উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
সু-উচ্চ পাহাড় আর সবুজের সমারোহ ‘গোয়ালিয়া ঢালা’। পাহাড় ছেদ করে বয়ে যাওয়া আঁকাবাঁকা গোয়ালিয়া সড়কের নৈসর্গিক দৃশ্য যে কারও চোখ জুড়িয়ে যায়। পাহাড় আর সড়কের মিতালী যেন এক রোমাঞ্চকর ভ্রমনের মেলবন্ধন তৈরী হয়েছে পর্যটকদের কাছে। একারণে দিন দিন পর্যটকদের আগমন বাড়ছে ‘গোয়ালিয়া ঢালা’য়। সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে এই নৈসর্গিক ‘গোয়ালিয়া ঢালা’ হয়ে উঠতে পারে আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট।
কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দক্ষিনে ‘গোয়ালিয়া ঢালা’। কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ হয়ে রেজুখাল ব্রীজ পর্যন্ত গেলেই চোখে পড়বে গোয়ালিয়া সড়ক। মুলত: রেজুখাল ব্রীজ থেকেই পায়ে হেটে যাওয়া যায় এই পর্যটন স্পটে। ইতিমধ্যে অনেকের কাছে ‘গোয়ালিয়া পার্ক’ ‘মিনি বান্দরবান’ নামে পরিচিতি পেলেও সম্প্রতি ‘রূপসী গোয়ালিয়া’ নামে বেশ পরিচিতি পেয়েছে। প্রতিদিনই এই ‘রূপসী গোয়ালিয়া’ পর্যটন স্পটে দুর-দূরান্ত থেকে এসে পর্যটকরা ভিড় জমাচ্ছে। নিরিবিলি পরিবেশে মুক্ত বাতাস যেন পর্যটকদের মন জুড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে ঘিঞ্জি শহরে ব্যস্তময় জীবনে বেড়ে উঠা অনেকেই শান্তির নীড় খুঁজে বেরিয়ে পড়ে ‘রূপসী গোয়ালিয়া’ ভ্রমণে। এমনই কিছু পর্যটকের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। পর্যটকরা জানান, নির্ভেজাল সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পরিবেশে নিজেকে মেলে ধরতে চাইলে ‘রূপসী গোয়ালিয়া’র কোন বিকল্প নেই।
মাইক্রোবাস নিয়ে স্বপরিবারে ‘রূপসী গোয়ালিয়া’ ভ্রমনে আসেন রাজধানী ঢাকা ফার্মগেট এলাকার সোহেল পারভেজ। তিনি বলেন, ‘বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত দেখার আগ্রহ অনেকদিনের। কিন্তু, এখানে এসে এই নৈসর্গিক নীলাভূমির (রূপসী গোয়ালিয়া) সন্ধান পেয়েছি। এখানে না আসলে ভ্রমণের তৃপ্তিটা অপূর্ণ থেকে যেত। সু-উচ্চ পাহাড় আর সমুজের সমারোহ সত্যিই যে কাউকে কাছে টানবে। বিশেষ করে বড় বড় পাহাড় ভেদ করে আঁকাবাঁকা সুরু সড়কটি আমাকে বেশী মুগ্ধ করেছে’।
ছোট্ট মেয়ে সায়মাকে নিয়ে ‘রূপসী গোয়ালিয়া’ ভ্রমনে এসেছেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া এলাকার ফয়েজ উল্লাহ দম্পতি। ব্যবসায়িক কাজে কক্সবাজার শহরের রুমালিয়া ছড়া এলাকায় স্বপরিবারে বসবাস করলেও শহরের বাইরে যাওয়া সম্ভব হয়ে উঠে না। তাই, শত ব্যস্ততার মাঝেও ভ্রমনে বেরিয়েছে ফয়েজ উল্লাহ।
ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজারে আছি। কিন্তু, এত সুন্দর এলাকা রয়েছে তা আগে জানতাম না। আমার মনে হয় দেশের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘রূপসী গোয়ালিয়া’। এটি এমন একটি জাগয়া, যেখানে একবার বেড়াতে না গেলে বোঝাই যাবে না।’
