উরি হামলার পর থেকেই টানটান উত্তেজনা। হুমকি-পাল্টা হুমকি। সার্ক শীর্ষ সম্মেলন বর্জন। পানি রাজনীতি। বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে নতুন মোড় নিলো ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা। ভারতের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ রেখায় সন্ত্রাসীদের ‘লঞ্চ প্যাডে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালিয়েছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সেনারা ওই অভিযান চালিয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশনস (ডিজিএমও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল রণবীর সিং বলেছেন, এ হামলায় উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ওদিকে ভারতের ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকে’র দাবিকে প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান। পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সীমান্তে গোলাগুলি হয়েছে। এতে দুই পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছে। এ ঘটনার পর পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ আজ শুক্রবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক আহ্বান করেছেন।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আসলে সীমান্তের দু’পাড়ের মধ্যে গুলিবিনিময় হয়েছে
। ইচ্ছাকৃতভাবে একে ভারত ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ বলে চালিয়ে দিচ্ছে। পাকিস্তান পরিষ্কার করে জানাচ্ছে যে, যদি পাকিস্তানের মাটিতে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হয় তাহলে কড়াভাবে একই রকম জবাব দেয়া হবে। তবে ভারতীয় সেনাদের গুলিতে আজাদ জম্মু-কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণ রেখায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমপক্ষে দু’জন সেনা নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে তারা। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ডিজিএমও’র সংবাদ সম্মেলনে ওই অভিযানকে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ বলে দাবি করার অল্প পরেই পাকিস্তানের ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশন্স (আইএসপিআর) বিবৃতিটি দেয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি ‘রেইড’-এর পাল্টা জবাব দিয়েছে তারা। ভারত বলেছে, যাদের বিরুদ্ধে ওই অভিযান চালানো হয়েছে তারা ভারতে অনুপ্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ভারতের অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া, বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও পাকিস্তানের অনলাইন ডন-এর খবরে এসব কথা বলা হয়েছে।
কলকাতা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গি ঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে ভারতীয় সেনাবাহিনী। বুধবার রাতে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলন করে জানান ভারতীয় সেনাবাহিনীর ডিজিএমও রণবীর সিংহ। পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে একাধিক লঞ্চিং প্যাডে ভারতীয় সেনার এই আক্রমণে জঙ্গিদের বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলেও সেনাসূত্রে জানানো হয়। ভারত যে ধরনের হামলা চালিয়েছে, তাকে সামরিক পরিভাষায় ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ বলা হয়। অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণ রেখার ওপারে যেসব জঙ্গি পরিকাঠামো তৈরি হয়েছে, সেগুলোকে নিশানা করেই এ হামলা চালানো হয়েছে। ভারতীয় বাহিনীর এই হামলায় জঙ্গিরা শুধু নয়, তাদের সাহায্যকারীদেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে সেনাবাহিনী জানিয়েছে। অনুপ্রবেশ এবং সন্ত্রাস মোকাবিলায় ভারতের এই ধরনের হানা চলবে বলে সেনাবাহিনী জানিয়েছে। ডিজিএমও আরো জানিয়েছেন, বুধবার রাতে নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে হামলা চালানো হবে, তা পাকিস্তানের ডিজিএমও’কে তিনি নিজেই জানিয়েছেন। বার বার ভারতের অনুরোধ সত্ত্বেও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডে জঙ্গি পরিকাঠামো ধ্বংস করতে ইসলামাবাদ কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায়, ভারতকে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের সিদ্ধান্ত নিতে হলো বলে পাকিস্তানকে জানিয়েছেন রণবীর সিংহ।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়, ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের’ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জী, ভাইস প্রেসিডেন্ট হামিন আনসারী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, জম্মু-কাশ্মীরের গভর্নর ও মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিকে জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে এ বিষয়ে নিরাপত্তা সংক্রান্ত মন্ত্রিপরিষদ কমিটির একটি বৈঠক হয়েছে। তাতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এতে নিয়ন্ত্রণ রেখা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। ভারতের সাবেক এয়ার ভাইস মার্শাল মনমোহন বাহাদুর বলেছেন, পাকিস্তানের কাছে এখন বড় একটি বার্তা দেয়া হয়েছে। তা হলো যদি আর কোনো সন্ত্রাসী হামলা হয় তাহলে আমাদের জবাব হবে সীমান্ত পেরিয়ে হামলা চালানো।
ওদিকে বার্তা সংস্থা এএফপিকে উদ্ধৃত করে অনলাইন ডনের রিপোর্টে বলা হয়, পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের সদস্য নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। কিন্তু ভারতের ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালানোর দাবি তারা প্রত্যাখ্যান করেছে। সেনাবাহিনী বলেছে, বুধবার রাত আড়াইটায় গুলিবিনিময় শুরু হয়। তা চলতে থাকে স্থানীয় সময় সকাল ৮টা পর্যন্ত। বিবৃতিতে বলা হয়, ভিমবার, হটস্প্রিংকেল ও লিপা সেক্টরে নিয়ন্ত্রণ রেখায় কোনো উস্কানি ছাড়াই ভারত গুলি ছোড়ে। এর উপযুক্ত জবাব দিয়েছে পাকিস্তানি সেনারা।
কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে কিছুদিন ধরেই তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। কয়েকদিন আগে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের উরি এলাকায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলা হয়। তাতে ১৮ ভারতীয় সেনা সদস্য নিহত হন। এ হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত। কিন্তু ভারতের এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান। দৃশ্যত, কাশ্মীর উত্তেজনাকে কেন্দ্র করেই এবার নভেম্বরে ইসলামাবাদে অনুষ্ঠেয় সার্ক সম্মেলন স্থগিত হয়ে গেছে। এ নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে রয়েছে। তার মধ্যে নিয়ন্ত্রণ রেখায় এই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ হলো। এতে পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করতে পারে। ২০০৩ সালে এ দুটি দেশের মধ্যে সীমান্তে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তা সত্ত্বেও সীমান্তে দু’পক্ষের মধ্যেই মাঝেমধ্যেই গোলাগুলি হচ্ছে। এ জন্য একপক্ষ আরেকপক্ষকে চুক্তি লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত করছে।
রেডিও পাকিস্তানের রিপোর্টে বলা হয়েছে, এ ঘটনার কড়া নিন্দা জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ। তিনি বলেছেন, শান্তিপ্রিয় একটি প্রতিবেশী পেতে আমাদের আকাঙ্ক্ষা ভুল কিছু নয়। এটাকে আমাদের দুর্বলতা হিসেবে দেখা ঠিক নয়। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের রিপোর্টে বলা হয়েছে, এমন ‘স্ট্রাইক’ পারমাণবিক শক্তিধর দুটি দেশ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনাকে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। দুটি দেশের মধ্যে এসব ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটছে যখন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল রাহিল শরীফ অল্প কিছুদিনের মধ্যেই অবসরে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফেরও মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে। নওয়াজ শরীফ ভারতের এ ‘স্ট্রাইককে’ বিনা উস্কানিতে, নগ্ন আগ্রাসন বলে অভিহিত করেছেন। পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে আজ শুক্রবার তিনি মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক আহ্বান করেছেন।
সৌদি আরবে পবিত্র হজ পালন করতে গিয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়েন পাকিস্তানিরা—সৌদি সরকারের তরফ থেকে এমন ...
পাঠকের মতামত