ব্রিটিশ মুসলিম ফরিদ ফাইদি। ‘শান্তির জন্য হাঁটা’ স্লোগানে মুসলিম তরুণ ও যুবসমাজকে অনুপ্রাণিত করতে পায়ে হেঁটে সৌদি আরবের পবিত্র নগরী মক্কা যাওয়ার উদ্দেশ্যে বর্তমানে ইস্তাম্বুল অবস্থান করছেন।
মুসলিম উম্মাহর অনেক বড় আশা এবং আকাঙ্ক্ষার মধ্যে অন্যতম একটি হলো হজ। হজ করতে মুমিন মুসলমানকে পবিত্র নগরী মক্কায় যেতে হয়।
বিশ্বব্যাপী ইসলাম ও মুসলমানদের শান্তির বার্তা এবং পরিচয় তুলে ধরতে বদ্ধপরিকর ফরিদ ফাইদি। একজন মুসলমান হিসেবে ফরিদের বিশ্বাস যে, প্রত্যেক মুসলিমই ইসলামের একেক জন রাষ্ট্রদূত। ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করাই সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য।
ফরিদ ফাইদি শান্তিপূর্ণ কাজ করার চেষ্টা করে। যে শান্তির পথ দেখিয়েছে ইসলাম। সালামের মাধ্যমে পরস্পরের যে শান্তি কামনা শুরু হয়। আনাদোলু এজেন্সিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন ব্রিটিশ নাগরিক ফরিদ ফাইদি।
‘শান্তির জন্য হাঁটা’ স্লোগানে পবিত্র নগরী মক্কার উদ্দেশ্যে গত বছরের ৩ নভেম্বর এ দীর্ঘ এ যাত্রা শুরু করেন ফরিদ। শুরুতে তিনি চিন্তা করেছিলেন এ দীর্ঘ পথ তিনি সাইকেলে পাড়ি দেবেন। পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন তিনি।
হেঁটে পবিত্র নগরী মক্কার এ যাত্রা ৩ নভেম্বর শুরু করেন ফরিদ। যদিও পদযাত্রার আগে তার বিমান ভ্রমণ, সুন্দর হোটেলে রাতযাপনসহ অনেক অভিজ্ঞতা ছিল। কিন্তু হেঁটে ভ্রমণের কোনো অভিজ্ঞতা তার ছিল না। হেঁটে পবিত্র নগরী মক্কায় ভ্রমণ তাকে উত্তেজিত করে তোলে বলেও তিনি যোগ করেন।
ফরিদ ফাইদি জুলাই ২০২০ নাগাদ পবিত্র ভূমিতে পৌঁছার পরিকল্পনা নিয়েই এ ভ্রমণ শুরু করেন। যেখানে গ্রীষ্মের প্রচণ্ড উত্তাপেও অনেক মানুষের সমাগম হবে।
ফরিদ ফাইদি প্রায় ৪ হাজার কিলোমিটার (২৪৮৫ মাইল) পথ পাড়ি দিয়ে ইস্তাম্বুলে পৌঁছান। দীর্ঘ এ পথ ভ্রমণে নিজেকে তিনি খুবই দৃঢ় ও শক্ত রেখেছেন। তাকে আরও ২৭০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে।
ফাইদির আশা, বিশ্বব্যাপী যত ক্যান্সার রোগী আছে তাদের জন্য তার এ ভ্রমণ অনুপ্রেরণা জোগাবে। কেননা ফরিদ ফাইদি নিজেই কিডনি ক্যান্সারে আক্রান্ত। একটি কিডনি দিয়ে চলছে তার জীবন।
ফরিদ ফাইদি দীর্ঘ ভ্রমণ বাস্তবায়নে প্রতিদিন প্রায় ৬০ কিলোমিটার রাস্তা হেঁটে পাড়ি দেন। এ পথ পাড়ি দেয়াকে মহান আল্লাহর একান্ত অনুগ্রহ মনে করেন ফাইদি।
দীর্ঘ এ ভ্রমণে আল্লাহর মহা অনুগ্রহ না থাকলে ফাইদির পক্ষে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেয়া সম্ভব ছিল না। যাত্রাপথে তিনি প্রচণ্ড বৃষ্টি, তুষার ও ঠান্ডা পানি অতিক্রম করেই মক্কার উদ্দেশ্যে এগিয়ে চলছেন।
অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা ফাইদি
ফাইদি আশাবাদী ও তার বিশ্বাস, সে আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন। যারা তার এ বার্তাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেবেন।
পবিত্র নগরী মক্কার এ দীর্ঘ পথের কষ্টসাধ্য ভ্রমণ বিশ্বব্যাপী এ বার্তা পৌঁছে দেবে যে, ইসলাম শান্তিপূর্ণ ধর্ম। মুসলমানরাও শান্তি প্রিয় মানুষ। তরুণ প্রজন্ম তার থেকে এ অনুপ্রেরণা পাবে যে-
‘আমি এ কাজটি করছি, আর এর মাধ্যমে আমি পৌঁছে যাচ্ছি ইসলামের পবিত্র স্থানে।’
বিশ্বের সব তরুণ-যুবক মুসলিমদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, বিশ্বব্যাপী শান্তি ও ভালোবাসা পৌঁছে দিতে সবার সুন্দর ও শান্তিপ্রিয় প্রচেষ্টার বিকল্প নেই।’
ফরিদ ফাইদির ইচ্ছা-
ইসলাম ও মুসলমানদের শান্তির বার্তা তুলে ধরতে বিশ্বব্যাপী ভ্রমণে যারা আগ্রহী তাদের সঙ্গে ভষ্যিতেও তিনি অংশগ্রহণের আশা পোষণ করেন। তিনি তার দুই বন্ধুর কথাও তুলে ধরেন। যাদের মধ্যে একজন হেঁটে মক্কা ভ্রমণ করেন। তার ভাষায়,
‘আমার একজন স্প্যানিশ বন্ধু আছে, যিনি দুই বছর আগে প্যারিস থেকে হেঁটে পবিত্র নগরী মক্কায় গিয়েছিলেন। তাদের আরেকজন প্রিয় চাইনিজ বন্ধু রয়েছেন, যিনি প্যারিসে বেড়ে উঠেছেন এবং তিনিও ইসলাম গ্রহণ করেন। তারা সবাই একত্রে পবিত্র মক্কা নগরী ভ্রমণেরও পরিকল্পনা করছেন। হতে পারে তা হেঁটে কিংবা বাইসাইকেলে। তবে ভ্রমণের মাধ্যমটা এখনও ঠিক হয়নি।
তার আশা, বিশ্বের প্রতিটি দেশ, অঞ্চলের তরুণ ও যুবকদের নিয়ে হেঁটে কিংবা সাইকেলে মক্কা ভ্রমণের ২০ সদস্যের একটি গ্রুপ তৈরি করা। যারা দীর্ঘ ভ্রমণের যাত্রা পথে ইসলাম ও মুসলমানের শান্তির বার্তা তুলে ধরবে।