হিলি, সোনামসজিদ ও ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা ভারতের পেঁয়াজ দেশে ঢুকতে শুরু করেছে। সোমবার বিকাল পর্যন্ত এসব বন্দর দিয়ে ৭০টি ট্রাকে মোট এক হাজার ৭৯৭ টন পেঁয়াজ দেশে এসেছে। মহারাষ্ট্র থেকে ১২-২০ টাকা কেজিতে কেনা নাসিক পেঁয়াজ পরিবহণ ও শুল্ক দিয়ে পাইকারি বাজারে আনতে ৩৮ টাকা খরচ পড়ছে। যা রাজধানীর খুচরা বাজারে ৪০-৪৫ টাকায় বিক্রির টার্গেট করেছেন ব্যবসায়ীরা। এতে রাজধানীসহ সারা দেশে সর্বোচ্চ ১০০ টাকায় বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজের দাম এক লাফে কেজিতে ৩০ টাকা কমেছে। আর আজ (মঙ্গলবার) থেকে ভারতের পেঁয়াজ ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি করবে বিক্রেতারা। এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম আরেক দফা কমবে।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে সোমবার সকাল থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি বা আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) করেন আমদানিকারকরা। প্রথম দিন ২১০টি আইপি অনুমোদন করা হয়। এক্ষেত্রে প্রথম দিন দুই লাখ ৮০ হাজার ৮০০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সোমবার যুগান্তর ব্যুরো ও প্রতিনিধিরা জানান, বিকালের মধ্যে সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ৫৭টি ট্রাকে এক হাজার ৪৮২ টন, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে দুটি ট্রাকে ৪০ টন এবং ভোমরা স্থলবন্দর হয়ে ১১টি ট্রাকে ২৭৫ টন পেঁয়াজ ঢুকেছে। সব মিলে তিনটি স্থলবন্দর দিয়ে ৭০টি ট্রাকে মোট এক হাজার ৭৯৭ টন ভারতীয় পেঁয়াজ দেশের বাজারে এসেছে। রাজধানীর সর্ববৃহৎ পাইকারি আড়তের আমদানিকারক শংকর চন্দ্র দাস যুগান্তরকে বলেন, মহারাষ্ট্র থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১২ থেকে সর্বোচ্চ ২০ টাকায় কেনা হয়েছে। সেখান থেকে দেশের স্থলবন্দরে আসতে কেজিপ্রতি ছয় টাকা পরিবহণ খরচ পড়েছে। এর সঙ্গে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক ও ৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক দিয়ে এবং আড়তে আনতে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম দাঁড়াচ্ছে ৩৪ টাকা। এ ক্ষেত্রে পাইকারি পর্যায়ে আমদানি করা পেঁয়াজ ৩৮-৪০ টাকায় বিক্রি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৪৫ টাকায় বিক্রি হবে। তবে কয়েক দিনের জন্য শুল্ক প্রত্যাহার করলে ভোক্তা পর্যায়ে পেঁয়াজ ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি করা সম্ভব।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কৃষকের স্বার্থ বিবেচনা করে ১৫ মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রেখেছিল কৃষি মন্ত্রণালয়। অবশ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানিতে কোনো বিধিনিষেধ আরোপ করেনি। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আমদানিতে বাধা তৈরি করে রাখার কারণে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সুযোগ নিয়েছে। এক মাসে দেশি পেঁয়াজের দাম দ্বিগুণ বাড়িয়ে দেওয়ায় খুচরা বাজারে ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা এক মাস আগে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা ছিল। আর দেড় মাস আগে ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর ভারত থেকে আমদানির খবর শুনে পাইকারি ও খুচরা বাজারে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে কেজিতে ৩০ টাকা কমেছে।
রাজধানীর পাইকারি আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমবার প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ পাইকারি পর্যায়ে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা একদিন আগে ৯০ টাকা ছিল। আর রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা একদিন আগে সর্বোচ্চ ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, ভোক্তাকে স্বস্তি দিতে পেঁয়াজ আমদানি করে দাম কমানো ভালো উদ্যোগ। তবে সরবরাহ ঠিক থাকার পরও যারা পণ্যটির দাম নিয়ে কারসাজি করেছেন, তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা দরকার। তিনি জানান, দেশে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের কাছে যে পরিমাণে পেঁয়াজ ছিল তা দিয়ে আরও তিন থেকে চার মাসের চাহিদা মেটানো যেত। কিন্তু এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী কুরবানির ঈদ ঘিরে পণ্যটির দাম নিয়ে কারসাজি করে। সিন্ডিকেট করে বাড়িয়েছে দাম। অসাধুদের চিহ্নিত করলেও শাস্তির আওতায় আনা হয়নি।
দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, আমদানি শুরু হতেই দিনাজপুরের বাজারে এক দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম ৩০ টাকা কমেছে। হিলি স্থলবন্দরের আট আমদানিকারক ১৮ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি পেয়েছেন। হিলি স্থলবন্দরের বেসরকারি অপারেটর পানামা পোর্ট লিংক লিমিটেডের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন জানান, দুটি ট্রাকে ৪০ মেট্রিক টন পেঁয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। নাজমুল হোসেন এ পেঁয়াজ আমদানি করেন।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীতে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। কেজিতে ৩০ টাকা কমে ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ৫৭টি ট্রাকে এক হাজার ৪৮২ টন পেঁয়াজ দেশের বাজারে ঢুকেছে। আর ