রাঙ্গুনিয়ার জেসমিন আকতারকে তার প্রেমিক এহসানুল নেওয়াজ রাহাত অপহরণ করে রাঙামাটিতে নিয়ে ধর্ষণের পর হত্যা করেছে- এতদিন ধরে এমনই জেনে এসেছে এলাকার মানুষ। জেসমিন উপজেলার হোছনাবাদ ইউনিয়নের খীলমোগল এলাকার নুর মোহাম্মদের মেয়ে। আর রাহাত একই এলাকার সোলতান আহমদ মাস্টারের পুত্র। গত ২১ সেপ্টেম্বর রাঙামাটিতে অজ্ঞাতনামা এক যুবতীর লাশ উদ্ধার হলে জেসমিনের বাবা গিয়ে সেটা তার মেয়ের বলে সনাক্ত করে। এরপর গত ১০ অক্টোবর রাহাত, তার পিতা সোলতান আহমদ মাস্টার, তার সহযোগী আবদুল মান্নান, আজিজ, মো. আলম, মো. তৈয়ব, মো. সাইফুদ্দিন ও মো. শহিদকে আসামী করে রাঙ্গুনিয়া থানায় একটি হত্যা মামলাও রুজু করেন জেসমিনের বাবা। এদিকে গত ২৩ অক্টোবর রোববার দিবাগত রাতে আসামীরা জেসমিনের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে আত্মগোপনে থাকা জেসমিনকে উদ্ধার করে পুলিশে সোপর্দ করলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
জেসমিনের পরিবারের অভিযোগে জানা যায়, পাশাপাশি গ্রামের জেসমিন আকতার ও এহসানুল নেওয়াজ রাহাতের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। গত ৭ জুলাই জেসমিনকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে রাঙামাটি নিয়ে যায় রাহাত। সেখানে তারা একটি আবাসিক হোটেলে রাত্রি যাপনকালে রাঙামাটির কোতোয়ালি থানা পুলিশের হাতে আটক হয়। পুলিশ দু’জনকেই জেলে পাঠায়। এরপর দু’জনে বিয়ে করার অঙ্গীকার দিয়ে ১৪ দিন পর আদালত থেকে ছাড়া পায়। জেল থেকে আসার পর বিয়ে করতে গড়িমসি শুরু করে প্রেমিক রাহাত। এরপর গত ১৬ আগস্ট জেসমিন খালার বাড়ি থেকে ফেরার পথে রাহাত বন্ধুদের নিয়ে তাকে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যায়। এরপর জেসমিনের আর কোন সন্ধান পাওয়া যায় নি।
জেসমিনের পিতা নুর মোহাম্মদ জানান, ‘দীর্ঘদিন ধরে মেয়ের কোন সন্ধান না পেয়ে গত ২১ সেপ্টেম্বর রাঙামাটিতে অজ্ঞাত তরুণীর গলিত লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে সেখানে যাই। লাশের পড়নের জামা ও বিভিন্ন আলামত দেখে লাশটি আমার মেয়ে জেসমিনের বলে সন্দেহ হয়। সে সময় পুলিশ আমার ও স্ত্রী’র ডিএনএ টেস্টের জন্য নমুনা সংগ্রহ করেন। এ ঘটনায় গত ১০ অক্টোবর এহসানুল নেওয়াজ রাহাত, তার পিতা সোলতান আহমদ মাস্টার, তার সহযোগী আবদুল মান্নান, আজিজ, মো. আলম, মো. তৈয়ব, মো. সাইফুদ্দিন ও মো. শহিদকে আসামী করে রাঙ্গুনিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করি। অথচ আজ (সোমবার) জানতে পারি আমার মেয়েকে উদ্ধার করেছেন তারাই। এতদিন মেয়ে কোথায় ছিল তা আমি জানি না।’
গতকাল সোমবার রাতে থানায় জেসমিন আকতার জানান, ‘১৬ আগস্ট আমাকে নিয়ে যাবার পর প্রথমে উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নের এক আত্মীয়ের বাড়িতে ও পরে চন্দ্রঘোনা বনগ্রাম এলাকার এক ভাড়াবাসায় রেখেছে রাহাত। সে আমাকে বিয়ে করার কথা বলে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একসাথে বসবাস করে আসছে। আমাকে ঘরের বাইরে কারো সাথে কথা বলতে ও যোগাযোগ করতে দিতো না। যার কারণে আমি মা-বাবার সাথে কোন যোগাযোগ করতে পারিনি। তাই তারাও মনে করেছিল রাঙামাটিতে উদ্ধার হওয়া লাশটি আমার ছিল।’ ভাড়াবাসায় তাকে প্রায় মারধর করা হতো দাবি করে জেসমিন আরও জানায়, ‘৮-১০ দিন আগেও রাহাত আমার কাছে ছিল। এরপর থেকে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। শুনেছি সে আমার সাথে প্রতারণা করে অন্যত্র বিয়ে করেছে। গত রোববার রাতে হোছনাবাদ ইউনিয়নের এক আত্মীয়ের বাড়িতে গেলে কয়েকজন যুবক তাকে উদ্ধার করে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে যায়। এরপর থানায় আনে।’ গতকাল সোমবার থানার ওসি মো. হুমায়ুন কবিরের কাছে সে বলে, ‘আমি রাহাতকেই স্বামী হিসেবে চাই।’
গতরাতে ওসি মো. হুমায়ুন কবির জানান, ‘জেসমিন এখন পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। মঙ্গলবার সকালে তার মেডিক্যাল টেস্ট করা হবে। এরপর তাকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হবে।’
হোছনাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান মির্জা সেকান্দর হোসেন জানান, ‘জেসমিনকে হত্যা করা হয়েছে বলে এলাকায় ধুম্রজাল সৃষ্টি করেছিল তার পিতা। প্রকৃত পক্ষে সে নিহত নয়, জীবিত। তার বাবার দায়ের করা মামলার কয়েকজন আসামী গত রোববার রাতে আত্মগোপনে থাকাবস্থা থেকে তাকে উদ্ধার করে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসলে আমি থানায় পাঠাই।’
উল্লেখ্য, গত ২১ সেপ্টেম্বর বুধবার বিকেল সাড়ে ৫টায় রাঙামাটির ঝগড়াবিল মৌজার ডিয়ার পার্ক এলাকায় এক অজ্ঞাত তরুণীর লাশ উদ্ধার করে রাঙামাটির কোতোয়ালি থানা পুলিশ। পরে খবর পেয়ে রাঙ্গুনিয়া থেকে নিখোঁজ জেসমিনের পিতা নুর মোহাম্মদ লাশটি তার মেয়ের বলে সনাক্ত করেন। এদিকে জেসমিন জীবিত উদ্ধার হওয়ায় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে রাঙামাটিতে উদ্ধার হওয়া লাশটি তাহলে কার?