দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে বিভিন্ন যানবাহন চালক-মালিকদের মাঝে ভর করেছে ‘রিকুইজিশন আতঙ্ক’। কেউ কেউ গাড়ি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিলেও পেটের দায়ে রাস্তায় নামছেন অনেকে। অভিযোগ ওঠেছে, ‘জোর করেই’ গাড়ির কাগজপত্র নিয়ে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে বাধ্য করা হচ্ছে। আর যারা দায়িত্ব পালনে সায় দিচ্ছেন তারাও আছেন থাকা-খাওয়ার কষ্টে। পাচ্ছেন না সরকার নির্ধারিত খোরাকির টাকাসহ অন্য সুবিধা।
পরিবহন মালিক সংগঠনের অভিযোগ, প্রতিবার নির্বাচনী কাজে গাড়ি রিকুইজিশন করার সময় মালিক-শ্রমিক সংগঠনের সাথে বৈঠক করা হলেও এবার কোনো আলোচনা করা হয়নি। এমনকি রিকুইজিশন করা গাড়িগুলোর ড্রাইভার-স্টাফদের খোরাকি বাবদ টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও তারা তা পাচ্ছেন না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজে ব্যবহৃত এসব গাড়ির চালকের অনেকে নিজের টাকায় খাবার কিনে খাচ্ছেন। আর এমন বিশৃঙ্খলায় ‘আতঙ্কে’ আছেন অন্যরা। ফলে, রাস্তায় গাড়ি চালাতে অনেকে অপারগতা প্রকাশ করছেন।
তবে পুলিশ বলছে, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী নির্বাচনী কাজে ব্যবহারের জন্য গাড়িগুলো রিকুইজিশন করা হচ্ছে। এসব গাড়ির ড্রাইভার-স্টাফকে সরকারি নিয়ম অনুযায়ী খোরাকির টাকা পরিশোধ করা হবে। তবে পরিবহন সংগঠনের পক্ষে অনেক নেতা পুলিশের কাছে নির্দিষ্ট সংখ্যক রিকুইজিশন ফর্ম দাবি করে ‘বাণিজ্য’ করার পাঁয়তারা করছেন। আর ফর্ম না দিলে গাড়ি বন্ধ রাখার হুমকিও দিচ্ছেন।
নির্বাচনে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ সরঞ্জাম বহনে প্রয়োজন পড়ে অতিরিক্ত যানবাহনের। আর জনস্বার্থে সেসব সংস্থার চাহিদাপত্র অনুযায়ী রাস্তায় চলাচলরত মাইক্রোবাস, বাস, ট্রাক, পিক-আপ, অটোরিকশা ও হিউম্যান হলার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়ি রিকুইজিশন করে থাকে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ। আর রিকুইজিশনে থাকার সময় গাড়ির তেল ও আনুষঙ্গিক খরচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বহন করবে। এমনকি গাড়ির কোনো ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণও দিতে হয় ১৫ দিনের মধ্যে।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি) ও জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ১৭শর অধিক গাড়ি রিকুইজিশন করা হয়েছে। আর এই রিকুইজিশন প্রক্রিয়া চলবে আগামী ৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। ধারণা করা হচ্ছে, রিকুইজিশন করা মোট গাড়ির সংখ্যা ২৫শ ছাড়াবে। যার মধ্যে ১ হাজার গাড়ি সিএমপির ব্যবহারের জন্য এবং বাকিগুলো অন্যান্য সংস্থার জন্য।