পিছিয়ে গেলো রোহিঙ্গাদের ৬ষ্ঠ দফার স্থানান্তর কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা শিবির থেকে ষষ্ঠ দফায় নোয়াখালীর ভাসানচর যাচ্ছে চার হাজার ২৭১ জন রোহিঙ্গা। তবে এদের মধ্যে প্রথম দলের দুই হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বুধবার (৩১ মার্চ) নোয়াখালীর ভাসানচরে নিয়ে যাওয়ার সব প্রস্তুতি থাকলেও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে তা বাতিল করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নৌবাহিনীর লে. কমান্ডার শামীম বাংলানিউজকে জানান, সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন আছে। আবহাওয়া খারাপ তাই আজ যাত্রা করা হয়নি।
আমরা স্ট্যান্ডবাই আছি, আবহাওয়া ভালো হলেই যেকোনো সময় যাত্রা শুরু করা হবে।
এর আগে মঙ্গলবার ২ হাজার ৫৫০ জন এবং বুধবার (৩১ মার্চ) এক হাজার ৭১৬ সহ দুই দিনে মোট ৪ হাজার ২৭১ জন রোহিঙ্গাকে কক্সবাজারের উখিয়া ট্রানজিট ক্যাম্প থেকে ভাসানচরের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম নেওয়া হয়েছে।
সেখানে তারা চট্টগ্রামে বিএএফ শাহীন কলেজের অস্থায়ী ট্রানজিট ক্যাম্পে আছে। সেখান থেকে আবহাওয়া ভালো হলে ভাসানচর নিয়ে যাওয়া হবে।
রোহিঙ্গাদের একটি সূত্র জানায়, ষষ্ঠ দফায় যারা ভাসানচর যাচ্ছে তাদের মধ্যে প্রায় ৪৯৭ জন রোহিঙ্গা গত ২২ মার্চ উখিয়ার বালুখালীর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে লাগা ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত।
ভাসানচরগামী ক্যাম্প৮-ডব্লিউ এর এফ ব্লকের বাসিন্দা রোহিঙ্গা নুর মোহাম্মদ জানান, ‘আর মও টেলিফোন গরি জানাইয়ে ইতারা ঠেঙ্গারচরত ভালা আছে, অইনত মাঝে আর গর পুরি গিইয়ু আরাও এহন এডে যাইর গই’ (আমার মামা ফোনে জানিয়েছে ভাসানচরে তারা ভালো আছে, আগুনে আমার ঘর পুড়ে গেছে, আমরাও এখন সেখানে যাচ্ছি)।
অতিরিক্ত ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার শামসুদ্দৌজা নয়ন বাংলানিউজকে জানান, এ পর্যন্ত পাঁচ দফায় প্রায় ১৪ হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচর স্থানান্তর করা হয়েছে। ষষ্ঠ দফাসহ এ সংখ্যা দাঁড়াবে ১৮ হাজারের বেশি।
এর আগে পাঁচ দফায় কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী শিবির থেকে প্রায় ১৪ হাজার রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়।
এরমধ্যে ২০ সালের ৪ ডিসেম্বর প্রথম দফায় ১ হাজার ৬৪২ জনকে, ২৯ ডিসেম্বর ১ হাজার ৮০৪ জন, চলতি বছরের ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি তৃতীয় দফার ৩ হাজার ২৪২ জন, ১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারি চতুর্থ দফায় ৩ হাজার ১৮ জন, পঞ্চম দফায় ৩ ও ৪ মার্চ ৪ হাজার ২১ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচর স্থানান্তর করা হয়েছে।
এছাড়া অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা ৩০৬ জন রোহিঙ্গাকে গত মে মাসে ভাসানচরে নিয়ে যায় সরকার, তারাও সেখানে রয়েছেন। দ্বীপেও বেশ কিছু শিশুর জন্ম হয়েছে বলে জানা যায়।
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হত্যা ও নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট পর থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা। এছাড়া নতুন-পুরনো মিলে বর্তমানে ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের পাহাড়ি এলাকায় শিবিরগুলোতে ঘিঞ্জি পরিবেশে বসবাস করছেন। শরণার্থীদের চাপ কমাতে দুই বছর আগে অন্তত এক লাখ রোহিঙ্গাকে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার।
সরকারের তথ্য অনুযায়ী, রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের জন্য নিজস্ব তহবিল থেকে তিন হাজার ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ভাসানচর আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে এক লাখ রোহিঙ্গা বসবাসের উপযোগী ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।
ভাসানচরের পুরো আবাসন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনী।