ঘটনাটি ২০১৮ সালের। গেল বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে প্রেমিকার পরিচয়ে চিত্রনায়িকা সিমলাকে প্রথম নিজের বাড়িতে নিয়ে বাবা মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় চট্টগ্রামে নিহত পলাশ আহমেদ। এরপর দুই মাস বাদেই ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে আবারো সিমলাকে বাড়িতে নিয়ে যায় পলাশ। নিজের বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যদের জানায়, তারা (পলাশ ও সিমলা) বিয়ে করেছেন। সিমলা নিজেও বিয়ের কথা স্বীকার করেছিলেন পলাশের বাবার কাছে।
সোমবার সকালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার পিরিজপুর ইউনিয়নের দুধঘাটা গ্রামে বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টার পর নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে নিহত পলাশ আহমেদের বাড়িতে তার বাবা পিয়ার জাহানের সাথে নয়াদিগন্তের কথা হয়।
এসময় নিহত পলাশের বাবা পিয়ার জাহান জানান,‘২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সিমলা নামে এক মেয়েকে রাতের বেলা বাড়িতে নিয়ে আসে পলাশ। মেয়েটিকে চিত্রনায়িকা ও তার প্রেমিকা বলে আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। দুই মাস পর এপ্রিল মাসে আবার সিমলাকে বাড়িতে নিয়ে এসে বিবাহিত স্ত্রী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয় পলাশ। বিয়ের কথা সিমলাও আমাদের কাছে স্বীকার করে। এরপর ওই রাতেই তারা আবার ঢাকায় চলে যায়।’
তিনি আরো বলেন, সে সময় আমরা পুত্রবধূ সিমলাকে পারিবারিক অনেক বিষয় বোঝানোর চেষ্টা করেছি। সিমলাকে বলেছি– আমার ছেলেকে যেন সে ভালো পথে ফিরিয়ে আনে। কারণ ছোটবেলা থেকেই আমার ছেলেটি অবাধ্য ছিল। পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে বিদেশে থেকে আমার পাঠানো টাকা সে নানা পথে খরচ করেছে।
নিহত পলাশের বাবা পিয়ার জাহান জানান, সর্বশেষ ২০-২৫ দিন আগে বাড়িতে আসে পলাশ। বাড়িতে আসার পর তার আচরণে বিরাট পরিবর্তন দেখতে পাই। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া শুরু করে, মসজিদে গিয়ে আজানও দিয়েছে। সর্বশেষ শুক্রবার বাড়ি থেকে যাওয়ার আগে বলেছে, সে কাজের সন্ধানে দুবাই যাবে। রোববার চট্টগ্রামে বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় পলাশের মুত্যুর খবর ফেসবুকের মাধ্যমে তার পরিবার জানতে পারে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে সোনারগাঁও থানার এসআই আবুল কালাম আজাদ জানান, বিমান ছিনতাই চেষ্টার ঘটনায় নিহতের ছবি রোববার রাত ১টার দিকে দুধঘাটা গ্রামের পিয়ার জাহানের বাড়িতে নিয়ে দেখালে তারা ওই ছবি পলাশের বলে নিশ্চিত করেন।
বিমান ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত নিহতের নাম পরিচয় পাওয়া গেছে । তার নাম পলাশ আহমেদ । তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলায় দুধঘাটা। বাবার নাম পিয়ার জাহান। রোববার চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে বিমান ছিনতাইয়ের নাটকীয় ঘটনার পর প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায় থেকে সোমবার সকালে হাজির হয় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা । সকল তথ্য সংগ্রহ করতে এখনো কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দেশের শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থার অনেকেই।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, এলাকার সোনারগাঁ উপজেলার দুধঘাটার অনেকের ভাষ্য জানা যায়, বাবার একমাত্র ছেলে পলাশ আহমেদ স্থানীয় তাহরপুর মাদরাসা থেকে ২০১১ সালে দাখিল পাশ করার পর মাদরাসার নিয়ম নীতি রহস্যজনক কারণে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে শর্ট ফিল্মের সাথে জড়িয়ে পড়ে । এ থেকেই অনেক শর্ট ফিল্ম করলেও সাফল্যের মুখ দেখেনটি পলাশ। প্রকৃত নাম পলাশ হলেও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নাম ব্যবহার করে এলাকায় নায়ক নায়িকাদের নিয়ে বাড়ি আসতেন। এতে পরিবারে লোকজন পলাশ আহমেদের উপর প্রচণ্ডভাবে রাগান্বিত ছিল। গত শনিবার রাতে পলাশ নিজের মোবাল ফেলে বাড়ির সিমকার্ড ও মোবাইল নিয়ে দুবাই চলে যাচ্ছেন বলে বের হয়ে যান ।
সকালে পুলিশ প্রশাসনের অনেকেই বিমান ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত নিহত পলাশের বাড়ি উপস্থিত হলে টনক নড়ে দুধঘাটা এলাকার সকলেই ।
এলাকার রহিম মুন্সী নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, এই পলাশই বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন নামে পরিচয় দিতো। বাবা পিয়ার জাহান মুদি দোকানদার হলেও পলাশ নায়ক নায়িকাদের নিয়ে এলাকায় শো ডাউন করতো। তার চাল চলন ছিল রহস্যেঘেরা। নায়িকা শিমলার জন্য পরাশ ছিল পাগল। বাড়িতেও নায়িকা শিমলাকে বিয়ে করবে বলে জানাত। কিন্তু বাড়ির কেউ এ বিয়েতে রাজি ছিল না। নায়িকা শিমলা প্রায়ই সোনারগাঁয়ের দুধঘাটায় পরাশের বাড়িতে আসতো।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বিমান ছিনতাইয়ের ঘটনায় পলাশ আহমেদের বিষয়ে আমাদের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য দেয়া উচিৎ হবে না। ঢাকা থেকেই ব্রিফিং করা হবে।