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অধীনে রয়েছে ১৭টি থানা। এসব থানার জন্য এখন পর্যন্ত রিকুইজিশন করা হয়েছে ২৫০টি মাইক্রোবাস, ৪০টি পিকআপ এবং ৫০টি বাস। এছাড়া জেলায় আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে এবং নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করা অন্যান্য সংস্থা ও ইউএনওদের চাহিদা অনুসারেও রিকুইজিশন করা হয়েছে।
রিকুইজিশন ‘আতঙ্ক’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৭ জানুয়ারি। এর প্রায় ১৫ দিন আগ থেকে নির্বাচনী কাজে ব্যবহারের জন্য গাড়ি রিকুইশনের চাহিদাপত্র ট্রাফিক বিভাগে পাঠাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাগুলো। যার মধ্যে রয়েছে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি), আর্মড পুলিশ ব্যাটেলিয়ন (এপিবিএন), আনসার ও নির্বাচন কমিশনের পর্যবেক্ষক।
গাড়ি রিকুইজিশনের পর চালকদের নিয়মিত খোরাকি দেওয়ার কথা থাকলেও তাদের অভিযোগ—সেই টাকা পান না তারা। এমনকি যেসব এলাকায় দায়িত্ব দেওয়া হয় সেখানে থাকা-খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা নেই। তাই রিকুইজিশনকে ‘শাস্তি’ হিসেবেই দেখছেন গণপরিবহন চালকরা। পরিবহন মালিক সংগঠনগুলো পুলিশের সাথে প্রতিবার নির্বাচনে বৈঠক করে খোরাকির টাকার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও এবার কোনো বৈঠক হয়নি। তাই খোরাকির টাকা পাওয়া নিয়েও সন্দেহ তৈরি হয়েছে চালকদের মনে।
নগরের জিইসি মোড়ে কথা হয় হিউম্যান হলার চালক হানিফের সাথে। তার গাড়িটিও রিকুইজিশনের আওতায় রেখেছে পুলিশ। তিনি বলেন, ‘আমার গাড়িটি জানুয়ারির ৩ তারিখের জন্য রিকুইজিশন করা হয়েছে। সেদিন দামপাড়া পুলিশ লাইনে গাড়িসহ উপস্থিত থাকার কথা বলা হয়েছে আমাকে। আর ছেড়ে দিবে ৮ তারিখে। আমাকে এবার টাকা-পয়সা কত কি দিবে তা বলেনি। দেওয়ার কথা বলেছে। তবে সর্বশেষ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন শেষে টাকা দিয়েছিলো আমাকে। তবে তখনও অনেক ড্রাইভার টাকা পায়নি। গতবার আমি ২২০০ টাকা পেয়েছিলাম। এবার পাবো কিনা চিন্তায় আছি।’
একইস্থানে দাঁড়িয়ে থাকা ১০ নম্বর রুটের বাসচালক হুমায়ুন বলেন, ‘আমার গাড়ি এখনো আটকায়নি। তবে আতঙ্কে আছি ভাই, কখন সার্জেন্ট সিগন্যাল দেয় আর রিকুইজিশন করে দেয়।’
সরকারি কাজে আতঙ্ক কেন?—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শুনেছি টাকা-পয়সা ঠিকমতো দেয় না। আর থাকাও অনেক কষ্ট। বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে পাঠায়। এজন্য ভয় লাগে। এর চেয়ে বাস চালানো বন্ধ রেখে ঘরে নির্বাচন শেষ হওয়া পর্যন্ত ঘুমাব।’
