ইমাম খাইর::
স্থানীয় পরিবেশ সংরক্ষণ ও রোহিঙ্গাদের শরণার্থী অধিকার পূরণ সাপেক্ষে স্থানান্তরের দাবি জানিয়েছে কক্সবাজার সিএসও-এনজিও ফোরাম। বৃহস্পতিবার (১৯ শে অক্টোবর) সকাল ১০ টায় কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবী জানানো হয়। এতে ‘রোহিঙ্গা রিলিফ কার্যক্রমের স্থানীয়করণ ও জবাবদিহিতা চাই’ শিরোনামে লিখিত বিবরণ উপস্থাপন করা হয়।
স্থানীয় জনগণের জীবনযাপনের হুমকি ও প্রকৃতি-পরিবেশ অর্থনীতির পুনরুদ্ধারের বিষয়ে বক্তব্য রাখেন ফোরামের কো-চেয়ারম্যান ইপসার নির্বাহী পরিচালক মো: আরিফুর রহমান।
তিনি বলেন, সরকারের এমন একটি সেল গঠন করতে হবে যারা দ্রুত গবেষণা সম্পন্ন করে কক্সবাজারের প্রাকৃতিক সম্পদ, অর্থনীতি, স্বাস্থ্য ও পর্যটনক্ষেত্রে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে কি কি ক্ষতি হয়েছে এবং হতে পারে তা নির্ণয় করবেন। তিনি বলেন, তার ভিত্তিতে দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা ঘোষণা করতে হবে,আগামী অর্থ বছরের বাজট ঘোষণার পূর্বেই যাতে কক্সবাজারের জনগণ তা জেনে আশ্বস্ত হয়।
তিনি কিছু ইউএন এজন্সি ও এনজিও রোহিঙ্গাদের মধ্যে রিলিপের কাজ করতে গিয়ে প্রচুর পরিমাণ প্রদর্শন প্রতিযোগিতা করছেন বলে সমালোচনা করেন। তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ ধরনের “প্রদর্শন প্রতিযোগিতা” বন্ধ করে আসল রিলিপ সহায়তার কাজে মনোযোগ দেবার জন্য অনুরোধ করবো।
সংবাদ সম্মেলনের মডারেটর ও ফোরামে কো-চেয়ারম্যান রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, জাতিসংঘের মাধ্যমে World Humanitarian Summit-এ উন্নয়ন ও মানবাধিকার কর্মকান্ডের ঘোষণা হচ্ছে Localization and Accountability-কে গুরুত্ব দেয়া। ২০১৬ এর এই নীতিমালা বাস্তবায়ন আলোচনা চালু রয়েছে। সেখানে প্রায় সকল UN Agencies, International NGO, National NGO স্থানীয়করণ জবাবদিহিতার ও স্বচ্ছতায়The Great Bargain নামে একটি প্রক্রিয়ায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে। সে অনুযায়ী উক্ত সংস্থাসমূহের কাজের পরিবর্তন হওয়া উচিত। যাতে স্থানীয় পর্যায়ে স্থানীয় নাগরিক সমাজ তথা এনজিওদের সার্বভৌম, জবাবদিহিতাপূর্ণ ও স্থায়িত্বশীল বিকাশ যাতে নিশ্চিত হয়।
রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, জেলা প্রসাশক ও সেনাবাহিনীর শুরুর দিকে ভয়াবহ শরণার্থী স্রোতও বিশৃংখল পরিস্থিতিকে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে নিয়ন্ত্রণ করেছেন, শরণার্থীদের সারাদেশে ছড়িয়ে পড়া থেকে পুরো জাতিকে রক্ষা করছেন। সেনাবাহিনী তৃর্ণমূলে অত্যন্ত দক্ষতা ও শৃংখলার সাথে সমন্বয় সাধন করেছেন। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের জেলার অন্যান্য সাধারণ কাজকর্ম রয়েছে। সুতরাং শরণার্থী সমস্যা ব্যবস্থাপনা পূর্ণভাবে জেলা প্রশাসন থেকে পৃথক হওয়া উচিত। যেহেতু শরণার্থী কার্যক্রম একটা বৃহদাকার দায়িত্বে যাচ্ছে, সেক্ষেত্রে আমরা একজন সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তার নেতৃত্বে রিলিফ কমিশনার হিসেবে অফিস পূর্নগঠনের প্রস্তাব করছি। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে Information, Monitoring, Coordination এর জন্য যথেষ্ট জনবল দিতে হবে। তা দিতে দেরী হলে সেনাবাহিনী থেকে জনবল নিয়ে তা পূরণ করা যেতে পারে। মূলতঃ এইভাবে পুরো শরণার্থী ব্যবস্থাপায় কোন ধরণের পরনির্ভরতা ছাড়া সরকারের পূর্ণ কর্তৃত্ব স্থাপন করা উচিত।
ফোরামের কো-চেয়ারম্যান ও পাল্স কক্সবাজারের চেয়ারম্যান আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা শিশুদের যত্নে ও পুনর্বাসনে CRC (Convention on the Rights of the Child) অনুসরণ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে মা-বাবাহীন শিশুদেরকে তাদের নিকট আত্নীয় রোহিঙ্গা শরণার্থী পরিবারের সাথে রেখেই পরিযত্নের কথা ভাবতে হবে। আমরা এক্ষেত্রে সরকার এবং সংশ্লিষ্ঠ সকলকে CRC (Convention on the Rights of the Child) অনুসরণ করতে অনুরোধ করবো।
তিনি এই জেলার বিশেষ করে উখিয়া-টেকনাফে জনসংখ্যার ভারসাম্যের হুমকি সৃষ্টি বিষয়ে ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, ময়ানমারে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি না পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদেরকে এদেশে যে আশ্রয় দিয়েছে তাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তবেকক্সবাজার পর্যটন অঞ্চলের স্বার্থে শরণার্থীদেরকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ারদাবি জানান। তবে শরণার্থীদের অধিকার সমুন্নত রেখেই তা করতে হবে বলে তিনি জানান। সংবাদ সম্লেলনে আরো বক্তব্য রাখেন ইঞ্জিনীয়ার কানন পাল। সংবাদ সম্মেলনে স্বাগত বক্তৃতা করেন- সিএসও-এনজিও ফোরামের সদস্য সচিব ও কোস্ট ট্রাস্ট-এর সহকারী পরিচালক মকবুল আহমেদ।
কক্সবাজার জেলার প্রাকৃতিক-অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত বিষয়ে এবং রোহিঙ্গা আগমন পরিস্থিতি নিয়ে মতামত তুলে ধরার জন্য সম্প্রতি কক্সবাজার জেলার সিভিল সোসাইটির সদস্য ও এই জেলায় কর্মরত এনজিওদের সমন্বয়ে ‘কক্সবাজার সিএসও-এনজিও ফোরাম’ গঠিত হয়। ফোরামে রয়েছে- পাল্্স, হেল্প কক্সবাজার, একলাব, অগ্রযাত্রা, জালালাবাদ ফাউন্ডেশন, পপি, আনন্দ, বাস্তব, নোঙর, মুক্তি কক্সবাজার, ইপসা, এক্সাপাউরুল, আইএসডিই, আশা ও কোস্ট ট্রাস্ট।