পাঠকের প্রশ্ন: ২০১২ এর ২৭ সেপ্টেম্বর আমাদের পথচলা শুরু। এর মাঝে অনেক কিছু ঘটেছে তবে এতটুকু বুঝেছি ও আমাকে অনেক ভালবাসে। ওর কথা আমার পরিবারের সবাই জানে। ও একটা সরকারি চাকরি করে। তবে আমার কথা ওর পরিবারের কেউ জানেনা।
আমি অনার্স শেষ করেছি এই বছর। বাসায় বিয়ের প্রেসার আছে। তবে আমি ওকেই বিয়ে করতে চাই। ও সবার বড় ছেলে আর এক ছেলে। একটু লাজুক। বলে, বাসায় কীভাবে বলবো!
যাই হোক, অনেক বোঝানোর পর আমার কাছ থেকে ৬ মাস সময় নিয়েছে। সেই দিনও শেষ। না, ও বলতে পারে নাই আমার কথা। যদিও এর মধ্যে ওর অনেক সমস্যা গিয়েছে, আজ সেটার শেষ দিন। তারপরও আমি বুঝছি না কী করব।
যে ৬ মাসেও বলতে পারলো না সে কি আর বলতে পারবে। আমি খুব অসহায় বোধ করছি। আমি এখন কি করব ওর আশায় বসে থাকব না কি ওর সাথে সব সম্পর্ক শেষ করে দিব?
প্রশ্নটি আমাদের ফেসবুক পেজে করেছেন : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন।
চাইলে আপনিও যেকোনো প্রশ্ন করতে পারেন আমাদের কাছে। আর নিজের নাম গোপন রাখতে চাইলে প্রশ্ন পাঠাতে পারেন পেজের ইনবক্সে, সঙ্গে লিখে দিতে হবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। আমাদের ফেসবুক পেজ দেখতে এখানে ক্লিক করুন। আর উত্তর জানতে এখানে ক্লিক করুন।
স্বাস্থ্য হোক বা সৌন্দর্য, খেলা হোক বা সিনেমা, দাম্পত্য বা প্রেম, অফিসের সমস্যা কিংবা আইনি, বিজ্ঞান হোক বা রাজনীতি, স্কুল-কলেজ হোক বা সামাজিক ও পারিবারিক কোনো সমস্যা। যে কোনো সমস্যা লিখে জানান আমাদের। আপনার হয়ে সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করবো আমরা।
উত্তর
পরামর্শ: দেখুন আপু, কারো সাথে প্রেম হয়েছে মানে এই না যে অন্য মানুষটি না চাইলেও তাঁকে জোর করে বিয়ে করতেই হবে! আপনি খুব সংক্ষেপে লিখেছেন, বিস্তারিত কাহিনী আমি প্রায় কিছুই বুঝতে পারছি না। কিন্তু তবুও, একটা জিনিস পরিষ্কার যে ছেলেটির কিন্তু আপনাকে বিয়ে করার ইচ্ছা নেই। নেই বলেই কখনো লাজুক হবার বাহানা, কখনো সমস্যার বাহানা সে আপনাকে দিচ্ছে। দুনিয়ায় আর কি লাজুক ছেলে নেই? তাঁরা কি প্রেম করে বিয়ে করে না বলুন তো? আর বিয়ের কথা বলতে লজ্জা লাগে, বাবা মাকে লুকিয়ে প্রেম করার সময় লজ্জা কোথায় ছিল? একটা মেয়েকে বিয়ে করার আশ্বাসে ঘোরাতে লজ্জা লাগে না?
আপু, একটা সহজ ব্যাপার আমি বুঝি- ছেলেটি প্রতিষ্ঠিত, প্রাপ্তবয়স্ক। সে এটাও জানে যে আপনার মা বাবা আপানাকে ঘরে বসিয়ে রাখবেন না। আজ হোক, কাল হোক বিয়ের কথা বলবেনই। ছেলেটির যদি সত্যিই আপনাকে বিয়ে করার ইচ্ছা থাকতো, তাহলে সে নিশ্চয়ই আপনাকে হারানোর ভয় পেত আর আপনাদের প্রেমকে প্রতিষ্ঠা দেয়ার চেষ্টা করতো। লেখাপড়া শেষে ভালো চাকরি, তারপর বিয়ে- সব মানুষই তো এমন প্ল্যানই করে জীবন নিয়ে, তাই না? কোন একদিন যদি এই ছেলেটি এসে আপনাকে বলে যে মা বাবার পছন্দে সে বিয়ে করতে যাচ্ছে, লজ্জায় মা বাবাকে না বলতে পারে নাই- আমি একটুও অবাক হবো না। একটুও না। একজন মেরুদণ্ডহীন মানুষের পক্ষে এটা খুবই সম্ভব!
আমি জানি, আপনি ভাবেন যে ছেলেটি আপনাকে সত্যিই ভালোবাসে আর আপনাকেই বিয়ে করবে। কিন্তু আপু, দুনিয়ায় যারা প্রতারিত হয় তাঁদের সকলেরই কিন্তু মনে হয় তাঁদের ভালোবাসাটা সত্যি। তাহলে তাঁরা প্রতারিত হয় কেন? কারণ আমরা মানুষ চিনতে ভুল করি। আরও একটা জিনিস ভাবুন আপু, যে ছেলেটি এখনোই আপনার জন্য বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে পারে না, সে কি আদৌ আপনাকে কখনো ভালো রাখবে? ভেবেছেন জিনিসটা? তাঁর পরিবার যদি আপনাকে নির্যাতন করে, ছেলেটি কি ঠেকাবে? ঠেকাবে না। যদি আল্লাহ না করুন কেউ আপনার একটা ক্ষতি করে, ছেলেটি কি বাঁচাবে? বাঁচাবে না। যে সামান্য একটা বিয়ের কথা পরিবারে বলতে পারছে না, বারবার সময় নিয়ে ব্যর্থ হচ্ছে, প্রেমের প্রতিজ্ঞাই যে রক্ষা করতে পারছে না... সে কি জীবনসঙ্গী হবার গুরুদায়িত্ব পালন করতে পারবে? সে কি আপনার "সুপারম্যান" হতে পারবে?
আমার কিন্তু মনে হয় পারবে না! এখন বাকি সিদ্ধান্ত আপনার।
শুধু এটুকুই বলবো, বিয়ে তাঁকেই করা উচিত যে কথা দিয়ে কথা রাখতে জানে!
পরামর্শ দিয়েছেন-
রুমানা বৈশাখী
কথাসাহিত্যিক
বিভাগীয় প্রধান, প্রিয় লাইফ