‘৯৯৯-এ কল দেওয়ার পর খাবার দিয়েছে’
চট্টগ্রাম-ফটিকছড়ি রুটের বাসচালক মো. হানিফ। গত ২৫ ডিসেম্বর হাটহাজারী উপজেলার বড়দিঘীর পাড় এলাকা থেকে তার বাসটি আটক করা হয় রিকুইজিশনের জন্য। এরপর তাকে পাঠানো হয় কাপ্তাই বিজিবি ক্যাম্পে। সেখানে যাওয়ার পর তিনি পড়েন নানা বিড়ম্বনায়। শুধু তাই নয়, ৯৯৯-এ ফোন করে অভি্যোগ দিয়ে খাবারের সমস্যা সমাধান করতে হয় তার।
মুঠোফোনে হানিফ সিভয়েসকে বলেন, ‘গত ২৫ ডিসেম্বর রিকুইজিশন করে পুলিশ লাইন হয়ে কাপ্তাই বিজিবি ক্যাম্পে আনা হয় আমার গাড়ি। প্রথমদিন খাবার-দাবার ঠিকভাবেই দিয়েছিল। সকাল হতেই আমাদেরকে বলা হয়,‘আপনারা এখানে থাকতে পারবেন না সিও স্যারের অর্ডার।’ আমাদের তো যাওয়ার জায়গা নেই। কোথায় যাব? এরপর ৯৯৯-এ ফোন করলে দুপুরে আমাদের ডিম দিয়ে ভাত দেওয়া হয়। এখন আমরা বিজিবি ক্যাম্প ছেড়ে রাঙ্গুনিয়া সরকারি কলেজে থাকছি।’
হানিফ বলেন, ‘রিকুইজিশনের সময়ে আমাদের খোড়াকি এবং তেলের খরচ দেওয়া হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। কিন্তু পুলিশ লাইনে থাকা অবস্থায় তারা বলেছে, আপনাদের তেল খরচ বিজিবি দিবে। আমাদের মোট ১৫ লিটার তেল দিয়েছে। বিজিবি বলছে, আপনাদের আসার তেল খরচ যারা গাড়ি রিকুইজিশন করছে তারা দেবেন। আর আমরা যদি নির্বাচনী ডিউটিতে পাঠাই সেই তেল খরচ দেব। এখন আমাদের প্রশ্ন আমাদের আসার খরচ কে দিবে? পাবো কিনা তা নিয়েও সন্দেহে রয়েছি। এদিকে কাপ্তাই থেকে রাঙ্গুনিয়া আসা যাওয়ার যে ৪৪ লিটার তেলের টাকাও নাকি দিবে না। এর আগেও আমি নির্বাচনী কাজে গাড়িসহ এসেছি। কিন্তু এরকম বিশৃঙ্খলা হয়নি। অনেকের পকেটে টাকাও নেই। অনেকজন কান্নাও করতেছে।’
চট্টগ্রাম থেকে পাঠানো হয়েছে ফরিদপুরে
মো. হারুন। গত ২৮ ডিসেম্বর নির্বাচনী কাজে রিকুইজিশনের জন্য আমার গাড়িটি অক্সিজেন এলাকার তারা গেট থেকে আটক করে পুলিশ। পরে আমাকে দামপাড়া পুলিশ লাইনে যেতে বললে সেখান থেকে আমাকে ফরিদপুর নিয়ে আসা হয়। কিন্তু রিকুইজিশনের সময় আমাকে জেলার বাইরে ডিউটির কথা বলা হয়নি। এখন আমি ফরিদপুর পুলিশ লাইনে আছি। এখানে আমরা রাতে আসার পর সকালে ঘুম থেকে উঠে পুলিশ লাইনের ক্যান্টিনে যাই। সেখানে আমাদের কাছে প্রতিবেলা খাবারের জন্য ১২৫ টাকা করে চাওয়া হচ্ছে।’
খোরাকির টাকা দেওয়া হচ্ছে না—এমন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘পুলিশের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়নি। তখন দায়িত্বরত পুলিশকে বলি, আমাদেরকে তো আপনারাই এনেছেন। আনতেই তেল খরচ হলো ১১৫ লিটার। দেওয়া হলো মাত্র ১০৫ লিটারের টাকা। এদিকে খাবারও যদি আমাদের কিনে খেতে হয় তাহলে কিভাবে চলবো আমরা? আমাদেরও তো পরিবার আছে, বউ-বাচ্চা আছে। আমাদের কাছে তো টাকা-পয়সা নাই। এতদিন কিভাবে চলবো? শেষমেষ আমাদের বলা হচ্ছে আমরা যেন নিজের পকেট থেকে খরচ করে খাই। যাওয়ার সময় তারা দিয়ে দিবে। এখন আমরা যারা টাকা আনিনি তারা কি করবো? চট্টগ্রাম থেকে এখানে আসা মোট ৩টি গাড়ি আছে। আমরা সবাই খুব কষ্টে আছি। এখানে না কিছু চিনি না জানি।’
