মিজান হক:
বাংলাদেশের পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার। পৃথিবীর দীর্ঘতম একমাত্র অবিচ্ছিন্ন সমুদ্র সৈকতটি ভ্রমণবিলাসী পর্যটকদের প্রধান গন্তব্যস্থান। পাহাড় আর সমুদ্রের অপূর্ব সমন্বয়ের সাথে সম্প্রতি যুক্ত হয়েছে কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সাগরের পাড়ে ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ। যা পর্যটকদের আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
ইতিমধ্যে কক্সবাজারকে ঢেলে সাজাতে সরকার নানা উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহন করেছে। তার মধ্যে চিত্ত বিনোদনের ব্যবস্থাপনায় বিশেষ নজর না থাকলে পর্যটন তার জনপ্রিয়তা ও বৈশিষ্ট্য হারাবে এবং পর্যটকের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে যেভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের পরিধি ও ব্যাপকতা বাড়ছে সেটাও বাধাগ্রস্ত হবে।
নানা পর্যটন স্পটগুলোতে অপরূপ প্রাকৃতিক সুন্দর্যের কমতি না থাকলেও বিনোদন ঘাটতি নিয়ে চরম সমালোচনার মুখে রয়েছে এই পর্যটন নগরী। বিনোদনের পরিবেশ অনুন্নত ও সল্পতার করণে একটি সময়উপযোগি আধুনিক পর্যটন শহরের অপার সম্ভাবনাকে ধীরগতি ও হুমকির মুখে ফেলবে। বর্তমানে কক্সবাজারে পর্যটকদের কাছে সৈকতে ঘুরাঘুরি আর বালুকাবেলায় বসে নীল সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ ছাড়া একমাত্র বিনোদন হচ্ছে হোটেলে ফিরে লাইভ মিউজিকের আয়োজন। আর এই বিনোদনের প্রতিনিধিত্ব করছে কক্সবাজারের স্থানীয় ব্যান্ড মিউজিক।
একজন ব্যান্ডকর্মী হিসেবে আমার অভিমত:
কক্সবাজার পর্যটনের নানা উপকরণ ও বৈশিষ্টের মধ্যে স্থানীয় ব্যান্ড মিউজিককে বাদ দেয়ার কোন সুযোগ নেই। ইতিমধ্যে স্থানীয় ব্যান্ডগুলো পর্যটন শিল্পের অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে।
পর্যটনকে ঘিরে কক্সবাজারে তৈরি হওয়া উন্নত মানের অসংখ্য হোটেল-মোটেল গুলোর বর্তমানে একমাত্র বিনোদন মাধ্যম লাইভ মিউজিক। আর এর প্রতিনিধিত্ব করে যাচ্ছে কক্সবাজারের ব্যান্ড মিউজিকের সাথে সম্পৃক্ত স্থানীয় সংগীত শিল্পী, যন্ত্রী শিল্পী ও অন্যান্য কলাকৌশলীরা । পর্যটন শিল্প বিকাশে কক্সবাজারে বিনোদনের অন্যতম উপকরণ ব্যান্ড মিউজিক নিয়ে স্থানীয় টিমগুলো প্রতিনিয়ত পরিশ্রম করে গেলেও তাদের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে একটা সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহন বা কোন ধরনের পৃষ্টপোষকতা এ পর্যন্ত করা হয়নি।
২০১০ সালে করা পর্যটন নীতিমালায় পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশের লক্ষ্যে পর্যটন সংরক্ষিত এলাকা এবং বিশেষ পর্যটন অঞ্চলে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, বিনোদন ও সেবামূলক সুযোগ সুবিধা সৃষ্টির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রিয় সু স্পষ্ট নির্দেশনা থাকলেও কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছা ও স্থানীয় সাংস্কুতিক নীতি নির্ধারকদের অমনোযোগ এবং ঐক্যহীনতায় কক্সবাজারের ব্যান্ড মিউজিক কর্মীরা বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন, প্রশাসন থেকে শুরু করে সবাই ব্যান্ড মিউজিকের সহযোগিতা গ্রহন করে, কিন্তু তাদের সমস্যায় পাশে থাকার কেউ নেই। অবিশাস্য হলেও সত্য যে কক্সবাজারের কম বেশি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃিতিক সংগঠন প্রতিবছর রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা পায়। কক্সবাজারে শুধু ব্যান্ড মিউজিকের সংগঠনটিকে সঠিক মূল্যায়ন করা হয়না।
