নারীদের সুস্বাস্থ্যের প্রধান লক্ষণ।
তবে বেশিরভাগ নারী পিরিয়ডের সঙ্গে বেশ কিছু শারীরিক অসস্থির সম্মুখীন হন। পেশীতে ব্যথাভাব দেখা দেওয়া, জ্বর জ্বরভাব, তলপেটে ব্যথা, পেটে ফাঁপাভাব ও মুড সুইং সহ নানান ধরণের উপসর্গ দেখা দেয়।
এই সকল উপসর্গে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। পিরিয়ডের ফলে হরমোনের তারতম্য আসে। যা থেকে দেখা দেয় নানান ধরণের শারীরিক সমস্যা। দারুণ বিষয় হলো, ৪-৫ দিনের কষ্টকর এই সময়কে নিজের আয়ত্ত্ব আনা সম্ভব খাদ্যাভাসকে নিয়ন্ত্রণে রাখার মাধ্যমে। সঠিক খাদ্যাভাস ও কিছু খাদ্য উপাদান এড়িয়ে চললে পিরিয়ডের আগের সময় ও পিরিয়ড চলাকালীন সময়ে তুলনামূলক সুস্থ থাকা যাবে অনেকটা।
পিরিয়ডের সাথে খাদ্যাভাস কেন সম্পর্কিত?
শুধু খাদ্যাভাস নয়, পর্যাপ্ত পানি পান, ঘুম ও শরীরচর্চা পিরিয়ড সময়কালীন সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। পিরিয়ডের উপসর্গ সমূহের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে সবুজ শাক, ডিম, কাজুবাদাম, সাইট্রাস ফল, স্ট্রবেরি সহ প্রভৃতি। প্রাকৃতিক মিনারেল তথা ভিটামিন-বি ও সি পিরিয়ডের সময়ে খুব চমৎকার ঔষধি উপাদান হিসেবে কাজ করে। উপকারী খাবার যেমন পিরিয়ডের সময়ে স্বস্তি দেয়, একইভাবে ক্ষতিকর খাদ্য বাড়িয়ে দেয় পিরিয়ডের অসস্থি।
পিরিয়ডের সময়ে কোন খাবারগুলো এড়িয়ে যেতে হবে?
যেভাবে উপকারী খাবার গ্রহণ পিরিয়ডের যন্ত্রনাকে লাঘব করতে সাহায্য করে, ঠিক সেভাবেই ক্ষতিকর খাবার পিরিয়ডকে যন্ত্রনাদায়ক করে তোলে। জেনে নিন কোন খাবারগুলো এই সময়ে এড়িয়ে চলা প্রয়োজন।
রিফাইন্ড খাবার
প্রায় সকল রিফাইন্ড খাবার তৈরি করা হয় সিম্পল কার্বোহাইড্রেট থেকে। যা খুব দ্রুত বার্ণ হয়। ফলে দেখা দেয় ক্ষুধাভাব। এতে করে শরীর এনার্জি হারায়। এছাড়া বেশীরভাগ রিফাইন্ড খাবারে থাকে চিনি। যা মুড সুইংকে ত্বরান্বিত করে। রিফাইন্ড খাবারগুলো হলো- সাদা আটা, পাস্তা, প্যাকেটজাত চিপস, সিরিয়াল ইত্যাদি।
ফ্যাটি ও ফ্রাইড খাবার
পিরিয়ডের সময়ে অনেকের শরীরে প্রদাহ দেখা দেয়। যার সাথে যকৃতের সি-রিঅ্যাকটিভ প্রোটিন (CRP) এর মাত্রার সংযোগ আছে। গবেষণা থেকে দেখা গেছে- যে সকল মধ্যবয়ষ্ক নারীর যকৃতে সিআরপির মাত্রা ২৬-৪১ শতাংসের বেশি থাকে, পিরিয়ডের সময়ে পেট ব্যথা, পিঠে ব্যথা, ওজন বেড়ে যাওয়া সহ নানান ধরণের উপসর্গ তাদের মাঝে বেশি দেখা যায়। শুধু মধ্যবয়ষ্ক নারীর ক্ষেত্রেই এমন প্রভাব দেখা দেয় তা কিন্তু নয়। প্রদাহ ও ব্যথাভাব তৈরি হওয়ার মতো উপসর্গগুলো যে কারোর ক্ষেত্রেই দেখা দিতে পারে। যে কারণে ডিপ ফ্রাইড খাবার যেমন: সমুচা, সিঙ্গারা, অনিয়ন রিংস, ফ্রেন্স ফ্রাই; রেড মিট তথা গরু ও খাসির মাংস; পনির ও অন্যান্য দুগ্ধজাত খাদ্য এড়িয়ে চলতে হবে।
মিষ্টি জাতীয় খাবার
পিরিয়ডের সময়ে মুড সুইং করা (মন-মেজাজ ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন হওয়া) ও মানসিক দুশ্চিন্তায় ভোগার সমস্যা খুবই সাধারণ। এ সময়ে মিষ্টি জাতীয় খাবার এই সমস্যাগুলো আরো বাড়িয়ে দেয়। এছাড়া মিষ্টি খাবার রক্তে চিনির মাত্রা তাৎক্ষণিকভাবে বাড়িয়ে দেয়। যা কিছু সময় পরেই অনেক নিচে নেমে যায়। এর ফলে সমস্যা আরো বৃদ্ধি পায়। তাই পিরিয়ডের সময়ে মিষ্টি খাবার খাওয়ার ইচ্ছা যতই প্রবল হোক না কেন, চকলেট, ক্যান্ডি, কেক, ডোনাট, বিস্কুট খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
ক্যাফেইন
তালিকায় এই নামটি দেখে অনেকেই হয়তো বিরক্ত হবেন। এটা সত্যি, কফি এনার্জি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। আবার অন্যদিকে পিরিয়ডের সময়ে কফি পানের ফলে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের নিঃসরণ বেড়ে যায়। ফলে মানসিক চাপ ও মুড সুইং এর মাত্রা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া ঘুমেও ব্যঘাত ঘটে। তাই চেষ্টা করতে হবে মাসের এই কয়েকটা দিন ক্যাফেইন তথা কফি, চা, চকলেট, কফি ফ্লেভার্ড ক্যান্ডিকে দূরে রাখার।
লবনাক্ত খাবার
পিরিয়ডের সময়ে অনেকেই মুখে কিংবা হাত পায়ে পানি আসার অভিযোগ করেন। এই সমস্যাটি অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব লবনাক্ত কিংবা অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার এড়িয়ে গিয়ে। বেশি লবণযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে শরীরে ফ্লুইডের মাত্রায় ব্যাঘাত ঘটে, যার ফলেই মূলত পানি আসার সমস্যা তৈরি হয়। এছাড়া উচ্চরক্ত চাপের সমস্যা তো আছেই। তাই চেষ্টা করতে হবে প্যাজেকজাত খাদ্য (এ ধরণের খাবার অতিরিক্ত লবণ ব্যবহার করা হয়), আচার, সয়া সস ও সয়া সসযুক্ত খাবার ও ক্যানড খাবার এড়িয়ে যাওয়ার।
এতোক্ষণে নিশ্চয় বুঝতে পারছেন কেন পিরিয়ডের সময়ে খাদ্যাভাস নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন। সামান্য সচেতনতাই নিজেকে ভালো রাখবে অনেকটা। বার্তা ২৪
পাঠকের মতামত