পরিবহন মালিক নেতারা ক্ষুব্ধ
এবারের নির্বাচনে গাড়ি রিকুইজিশন প্রক্রিয়ার ব্যাপারে অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন পরিবহন মালিক সমিতির নেতারাও। তাদের দাবি, আলোচনা-বৈঠক ছাড়াই যত্রতত্রভাবে গাড়ি আটকের ফলে ‘আতঙ্কে’ আছেন চালকরা। শুধু তাই নয়, ট্রাফিক সার্জেন্টদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ—রিকুইজিশনের সময় গাড়ি চালকদের সাথে দুর্ব্যবহারও করা হয়।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল সিভয়েসকে বলেন, ‘প্রতিবছর নির্বাচনের সময়ে গাড়ি রিকুইজিশন হলে ট্রাফিক বিভাগ আমাদের মালিক-শ্রমিক সংগঠনের সাথে বৈঠক করে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কোন রুট থেকে কয়টি গাড়ি দেওয়া হবে, ড্রাইভার-স্টাফদের খোড়াকি কত টাকা দেবে বা মালিকদেরকে কত টাকা দিবে। কিন্তু এবার সার্জেন্টরা তাদের ইচ্ছেমাফিক গাড়ি আটক করে রিকুইজিশনের জন্য নিয়ে যাচ্ছে। ড্রাইভারদের সাথে কোনো কথা বলতে দেয় না তারা। ড্রাইভারদের মোবাইল নিয়ে ফেলা হচ্ছে এবং তাদের গালিগালাজ করা হচ্ছে।’
ভাতার টাকার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ড্রাইভার-স্টাফদের ভাতা দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের বরাদ্দ আছে। কিন্তু এসব বিষয়ে আমাদের সাথে কোনো কথা হয়নি। এখন ভাতা পাবে কিনা সেটা নিয়েও সংশয় রয়েছে।’
ভাতার টাকা মালিক-শ্রমিকদের বুঝিয়ে দেওয়া না হলে আন্দোলনের হুমকি দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতেছি এখনো। নির্বাচনের পর যদি গাড়ির মালিক-শ্রমিকদের টাকা দেওয়া না হয় তাহলে আমরা নির্বাচন কমিশনে দরখাস্ত করবো। শুধু তাই নয়, আমরা আন্দোলন সংগ্রাম এবং গাড়ি বন্ধ রাখার মতো কর্মসূচিরও সিদ্ধান্ত নিতে পারি।’
গাড়িচালকরা আতঙ্কে আছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক ড্রাইভার এখন গাড়ি চালাতে চাচ্ছে না। অনেকে আমাদেরকে চাবি বুঝিয়ে দিয়ে চলে গেছেন গাড়ি চালাবে না বলে। রিকুইজিশনের অধীনের এসব গাড়ি এখন কাদেরকে দিয়ে পাঠাবো বা কে চালাবে তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে গিয়েছি। আর অন্যান্য গাড়ি যেগুলো আছে সেগুলোও চালকরা ভয়ে ভয়ে চালাচ্ছেন। অনেক গাড়ি বন্ধ আছে। আর ৮০ শতাংশ গাড়ি রিকুইজিশনে পড়েছে।’
চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শাহজাহান সিভয়েসকে বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের গাড়ি রিকুইজেশন করা হয়েছে। গাড়িগুলো রাস্তায় চলন্ত অবস্থায় থামিয়ে পুলিশ ধরে রিকুইজিশন করছে। আসলে দুঃখের বিষয় কিছু বলতেও পারছি না আমরা। এটা আমাদের ওপর মরার ওপর খাড়ার ঘা। আমাদের একটা দাবি ছিল যদি জেলার মধ্যের গাড়ি রিকুইজিশন করে তাহলে সেগুলো যেন জেলার মধ্যেই নির্বাচনী কাজে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেগুলো ঢাকার আশেপাশের জেলায়ও পাঠানো হচ্ছে। সেক্ষেত্রে যেতে আসতে অন্তত দুদিন সময় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরাও নিরুপায়। এখন জাতীয় স্বার্থে আমাদেরও গাড়িগুলো দিয়ে দিতে হয়।’
চালক-সাহায্যকারীরা ভাতা পাচ্ছেন না অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘অন্যান্য নির্বাচনে গাড়ির মালিক এবং চালকদের খোড়াকি কর্তৃপক্ষ বহন করেছে। কিন্তু এই নির্বাচনে তারা কোনো খরচ দিচ্ছে না। এই বিষয়ে আমাদের সাথে কোনো আলোচনা করেননি তারা। এমনকি ডিউটিতে যাওয়া চালকদেরও খবর নেন না তারা।’
নির্বাচন কমিশনের নির্বাচনী ব্যয়ের মধ্যেই খোড়াকি খরচগুলো উল্লেখ থাকলেও কর্তৃপক্ষের দিতে গড়িমসি কেন—প্রশ্ন রাখেন তিনি।
গাড়িচালকরা রিকুইজিশন আতঙ্কে আছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘কেউ তো চায় না ফ্রি ডিউটি করতে। এর ওপর খাবারের ব্যবস্থা নেই আবার তেলের সমস্যাও আছে। এগুলো যথাযথভাবে দিলে তাহলে সমস্যা হতো না। অনেক গাড়ির মালিকরা নিজ দায়িত্বে বসিয়ে রেখেছে। এখন অল্প কিছু গাড়ি চলছে। তাদের মনেও আতঙ্ক আছে।’
পুলিশ যা বলছে
রিকুইশন প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) আবদুল মান্নান মিয়া সিভয়েসকে বলেন, ‘নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গাড়ি রিকুইজিশনের জন্য বিভিন্ন সংস্থা চাহিদাপত্র দিয়েছে। সেই অনুযায়ী রিকুইজিশন প্রক্রিয়া চলছে। গাড়িগুলোর মধ্যে রয়েছে মিনিবাস, মাইক্রোবাস, লেগুনা এবং পিকআপ। এখন পর্যন্ত ১৪শ এর অধিক গাড়ি রিকুইজিশন করা হয়েছে। তবে এই প্রক্রিয়া এখনো চলমান। আগামী ৩ অথবা ৪ জানুয়ারি এই প্রক্রিয়া শেষ হবে।’
পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সাংবিধানিক দায়িত্ব এবং নির্বাচন কমিশনের চাহিদা অনুযায়ী যাকে যতটুকু সাপোর্ট দেওয়া দরকার সেই সাপোর্ট আমরা দিচ্ছি। পাশাপাশি আমরা মানবিক বিষয়গুলোও দেখার চেষ্টা করছি। কেউ কেউ এতে ব্যক্তিগতভাবে সংক্ষুব্ধ হতে পারে। সেক্ষেত্রে আমার বা ডিসি সাহেবদের কাছে গিয়ে যদি বলা হয় তাহলে অবশ্যই বিবেচনা করা হবে। শুধু অভিযোগ করলেই হবে না।’
