উখিয়ার জালিয়া পালং ইউনিয়নের নিদানিয়া এলাকার খুরশিদা বেগম, বেশ কয়েকবছর আগে স্বামী সুপারি গাছ থেকে পড়ে মারা যান, স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে সন্তানদেরকে নিয়ে অভাব অনটনে দিন কাটে খুরশিদার।একদিন গভীর রাতে খুরশিদার বাড়িতে গিয়ে মোবাইল চুরির অভিযোগে খুরশিদাকে বাড়ি থেকে তুলে আনার চেষ্টা করে চৌকিদার জাহাঙ্গীর, সেদিনের ভয়ঙ্কর ঘটনা বর্ণননা করতেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন এ নারী। জালিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে চৌকিদার জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মানববন্ধনের কথা শোনে ছুটে আসেন তিনি ।
শুধু খুরশিদা নয়, এরকম অসংখ্য ভুক্তভোগী গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে জালিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে জড়ো হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধনে এক প্রবাসীও তাঁর বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে হয়রানীর অভিযোগ তুলে বক্তব্য দিয়েছেন।
ওই ভুক্তভোগী প্রবাসী জানান, তাঁর বাবার মৃত্যুর সনদ সংগ্রহ করতে গেলেও টাকা দাবি করেন জালিয়া পালং ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের গ্রাম পুলিশ জাহাঙ্গীর, টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় দীর্ঘদিন তিনি এই প্রবাসীর বাবার মৃত্যু সনদ দেয়নি। পরে ৭শ টাকা উৎকোচ নিয়ে মৃত্যু সনদ দেন জাহাঙ্গীর।
এছাড়াও অসংখ্য মানুষকে তিনি গ্রাম পুলিশের ক্ষমতা দেখিয়ে হয়রানি করতেন, ইউনিয়ন পরিষদের সেবা নিতে আসা নাগরিকদেরকেও টাকার জন্য হয়রানি করতেন জাহাঙ্গীর। শুধু হয়রানি নয়, টাকা নিয়ে তথ্য গোপন করে রোহিঙ্গাদেরকে ভোটারও করিয়েছেন গ্রাম পুলিশের এ সদস্য।
এদিকে জাহাঙ্গীর নিজের জন্মনিবন্ধন কেলেঙ্কারী করে গ্রাম পুলিশের চাকরিটা বাগিয়ে নেন। তাঁর জন্ম ১৯৮৫ সালে হলেও তথ্যগোপন ১৯৯৯ সালে জন্মতারিখ দেখিয়ে ভুয়া একটি জন্মনিবন্ধন করে গ্রাম পুলিশের চাকরিতে মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাগিয়ে নেন চাকরি।
এদিকে জালিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছৈয়দ আলম জানালেন তিনি নিয়মিত পরিষদে আসেন না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মাওলানা জালাল আহমেদ জানান, তাঁর অজান্তে গ্রাম পুলিশের সদস্য জাহাঙ্গীর ইউনিয়ন পরিষদে সেবা নিতে আসা নাগরিদেরকেও তিনি টাকার জন্য নানাভাবে হয়রানি করতেন।
এদিকে অতিষ্ঠ হয়ে এলাকাবাসি ও স্থানীয় ইউপি সদস্য গ্রাম পুলিশ জাহাঙ্গীরের অপসারণ চেয়ে চেয়ারমান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ দিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তানভীর হোসেন লিখিত অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে টিটিএন-কে জানান, জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে গ্রাম পুলিশের চাকরীর বিধি অনুযায়ী তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্প্রতি নারী কেলেঙ্কারীর ঘটনা নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হলে অভিযুক্ত গ্রাম পুলিশ জাহাঙ্গীর লাপাত্তা হয়ে যায়, মুঠোফোনে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর জানান, সোনারপাড়ার পরিষদ এলাকায় প্রবাসীর স্ত্রীর সাথে আপত্তিকর ভিডিওচিত্রের বিষয়টি সমাধানের পথে, এছাড়াও নিজের স্ত্রীকে নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করেন, এছাড়াও পরিষদে সেবা নিতে আসা নাগরিকদের কাছ থেকে টাকা দাবির বিষয়টিও তিনি অস্বীকার করেন।
এদিকে জাহাঙ্গীর লাপাত্তা হওয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে তাঁর ওয়ার্ডের চৌকিদারের কার্যক্রম, ভোগান্তিতে পড়েছেন পরিষদে সেবা নিতে আসা নাগরিকরা। তাই তাঁর বিরুদ্ধে আসা অভিযোগগুলো যাচাই করে তাঁকে দ্রুত অপসারণ করে নতুন কাউকে নিয়োগের দাবি জানান ভুক্তভোগীরা।