জামালপুরের মেয়ে জারিন তাসনিম দিয়া। হাতে পবিত্র কোরআন লেখার মতো কঠিন কাজ করে প্রশংসায় ভাসছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী। তিনি ঢাবির ফলিত গণিত বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। লকডাউনের সময় দীর্ঘ দেড় বছরের পরিশ্রম আর চেষ্টায় তিনি ৩০ পারা কোরআন লিখেছেন নিজের হাতে।
দেশের ৫০০ মসজিদ-মাদরাসায় এই কোরআন সরবরাহ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তিনি। জারিন তাসনিম দিয়া বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২০২০ সালের করোনাকালে আমরা যখন সবাই ঘরবন্দি তখন থেকেই আমার এই উদ্যোগ শুরু হয়। তখন হাতে আমাদের কোনো কাজ ছিল না। চারদিকে শুধু মৃত্যুর এত মিছিল, ঘর থেকে বের হতে পারছি না, কাজকর্ম থেমে গেছে, সবকিছু মিলিয়ে একটু মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি।
তখন ভাবলাম এমন কিছু করি যেটা আমাকে মনে না রাখলেও আমার কাজকে মানুষ আজীবন মনে রাখে এবং যেটা ইহকাল পরকাল দুই কালের জন্যই পাথেয় হয়ে থাকবে। দিয়া জানান, ‘বাবা-মার অনুপ্রেরণায় কাজটা শুরু করা। লেখা শেখাটা তখনই। আর আমি কোনো মাদরাসার শিক্ষার্থীও ছিলাম না।
এক্ষেত্রে বাবা-মার ভূমিকাই অনেক বেশি। বাবা-মাসহ সবাই তখন ঘরবন্দি ছিলাম। বাবাই আমাকে প্রথমে অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন। যখন আমার সিদ্ধান্তের কথা জানালাম তারা প্রথমে বিশ্বাস করতে পারছিল না। বাবা বলেছিলেন ‘তুমি শুরু করো।
শেষ যে করতেই হবে এমন কথা নেই। আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু করো। ’
তিনি আরও বলেন, আসলে আমার পরিবারের কেউ কখনো হাফেজ ছিলেন না। আর আমি যখন লেখা শুরু করি কোনো হাফেজের পরামর্শেও শুরু করিনি। আসলে আমি তো জানতামই না যে এটা শেষ করতে পারব। এত প্ল্যান করে শুরু করা হয়নি। কিন্তু শেষ হওয়ার পর যখন হাফেজ মাওলানাদের জানালাম তারা প্রথমে বিশ্বাস করতে পারেননি। তাদের একটিই কথা ছিল যে, আমরা যারা হাফেজ তারাই কোনো দিন সাহস করতে পারিনি এ উদ্যোগটা নেওয়ার। আপনি মাদরাসায় না পড়েও যেটা করলেন সত্যিই অবিশ্বাসযোগ্য।
তিনি বলেন, আসলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যখন কিছু ভাইরাল হয় সেটি ভালো হোক কিংবা মন্দ- কিছু মানুষের মতপ্রকাশ থাকবেই। প্রথমত আমি ভাইরাল হওয়ার জন্য কিছু করিনি। এটা সম্ভবও নয়। তাহলে সবাই করতে পারত। অনেকে বলে- তুমি রাজনীতি করেছ, এখন রাজনীতি বাদ দিয়ে পর্দার আওতায় আসো। বা শুনেছি যে এসব করেছ আল্লাহর জন্য, তো প্রকাশ কেন করছ। আবার বেশির ভাগ শুনতে হয়েছে পর্দা নিয়ে।
প্রথম কথা, পর্দা করা অবশ্যই ফরজ। কিন্তু আমি আগেই বলেছি আমি কোনো ইসলামিক পরিবেশে বড় হয়ে উঠিনি। আর যখন কোরআন লিখলাম তখন অর্থগুলো আমার পড়া হলো। তখন থেকে আমি হিজাব পরা শুরু করি। আসলে পর্দা একবারে হয় না। ধীরে ধীরে একটু সময় নিয়ে নিজেকে গোছাতে হয় প্রতিটি কাজে। হুট করে পরিবর্তন হলে হুট করেই আবার ছেড়ে দেওয়া হয়। তাই আমি ধীরে ধীরে চেষ্টা করছি যতটুকু করা সম্ভব আমার পক্ষে। আমার পর্দা বা শালীনতা বজায় রেখে যতটুকু সম্ভব আমি কাজ করে যাচ্ছি।