দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভুয়া ঠিকানায় জন্মনিবন্ধন নিয়ে পাসপোর্ট করেছেন রোহিঙ্গা নাগরিকরা। দালাল চক্র ও অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আঁতাত করে নাম-পরিচয় গোপন রেখে জন্মনিবন্ধন ও পাসপোর্ট সংগ্রহ করছেন মিয়ানমার থেকে আশ্রয় নেওয়া অনেক নাগরিক। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশের সংশ্লিষ্ট শাখা অনুসন্ধান করে তাদের দেওয়া নাম-ঠিকানার কোনো অস্তিত্ব পায়নি।
এ কারণে নির্দিষ্ট করে ১০২ জনের তালিকাসহ ভুয়া ঠিকানায় নেওয়া জন্মনিবন্ধন বাতিলের জন্য রেজিস্ট্রার জেনারেলকে ব্যবস্থা নিতে চিঠি দিয়েছে পুলিশ। পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ ও রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জন্ম সনদ পাওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৭৭ জনের তালিকা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৪২ জন, বদরগঞ্জের দামোদরপুর ইউনিয়ন পরিষদের ২৩ জন, রংপুরের ২৩ জন, বাগেরহাটের গোতাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ ১১ জন এবং বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়ন পরিষদের দেওয়া একটি সনদপত্র পাওয়া গেছে। এ ছাড়া বানারীপাড়া উপজেলায় এক রোহিঙ্গাকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
গত ২৬ মে জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধনের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে পাঠানো এক চিঠিতে বাংলাদেশ পুলিশের পাসপোর্ট শাখার স্পেশাল ব্রাঞ্চ থেকে এসব জন্মনিবন্ধন বাতিলের জন্য অনুরোধ জানানো হয়।
চিঠিতে বলা হয়, ‘সংযুক্ত তালিকায় বর্ণিত ১০২ জন অবৈধ উপায়ে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে জন্মনিবন্ধন গ্রহণ করে বাংলাদেশি পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছেন। গোয়েন্দা তথ্য ও অধিকতর অনুসন্ধান প্রতিবেদন পর্যালোচনায় বিভিন্ন স্থান থেকে দালাল চক্র, অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ইত্যাদি ব্যক্তিগণের সহায়তায় প্রতারণামূলকভাবে বাংলাদেশি জন্মনিবন্ধন সংগ্রহ করেছেন। প্রকৃতপক্ষে তালিকায় বর্ণিত জন্মনিবন্ধনধারী ব্যক্তিগণ রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ভুক্ত মিয়ানমারের নাগরিক।’
গত ৫ জুন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় থেকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘আপনার আওতাধীন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন হতে প্রায় ৪৯ জন রোহিঙ্গা নাগরিকের জন্মনিবন্ধন সম্পন্ন করা হয়েছে। আইন-বহির্ভূতভাবে নিবন্ধনকৃত ৪৯ জন রোহিঙ্গা নাগরিকের জন্মসনদ ইতোমধ্যে বিডিআরআইএস সিস্টেম হতে স্থগিত করা হয়েছে।’
এরপর গত ৯ জুন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন থেকে ঢাকা উত্তরের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা এবং সকল আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। ডিএনসিসি সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম সিদ্দিক স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘উপর্যুক্ত বিষয় ও সূত্রোক্ত পত্রের মর্মানুযায়ী বর্ণিত রোহিঙ্গা নাগরিকের জন্মসনদ প্রদানের সময় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের যথাসময়ে যথাস্থানে স্ব-শরীরে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিতকরণের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সহকারী রেজিস্ট্রার জেনারেল সামিউল ইসলাম রাহাদ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা জন্মনিবন্ধন নম্বরগুলো স্থগিত করেছি। নিবন্ধনের সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের ডাকা হয়েছে। আমাদের আইসিটি বিভাগ এ বিষয়ে কাজ করছে।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী বলেন, ‘আমরা যে নাম্বারগুলো পেয়েছি, সেগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে চেক করেছি। আমাদের কোনো জোন থেকেই সেগুলো রেজিস্ট্রেশন হয়নি। এগুলো হয়তো বাইরে কোথাও থেকে তৈরি করা হয়েছে। আমরা রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে ব্যাখ্যা পাঠিয়েছি। আমরা উল্লেখ করেছি, এ জন্মনিবন্ধনের নাম্বারগুলো অবৈধ এবং সঠিক নয়।