বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের অনেকেই তাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরতে চায়, কিন্তু এই ফেরা নির্ভর করছে তাদের ওপর সংঘটিত নৃশংসতার জবাবদিহির ওপর। সেই জবাবদিহি ও ন্যায়বিচারের সুযোগ এখনো সীমিত।
জাতিসংঘ গঠিত দি ইনডিপেনডেন্ট ইনভেস্টিগেটিভ মেকানিজম ফর মিয়ানমারের (আইআইএমএম) বার্ষিক প্রতিবেদনে এমন পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে। আগামী মাসে জাতিসংঘ মানবাধিকার পরিষদের অধিবেশনে এই প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা হবে। আইআইএমএম এমন একসময় জাতিসংঘে ওই প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে যাচ্ছে, যখন বাংলাদেশ সীমিত পরিসরে হলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করার চেষ্টা চালাচ্ছে।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত অপরাধের জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ২০১৮ সালে জাতিসংঘ আইআইএমএম গঠন করেছে। ওই কাঠামো রোহিঙ্গাসহ মিয়ানমারের জনগণের ওপর সংঘটিত গুরুতর অপরাধগুলোর তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ করছে।
আইআইএমএমের এবারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ২০০টিরও বেশি উৎস থেকে তারা ৩০ লাখের বেশি তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে। এগুলোর মধ্যে সাক্ষাৎকারমূলক জবানবন্দি, ভিডিও, আলোকচিত্র, ভূস্থানিক ছবি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তথ্য-উপাত্ত রয়েছে। আইআইএমএম এরই মধ্যে এসব তথ্য আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালত (আইসিজে), আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) কৌঁসুলির দপ্তর, আর্জেন্টিনার আদালতকে সরবরাহ করা শুরু করেছে। সংগৃহীত তথ্য-প্রমাণ থেকে ইঙ্গিত মিলছে, মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনী ও সশস্ত্রগোষ্ঠী শিশুদের ধর্ষণ, যৌন সহিংসতাসহ অন্যান্য অপরাধ করেছে। মা-বাবাকে না পেয়ে শিশুদের নির্যাতন ও আটক করা হয়েছে; এমনকি শিশুদের জোর করে সশস্ত্রগোষ্ঠীতে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়েছে। আইআইএমএমের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, এ বছর আগস্টে আইআইএমএম তার কার্যক্রমের তিন বছর পূর্ণ করছে। অন্যদিকে এই আগস্টেই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সামরিক বাহিনীর নির্মূল অভিযানের পাঁচ বছর পূর্ণ হচ্ছে। ২০১৭ সালের ওই অভিযানে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
আইআইএমএম তার প্রতিবেদনে জানায়, ‘দুঃখজনকভাবে রোহিঙ্গা ও মিয়ানমারের জনগণের জন্য দায়মুক্তির অবসান এবং সংঘটিত অপরাধের জবাবদিহি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে অগ্রগতি সীমিতই রয়ে গেছে।’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মিয়ানমারে মানবতাবিরোধী অপরাধ ধারাবাহিকভাবেই সংঘটিত হচ্ছে। চলমান সংঘাতের বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে নারী ও শিশুদের ওপর। মিয়ানমারে মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রমাণ জোরালো হচ্ছে।
আইআইএমএমের প্রধান নিকোলাস কৌমজিয়ান বলেছেন, ‘নারী ও শিশুদের সঙ্গে অপরাধ সবচেয়ে গুরুতর আন্তর্জাতিক অপরাধগুলোর অন্যতম। তবে ঐতিহাসিকভাবে এসব অপরাধের তথ্য জানাজানি কম হয়। তদন্তও কম হয়।’ তিনি বলেন, ‘এসব অপরাধের বিচার নিশ্চিত করতে আইআইএমএমের সদস্যরা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও তদন্ত করছে। অপরাধীদের জানা উচিত, তারা পার পাবে না। আমরা তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করছি। একদিন তাদের বিচার হবেই।’
আইআইএমএমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখলের পর বেসামরিক জনগণের ওপর ব্যাপক ও ধারাবাহিকভাবে হামলার অসংখ্য ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। সম্ভাব্য অপরাধের ধরনও বিস্তৃত হচ্ছে। আইআইএমএম-প্রধান কৌমজিয়ান বলেন, ‘রোহিঙ্গারা নিরাপদে ও সম্মানজনকভাবে ফিরে যাওয়ার আগ্রহ জানাচ্ছে, কিন্তু তাদের সঙ্গে সবচেয়ে গুরুতর অপরাধ করা ব্যক্তিদের এবং তাদের ওপর নৃশংসতার বিচার না হলে ওই লক্ষ্য পূরণ (মিয়ানমারে ফেরা) খুব কঠিন হবে। সুত্র: কালেরকন্ঠ
পাঠকের মতামত