কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের অপরাধ নতুন কিছু নয়। প্রতিনিয়ত পযটককে ছিনতাই, ডাকাতি, এমনকি সন্ধান মেলে সন্ত্রাসী গোষ্ঠি আরসার আস্তানার। তবে হোটেল-মোটেল জোনে আবাসিক ফ্ল্যাট ভাড়া করে তরুণ-তরুণীদের বিয়ের আয়োজনের ঘটনায় বিস্মিত স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা বলছেন, রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণে শহর এখন অনিরাপদ।
বিশিষ্টজনদের মতে, রোহিঙ্গাদের অপরাধ দমনে প্রশাসনকে আরো কঠোর হতে হবে। তারা বলছেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ না করা না গেলে প্রভাব পড়তে পারে পর্যটন খাতেও। যদিও প্রশাসন বলছে, যেকোন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তারা প্রস্তুত।
পুলিশ সুত্রে জানা যায়, গত ১৪ জানুয়ারি কলাতলীর হোটেল-মোটেল জোনের একটি অভিজাত ফ্ল্যাটে রোহিঙ্গা তরুণ-তরুণীর বিয়ের আয়োজন হচ্ছিল। পুলিশ খবর পেয়ে বিয়েটি পন্ড করে দেয়। এসময় ৬৫ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। এর মধ্যে ১৯ জনের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ১৯টি বিদেশি পাসপোর্ট। পাসপোটগুলোর মধ্যে ১২টি অস্ট্রেলিয়া ও সাতটি পাসপোর্ট যুক্তরাষ্ট্রের।
পুলিশ আরও জানায়, এই বিয়ের আয়োজনকে কেন্দ্র করে ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গারা এসেছিলেন। এদিন রাত ৯টায় খাবারের আয়োজন শেষে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার মুহূর্তে সেখানে পুলিশ হাজির হয়।
এদিকে এ ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের মতে, রোহিঙ্গারা নিজেরা নিজেদের হুমকিতে ফেলছেন। পাশাপাশি তাদের সমস্যার কারণে আমাদের জীবনও হুমকির মুখে।
এর আগে, শহরের অন্যতম পর্যটন জোন কলাতলীতে র্যা ব অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরসার আস্তানার সন্ধান পায়। ওই আস্তানা থেকে বিপুল পরিমাণ ককটেল, বিস্ফোরক সদৃশ বস্তু, সামরিক বাহিনীর ন্যায় পোশাক এবং বোমা তৈরীর সরঞ্জাম উদ্ধার করে। এসময় আরসা’র লজিস্টিক শাখার প্রধান হাফেজ রহমত উল্লাহ সহ তিন সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করে র্যা ব।
ওইদিন সংবাদ সম্মেলনে র্যা বের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে এক বছরে আরসা’র শীর্ষ সন্ত্রাসী ও সামরিক কমান্ডার, গান গ্রুপ কমান্ডার, অর্থ সম্পাদকসহ সর্বমোট ৮৩ জন সক্রিয় সদস্যকে তারা গ্রেপ্তার করেছেন।
রোহিঙ্গাদের নানা অপরাধের উদ্বেগ জানিয়ে এডভোকেট প্রতিভা দাশ বলেন, ‘ভাবতেও অবাক লাগে আদালতে প্রায় অর্ধেক মামলা রোহিঙ্গা সংশ্লিষ্ট । যদিও তাদের অপরাধ দমনে সরকার চেষ্টা করছে। প্রশাসনের সার্বক্ষণিক তদারকি আছে। তারপরও কিছু রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে বেরিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছেন, নানা অপরাধেও জড়াচ্ছেন।’
এই আইনজীবী রোহিঙ্গারা ক্যাম্প থেকে বের হয়ে কীভাবে এসব অপরাধ করছে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেন। বলেন, লিগ্যাল ও মেডিকেল গ্রাউন্ড ছাড়া ক্যাম্প থেকে বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই ।‘
কক্সবাজার পিপলস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের দ্বারা বিভিন্ন ধরনের অরাজকতামুলক কার্যক্রম চলছে। অপরাধ করে তারা আবার ক্যাম্পে ফিরে যায়। এতে কর্তৃপক্ষের যথেষ্ট গাফেলতি আছে ।’
এদিকে কক্সবাজারে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের কার্যক্রম বন্ধে আরও নজরদারি বাড়ানোর আহবান জানিয়েছেন কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আয়াছুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার পর্যটন শহর হওয়ায় বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নতুন নতুন মানুষ বেড়াতে আসে। তবে কিছু রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে শহরে এসে সুযোগ বুঝে ছিনতাই করে। এর মধ্যে অনেকেই ধরা পড়ে। অনেকেই ধরা পড়ছে না। তাই ক্যাম্পে আরও নজরদারি বাড়ানো দরকার। "
কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম বলেন, “মানবতার খাতিরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের আশ্রয় দিয়েছেন। কিন্তু তারা প্রতিনিয়ত ক্যাম্প থেকে বের হয়ে কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকার মানুষের সাথে মিশে যাচ্ছে। সেই সাথে বিভিন্ন ধরণের অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। যে কোন অবস্থাতেই এটা রোধ করা দরকার। তারা যতদিন বাংলাদেশে আছে ক্যাম্প এলাকার মধ্যেই যেন অবস্থান করে। এই বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি।"
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী বলেন, “কক্সবাজারবাসীর কাছে আমি অনুরোধ করব, কোনোভাবেই তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় যেন না দেয়। রোহিঙ্গারা যাতে কোন অবস্থাতেই বাংলাদেশের নাগরিকত্ব না পায় সে ব্যাপারে আমি আমার কাউন্সিলরদের সাথে দ্রুত আলাপ করব।”
কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, “আমার দায়িত্বরত জায়গায় এসব অপরাধ আর কখনো হতে দেব না। পর্যটকদের নিরাপত্তায় কক্সবাজার টুরিস্ট পুলিশ চ্যালেঞ্জের মুখে। প্রয়োজন বোধে যেকোন ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। শতভাগ নিরাপত্তা প্রদানের লক্ষ্যে আমরা প্রস্তুত। " সুত্র: দৈনিক কক্সবাজার