প্রতিদিন পর্যটকদের আগমনকে পুঁজি করে পর্যটন ব্যবসায় এগিয়ে এসেছেন স্থানীয় শিক্ষিত যুবক সাইফুর রহমান সোহান। পশ্চিম গোয়ালিয়া এলাকার ছৈয়দ উল্লাহ ছেলে সাইফুর রহমান সোহান বলেন, ‘কক্সবাজার বন বিভাগ একটি ‘গোলঘর’ নির্মাণ করার কারণে পর্যটকদের আরও কাছে টানছে ‘রূপসী গোয়ালিয়া’। তাই, একটি ভ্রাম্যমান ব্যবসা বসিয়ে পর্যটকদের পানি, চিপস ও চটপতি বিক্রি শুরু করেছি। তবে দিন দিন দোকানের বেচা-কেনা অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়েছে।’
সোহান বলেন, ‘রূপসী গোয়ালিয়া’ পর্যটন সৌন্দর্য্যরে অপার সম্ভাবনা রয়েছে। যেন কক্সবাজার পর্যটনকেন্দ্রের মাঝে আরেকটি পর্যটন স্পট। এই পর্যটন স্পটটি সরকারি পৃষ্টপোষকতা পেলে হয়ে উঠতে পারে ভ্রমন পিয়াসুদের জন্য আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র। এই পর্যটনকেন্দ্রটি ঢেলে সাজানো হলে পর্যটন শিল্প বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রাখবে’।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিবেশের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, ‘কক্সবাজার ভ্রমনে আসা পর্যটকরা শুধু সাগর দেখে চলে যায়। কিন্তু, ‘রূপসী গোয়ালিয়া’ এমন একটি পর্যটন স্পট যা দেখে যেকোন মানুষের মধ্যে পাহাড়, বন ও পরিবেশের প্রতি প্রেম সৃষ্টি হবে। নেপালের মতো রোমাঞ্চকর ভ্রমন এই ‘রূপসী গোয়ালিয়া’ ভ্রমনে সেই স্বাদ পাবেন এতে কোন সন্দেহ নেই।’
কক্সবাজারের সিনিয়র সাংবাদিক তোফায়েল আহমদ বলেন, ‘এখানে না আসলে বুঝা যেত না শহরের এত কাছে মনোমুগ্ধকর এই রকম একটি পর্যটন স্পট রয়েছে। সরকারিভাবে সঠিক পরিকল্পনা হাতে নিলে প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে উঠবে আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র। বিশেষ করে বনবিভাগের যে ‘গোলঘর’ রয়েছে, ঠিক এর পাশে একটি বাঁধ দিয়ে লেক তৈরী করলে পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ হবে’।
জানতে চাইলে কক্সবাজার বনবিভাগের দক্ষিন বিভাগীয় কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘পর্যটনের বিষয়ে কোন ধরণের পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়নি। বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের সুবিধার্থে গোয়ালিয়া সড়কের পাশে একটি ‘গোলঘর’ স্থাপন করা হয়েছে। মুলত: উক্ত ‘গোলঘর’টি বিশ্রামের জন্য তৈরী করা হলেও এখন দেখছি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণ বেড়েছে।’
তিনি বলেন, চলতি বছর পাহাড় গুলোতে বনবিভাগ বাগান সৃজন করেছে। প্রায় ৭৫ হেক্টর বনভূমিতে গাছের চারা রোপন করা হয়েছে। আগামী বছর আরও ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে বাগান সৃজন করা হবে। রেজুখালের পাশের সু-উচ্চ পাহাড় থেকে গোয়ালিয়া সড়ক হয়ে দক্ষিন গোয়ালিয়া পর্যন্ত সবুজ বনায়ন সৃষ্টি করা হবে। তবে সরকার যদি মনে করেন তাহলে সেখানে পর্যটন স্পট গড়ে উঠতে পারে