আমরা বরাবরেই ভুলে যাই এই যন্ত্রী শিল্পীদের সহযোগিতা ছাড়া কোন সংগঠনের বা রাষ্ট্রীয় সাংস্কুতিক অনুষ্ঠান পূর্ণতা পায়না। দেখা যায় স্থানীয় অনেক মৌসুমি সাংস্কুতিক সংগঠন বছরে কোন জাতিয় দিবসের একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করে রাষ্ট্রীয় অনুদানের সুফলভুগী হয়ে যায়। আমি অমূলক মানসে নয় যথাযত সম্মানের সাথে বলছি স্থানীয় সংগঠনগুলোর চাইতে পর্যটন নগরী হওয়াতে কক্সবাজারে ব্যান্ড মিউজিকের গুরুত্ব অধিকতর। তাই পর্যটন সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের পৃষ্টপোষকতায় স্থানীয় ব্যান্ড মিউজিকের মানউন্নয়নের মধ্যদিয়ে এক সাথে পথ চল্লে কক্সবাজারের ব্যান্ড মিউজিক পর্যটন শিল্পে এক নতুন মাত্রা যোগ হবে।
আমাদের সমস্যাটুকু:
পরিবেশগত কারণে নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যদিয়ে আমাদের পথচলা। পর্যটনকেন্দ্রের আশির্বাদে ঢাকা, চট্টগ্রামের পর লাইভ মিউজিকের ব্যাস্ত শহর কক্সবাজারের কথা উঠে আসলেও সেই তুলনায় কাজের মানে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি। প্রবল ইচ্ছা শক্তি থাকলেও স্থানীয়ভাবে সংগীতে ও যন্ত্রে দক্ষ শিক্ষক না থাকায় এবং মিউজিকের উর্বরভূমি চট্টগ্রাম, ঢাকার সাথে কক্সবাজারের ভৌগলিক দূরত্বের কারণে ককক্সবাজারের শিক্ষার্থিদের কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে।
ইতিমধ্যে কক্সবাজারে ব্যান্ড মিউজিকে সম্পৃক্তরা অনুশিলনের পরিবেশ নিয়ে চরম ভুগান্তিতে উৎসাহ হারাচ্ছে। প্রায় টিমে দেখা যাচ্ছে অনুশিলন করতে গেলে নানা সামাজিক বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। নিদৃষ্ট কোন স্থান না থাকায় আনুশিলনের জন্য নেয়া রুমের ভবন মালিকরা শব্দ দূষণের অযুহাতে অনুশিলনে বাধাপ্রদান এবং রুম ছাড়তে বাধ্য করছে।
কক্সবাজারের ব্যান্ড মিউজিক পর্যটনের একটা অংশ হিসেবে এর মানউন্নয়ন এবং এই খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে নিদৃষ্ট একটা অনুশিলনের স্থান প্রয়োজন। পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে ঘিরে সরকারের নেয়া মহাপরিকল্পনার মধ্যে স্থানীয় ব্যান্ড মিউজিকের জন্য একটি প্রশিক্ষন কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহনের জোর দাবী জানাচ্ছি। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় কক্সবাজারের ব্যান্ড মিউজিক সব সময় সবার পাশে থাকে, তাই স্থানীয় সম্মানিত জনপ্রতিনিধি ও মান্যবর জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে আমাদের এই দাবী অযুক্তিক মনে করছিনা।
♦ লেখক:
মিজান হক
কিবোর্ডিষ্ট, কাঠপেন্সিল ব্যান্ড, কক্সবাজার।
01814311631
[email protected]