সংসদ নির্বাচনের মাঠ শান্তিপূর্ণ রাখতে পুলিশ সুপারদের (এসপি) কড়া বার্তা দিয়েছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স। নির্বাচনী পরিবেশ বানচাল করতে কোনো প্রার্থী বা তার সমর্থক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা আইজিপির। বিশৃঙ্খলাকারী যদি ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী বা সমর্থকও হন, সেক্ষেত্রেও কোনো ছাড় না দিতে বলা হয়েছে মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা চালালে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী বা সমর্থকদের নামেও মামলা দেওয়ার এবং গ্রেপ্তারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তাদের।
জানতে চাইলে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ডিআইজি (অপারেশনস) আনোয়ার হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, ‘মাঠপর্যায়ে নির্বাচনপূর্ব মুহূর্তে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং ভোটের পরিবেশ স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ রাখতে পুলিশ পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন। এসপিদের এ নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স।’
ডিআইজি আনোয়ার হোসেন জানান, নির্বাচনের পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত মিটিং হচ্ছে, জুম মিটিং করে সার্বিক ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে কি না, ভোটের মাঠে কেউ কোনো সহিংসতামূলক পরিস্থিতি তৈরি করছে কি না, পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বরাবরই সেসব ব্যাপারে খোঁজ রাখা হয়। দফায় দফায় কথা বলা হয় এসপিদের সঙ্গে।
ডিআইজি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত নির্বাচনী মাঠে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হওয়ার কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। আশা করছি, ভোটাররা এবার উৎসবমুখর, সহিংসতামুক্ত পরিবেশে ভোট দিতে পারবে। পুলিশ সেই পরিবেশ বজায় রাখতে চায়।’
কোনো প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে থাকবে না পুলিশ
পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা জানান, কোনো প্রার্থীকে নির্বাচনে জেতানোর দায়িত্ব পুলিশের নয়। শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে যে প্রার্থীই জিতুক না কেন, তা নিয়ে পুলিশের কোনো মাথাব্যথা নেই। তারা জানান, নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ করে তুলতে পুলিশ ছাড়াও নির্বাচন কমিশনের অধীনে ইনকোয়ারি কমিটি রয়েছে। প্রচারে বাধা, প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের হুমকি বা সংঘাত-সহিংসতার বিষয়ে অভিযোগের ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিতে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে কাজ করবে পুলিশের টিম।
নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর পক্ষে বা বিপক্ষে পুলিশ যাতে কোনো কর্মকাণ্ডে না জড়ায় সে বিষয়ে এসপিদের সতর্ক করা হয়েছে। পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারাভিযানে বাধা দিলে, আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ দলের প্রার্থী এবং স্বতস্ত্র প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখানো, হামলা করা, বা মারপিট করার ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী বা তাদের কর্মী-সমর্থক হলেও সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের পক্ষে এসপি বা মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তারা কোনো কাজ করছেন কি না, সে বিষয়ে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। কোনো পুলিশ সদস্য বা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেবে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স।
নাশকতার ব্যাপারে পুলিশ সজাগ রয়েছে
এবারের নির্বাচনে বিএনপি, জামায়াতসহ সরকারবিরোধী বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে না। কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন, এমন পরিস্থিতিতে সরকারবিরোধীরা যাতে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করতে না পারে, সে প্রস্তুতি রয়েছে পুলিশের। পাশাপাশি আজ ১৮ ডিসেম্বর থেকে প্রার্থীরা যাতে নির্ভয়ে নির্বাচনী প্রচারাভিযান চালাতে পারেন, হামলা ও হুমকির মতো কোনো পরিস্থিতি যাতে দেখা না দেয়, সে বিষয়েও সর্তক দৃষ্টি রাখছে পুলিশ। ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ভোট দিতে আসতে পারেন, সে পরিবেশ সৃষ্টিতে সর্বোচ্চ অবস্থান নেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
কেস স্টাডি নরসিংদী-১ আসন
গত ২৯ নভেম্বর নরসিংদী-১ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নজরুল ইসলামের মতবিনিময় সভা থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতি হুমকি দিয়ে নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম ওরফে রিমন বলেছিলেন, ‘মাইরের ওপর ওষুধ নাই। পোলাপাইনও জানে কীভাবে পিটাইতে হয়। কোনো স্বতন্ত্র-মতন্ত্র ছাত্রলীগ মানে না।’ পরদিন ৩০ নভেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে ওই ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে নরসিংদী মডেল থানায় মামলা করেন সদর উপজেলা নির্বাচন র্কমকর্তা মো. ওমর ফারুক। ১ ডিসেম্বর শুক্রবার দুপুরে জেলা গোয়েন্দা শাখার একটি দল ঢাকার নিউমার্কেট এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে রিমনকে।
এদিকে সরাসরি নির্বাচনী পরিস্থিতির সঙ্গে যুক্ত না হলেও ব্যবসায়ী আহম্মেদ হোসেন সোহেল হত্যাসংক্রান্ত একটি অডিও রেকর্ড ভাইরাল হওয়ার সূত্র ধরে চট্টগ্রামে ১৬ ডিসেম্বর রাতে মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সহসভাপতি হাসান মুরাদকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। কর্মকর্তারা বলছেন, এ ধরনের গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে সরকারি দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে এই বার্তা দেওয়া হচ্ছে যে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে এবং নির্বাচনেও পুলিশ কোনো প্রার্থী বা দলের পক্ষে কাজ করবে না। তারা বলছেন, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটের পরিবেশের বিরুদ্ধে যায়, এমন যেকোনো ঘটনায় কঠোর ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। তাই প্রার্থীদের বিধি মেনে প্রচারাভিযান চালানোর অনুরোধ করা হচ্ছে পুলিশের পক্ষ থেকেও।
পুলিশের একাধিক কর্মকতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবার সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করা পুলিশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তার ওপর গত নবম ও দশম জাতীয় সংসদের দুই নির্বাচনে (২০১৪ ও ২০১৮ সাল) পুলিশের ভূমিকা নিয়ে নানা নেতিবাচক অনাকাঙ্ক্ষিত আলোচনা-সমালোচনা ও অভিযোগ রয়েছে। বিএনপি-জামায়াতে ইসলামীসহ নির্বাচনে অংশ না নেওয়া দলগুলোও নানা অপপ্রচার চালাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স আন্তরিকভাবে চাইছে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ক্ষেত্রে তাদের ভূমিকাকে আরও পরিস্ফুট করে তুলতে। সুত্র: প্রবা