মহেশখালীর পান বিক্রেতা বাদশাহ মিয়া। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর অত্যাচারে ভিটেবাড়ি হারিয়ে সপরিবারে আশ্রয় নিয়েছিলেন শ্বশুরবাড়ি। স্বপ্ন ছিল, বড় ছেলে তানভীরকে লেখাপড়া করিয়ে চাকরি করাবেন। এতে ঘুচবে সংসারের কষ্ট। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে বাড়িতে ফেরে তানভীরের মরদেহ।
তানভীরের বাবার বাড়ি কক্সবাজার শহর থেকে সড়কপথে ৯০ কিলোমিটার দূরে মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া ইউনিয়নের মোহাম্মদ শাহ ঘোনায়। সরেজমিন দেখা যায়, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বাদশাহ মিয়ার পৈতৃক বাড়ি ভেঙেচুরে পড়ে আছে। কেউই নেই সেখানে। পরে বাদশাহর শ্বশুরবাড়ি পাশের নয়াপাড়া গেলে দেখা হয় তানভীরের মা ছানুয়ারা বেগমের সঙ্গে।
তিনি জানান, তাঁর তিন সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে তানভীর চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ আশেকানে আউলিয়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। দ্বিতীয় ছেলে তাওসিফ নবম শ্রেণিতে, ছোট ছেলে সবে স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে। পাঁচটি পরীক্ষা দেওয়ার পর কোটাবিরোধী আন্দোলনের কারণে তানভীরের পরীক্ষা আর দেওয়া হয়নি। এর মধ্যে তানভীর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হয়। গত ১৮ জুলাই চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের হামলায় গুলিতে প্রাণ হারায় তানভীর।
কথোপকথনের এক পর্যায়ে তানভীরের বাবা বাদশাহ বাড়িতে আসেন। তিনি জানান, তাঁর স্বল্প আয়ে সংসারে ‘নুন আনতে পান্তা ফুরায়’। তার পরও সন্তানের পড়াশোনার ব্যাপারে খুবই সিরিয়াস ছিলেন। স্বপ্ন ছিল, তানভীর পড়াশোনা শেষ করে ভালো চাকরি পাবে। সংসারে সুদিন ফিরে আসবে। তবে নির্মম বুলেট তাঁর পরিবারের স্বপ্ন কেড়ে নিয়েছে।
এক পর্যায়ে কাঁদতে কাঁদতে বাদশা জানান, ছেলে তাঁর এই বয়সেই বৈষম্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। ১৮ জুলাই তাঁকে কল করে আন্দোলনে যাওয়ার কথা জানালে তিনি নিষেধ করেন। তবে জাতিকে অভিশাপমুক্ত করার প্রত্যয়তাড়িত ছেলে ঠিকই আন্দোলনে অংশ নেয়।
স্থানীয়রা জানান, ২০১২ সালে জমি দখলের জন্য মোহাম্মদ শাহ ঘোনা এলাকায় অন্তত ৫০টি বসতবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছিল স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। ওই সময় বাদশাহ মিয়াসহ অন্যরা বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হন। সমকাল
পাঠকের মতামত