রিকুইজিশন করা গাড়ির চালক-হেলপারদের ভাতার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের পরিপত্র অনুসারে যে ভাতা পাওয়ার কথা সেটা তারা প্রতিদিনই পাবেন। সিএমপির অধীনে দায়িত্ব পালন করলে ভাতা আমরাই পরিশোধ করব। তবে, অন্যান্য সংস্থার অধীনে করলে সেটার জবাব আমি দিতে পারবো না। সেটা ওই সংস্থাই ভাল বলতে পারবে।’
একই প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) এ.এন.এম ওয়াসিম ফিরোজ সিভয়েসকে বলেন, ‘মালিক সমিতির অনেকে রিকুইজিশন ফর্ম চাচ্ছে। কিন্তু আইনের বাইরে গিয়ে তো কাজ করা সম্ভব না। গাড়িগুলো তো নির্বাচন অর্থাৎ জাতীয় স্বার্থে রিকুইজিশন করা হচ্ছে।’
ভাতা এবং খাবারের সমস্যার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি তাৎক্ষণিক খবর নিয়ে বলেন, ‘হ্যাঁ ফরিদপুরে ফোর্স নিয়ে গেছে একটি গাড়ি। চালক গন্তব্যের চেয়েও ১১০ কি.মি. দূরত্ব বেশি গিয়েছেন। সে হিসাবে তিনি ৩০ লিটার তেল দাবি করেছেন। তার সাথে কথা হয়েছে, তিনি দায়িত্ব পালন শেষে এসে সেই তেলের টাকা নেবেন বলে জানিয়েছেন। আর তাদের খাবারের জন্য টাকা দিয়ে দেওয়া হয় জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে।’
আবারও খোঁজ নিয়ে তিনি বলেন, ‘ওই ড্রাইভারের তিন দিনের ডিউটির জন্য ১ হাজার টাকা খাবারের টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আজকে (রবিবার) চলে আসার কথা ছিল। তবে আজকে না আসতে পারায় কাল হয়তো চলে আসবে। সেক্ষেত্রে বাড়তি একদিনের টাকাও সমন্বয় করে দিয়ে দেওয়া হবে। এখানে কোনো অবিচার নেই। তারা দিন এনে দিনে খায়। তাদের সাথে অবিচার করা হবে না। তবে, সরকার নির্ধারিত যে ভাতা এর বাইরে দেওয়ার সুযোগ নেই।’
রিকুইজিশন ফর্ম নিয়ে ‘বাণিজ্য’
মালিক-শ্রমিক সংগঠনের অভিযোগের বিষয়ে জানালে পুলিশ কর্মকর্তা এ.এন.এম ওয়াসিম ফিরোজ তাদের বিরুদ্ধেও ফর্ম ‘বাণিজ্য’চেষ্টার অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, ‘একতরফা অভিযোগ করলেই তো হবে না। সংগঠনের নেতাদের অনেকে রিকুইজিশন ফর্ম চাচ্ছে। আমাদের এসে বলছে, ১শ’ রিকুইজিশন ফর্ম দিতে হবে। ফর্মগুলো দিলে তারা হয়তো বিক্রি করবে। এটা তো আমি করতে পারি না। আবার একজন এসে বলছে, ৫০টি ফর্ম দিতে হবে নাহলে মানববন্ধন করবে। এখন তাহলে তো আমার কিছু করার নেই। সরকারি কাজে সহায়তা করতে হবে।’
উল্লেখ্য, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৭ জানুয়ারি। চট্টগ্রাম নগর ও আশপাশে ৬টি এবং জেলায় ১০টি সংসদীয় আসন রয়েছে। এবার জেলায় মোট ভোটার সংখ্যা ৬৩ লাখ ৯৬৪ জন। মোট ভোটারের মধ্যে পুরুষ ৩২ লাখ ৭৯ হাজার ৬২ জন এবং নারী ৩০ লাখ ২১ হাজার ৯০২ জন। নির্বাচন কমিশনের চূড়ান্ত তালিকায় ১৬ আসনে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ২০২২টি এবং বুথের সংখ্যা ১৩ হাজার ৭৪১টি। চট্টগ্রামে মোট আসন সংখ্যা ১৬টি। সুত্র : সিভয়েস