দিয়ে ভোটারদের কিনতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এতে নির্বাচনী পরিবেশ বিনষ্ট হতে পারে। যোগ্যতা থাকলে ভোট কিনতে হবে কেন।
মাহাবুবুর রহমান আরও বলেন, আমার জন্ম কক্সবাজারে। আমার বাবা ব্যবসায়ী হিসেবে এ অঞ্চলের পরিচিত মুখ। তাই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় সাধারণ মানুষ নৌকাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদ বলেন, জনগণই আমাকে ভোটে নামিয়েছে। জনগণ ভোট দিতে পারলে আমার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। আমার বাবা মোজাম্মেল হকের দেখানো পথে পৌরবাসীর সেবায় থাকতে চাই।
রাশেদের অভিযোগ, নৌকার প্রার্থী ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাদের বিরুদ্ধে নানা প্রচারণা চালাচ্ছেন। আশাকরি ১২ তারিখ আমার বিজয় হবে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এম সাহাদাত হোসেন বলেন, প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট, ৭ প্লাটুন বিজিবি, ৮ শতাধীক পুলিশ, র্যা ব ও আনসার সদস্যের সমন্বিত বাহিনী নির্বাচনের নিরাপত্তায় কাজ করবে।
পাঠকের মতামত