পাঁচ বছর আগে বাড়ি থেকে বের হয়ে নিখোঁজ হন মানসিক ভারসাম্যহীন ইয়াছমিন আক্তার (৩৭)। স্বজনেরা অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁকে পাননি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিলেন। কিন্তু কোনো সাড়া না পেয়ে স্বজনেরা ধরে নিয়েছিলেন, ইয়াছমিন আর বেঁচে নেই। এরই মধ্যে কক্সবাজারের টেকনাফে মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘মারোত’-এর নজরে পড়েন ইয়াছমিন। সংগঠনটির উদ্যোগে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগের পর স্বজনদের কাছে ফিরতে পেরেছেন ইয়াছমিন।
ইয়াছমিনের বাড়ি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার দেওয়াননগর গ্রামে। খবর পেয়ে শনিবার হাটহাজারী থেকে ইয়াছমিনের ভাই মোহাম্মদ রাশেদ ও বোন সাজু আক্তার টেকনাফে আসেন। দুপুরে টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের নয়াপাড়া বাজারে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মারোতের পক্ষ থেকে ইয়াছমিনকে তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সহসভাপতি ঝুন্টু বড়ুয়া বলেন, টেকনাফের সাবরাং নয়াপাড়া বাজারে ইয়াছমিন নামের ওই নারীকে ঘোরাঘুরি করতে দেখে তাঁরা তাঁর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে তিনি নাম ও ঠিকানা বলতে সক্ষম হন। তখন হাটহাজারী থানা-পুলিশ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সহযোগিতায় তাঁর স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। যোগাযোগের এক পর্যায়ে ভিডিও কল ও হোয়াটসঅ্যাপে ছবি আদান-প্রদানের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত হন। শনিবার ইয়াছমিনের বড় বোন ও ছোট ভাই টেকনাফে এলে তাঁদের হাতে তাঁকে তুলে দেন।
মানসিক ভারসাম্যহীন ইয়াছমিনকে তুলে দেওয়ার সময় মারোতের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক সন্তোষ কুমার শীল, সহসাধারণ সম্পাদক মোবারক হোসেন ভূঁইয়া, আইটি ও দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ হোসাইন আমিরী, সদস্য মোশাররফ হোসেন, রূপন শর্মাসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
ইয়াছমিনের ভাই মোহাম্মদ রাশেদ বলেন, পাঁচ বছর আগে বাড়ি থেকে হারিয়ে যাওয়ার পর তাঁকে আরও খুঁজে পাওয়া যায়নি। অনেক খোঁজাখুঁজির বোনকে না পেয়ে পরিবারের লোকজন হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। ধরে নিয়েছিলেন, আর কখনো তাঁর দেখা পাবেন না। মারোত সদস্যদের মাধ্যমে বোনকে আবারও ফিরে পেয়েছেন। তাই তাঁরা বোনকে নিতে এসেছেন।
টেকনাফের বিভিন্ন পেশার নিয়োজিত লোকজনের সঙ্গে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির বিক্রয় প্রতিনিধিকে নিয়ে ২০১৬ সালে ডিসেম্বরে মারোতের যাত্রা শুরু। তবে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২০১৭ সালে। সংগঠনটি পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীদের স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেওয়াসহ তাঁদের সেবায় কাজ করে। সংগঠনটির উদ্যোগে ইয়াছমিনসহ এখন পর্যন্ত ৩৯ জন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে।
মারোতের সভাপতি আবু সুফিয়ান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের সংগঠনের উদ্যোগে আগে আরও ৩৮ জন ভাসমান মানসিক রোগীকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ৩৯তম ব্যক্তি হিসেবে শনিবার ইয়াছমিনকে হস্তান্তর করা হলো।
মারোতের প্রধান উপদেষ্টা সন্তোষ কুমার শীল বলেন, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া এসব নারী-পুরুষকে আপন ঠিকানায় ফিরিয়ে দেওয়া অনেক দুঃসাহসিক কাজ। মারোত করোনার সময় টেকনাফের শতাধিক মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীদের দৈনিক একবেলা করে রান্না করা খাবার দিত এবং বিভিন্ন জাতীয় দিবসে শীতবস্ত্রের পাশাপাশি উন্নতমানের খাবার ও অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা করেছে। কোনো মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী মারা গেলে তাঁদের দাফনের ব্যবস্থা করে সংগঠনটি।