
পাকিস্তানের বেলুচিস্তানে কয়েকশ যাত্রী বহনকারী একটি ট্রেনে সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে বিদ্রোহীরা। বালুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ) নিশ্চিত করেছে, কোয়েটা থেকে রাওয়ালপিন্ডিগামী জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনটি লক্ষ্য করে তারা এই হামলা চালিয়েছে।
সংগঠনটি দাবি করেছে, তারা এখন ট্রেনটির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
পাকিস্তানি পুলিশ স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, হামলায় অন্তত তিনজন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ট্রেনের চালকও রয়েছেন।
পুলিশ আরও জানিয়েছে, ঘটনাস্থলে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
পাকিস্তানে গাড়িতে এলোপাতাড়ি গুলি, নিহত ৬
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডন জানিয়েছে, বেলুচিস্তানের বোলান জেলায় পেশোয়ারগামী একটি যাত্রীবাহী ট্রেনে মঙ্গলবার সশস্ত্র হামলা চালায় বন্দুকধারীরা। হামলার পর প্রাদেশিক সরকার জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছে।
বেলুচিস্তান সরকারের মুখপাত্র শাহিদ রিন্দ এক বিবৃতিতে জানান, কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনের ওপর পেহরো কুনরি ও গাদালার মধ্যবর্তী এলাকায় তীব্র গুলি বর্ষণের খবর পাওয়া গেছে।
রেলওয়ের কন্ট্রোলার মুহাম্মদ কাশিফ জানিয়েছেন, ট্রেনটিতে নয়টি বগি রয়েছে এবং এতে প্রায় ৫০০ জন যাত্রী ছিলেন।
তিনি বলেন, সশস্ত্র হামলাকারীরা ট্রেনটিকে টানেল নম্বর ৮-এ থামিয়ে দিয়েছে। যাত্রী ও রেলকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পুলিশ কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, ট্রেনটি পাহাড়বেষ্টিত একটি টানেলের সামনে আটকা পড়েছে। এলাকাটি পার্বত্য হওয়ায় সেখানে সন্ত্রাসীদের জন্য আশ্রয় নেওয়া ও হামলার পরিকল্পনা করা সহজ।
সরকারি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সিবি হাসপাতালসহ জরুরি স্বাস্থ্যসেবা প্রস্তুত রাখা হয়েছে এবং ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর জন্য অ্যাম্বুলেন্স ও নিরাপত্তা বাহিনী পাঠানো হয়েছে। তবে দুর্গম পার্বত্য পথের কারণে কর্মকর্তাদের সেখানে পৌঁছাতে সমস্যা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মুখপাত্র রিন্দ।
রেল বিভাগ ঘটনাস্থলে উদ্ধারের জন্য আরও ট্রেন পাঠিয়েছে বলে জানা গেছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামলার ব্যাপকতা এবং সন্ত্রাসী উপাদান জড়িত রয়েছে কি না, তা নির্ধারণ করা হচ্ছে। বেলুচিস্তান সরকার জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে এবং সব সংস্থাকে সক্রিয় থাকতে বলা হয়েছে।
সরকার জনগণকে গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে, স্বাস্থ্য বিভাগের মুখপাত্র ডা. ওয়াসিম বেগ জানিয়েছেন, কোয়েটার সিভিল হাসপাতালে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। হাসপাতালের সব চিকিৎসক, ফার্মাসিস্ট, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের দ্রুত হাসপাতালে যোগ দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
হামলায় হতাহতের সংখ্যা নিয়ে এখনো কোনো সরকারি ঘোষণা আসেনি। তবে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নকভি হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, নিরীহ যাত্রীদের ওপর হামলা চালানো বর্বরদের জন্য কোনো ছাড় নেই।
উল্লেখ্য, গত বছরের অক্টোবরে দেড় মাসের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর কোয়েটা ও পেশোয়ারের মধ্যে ট্রেন সেবা ফের চালু করা হয়।
গত এক বছরে বেলুচিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে কোয়েটার একটি রেলস্টেশনে আত্মঘাতী হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত ও ৬২ জন আহত হন।
সূত্র: বিবিসি. ডন
পাঠকের মতামত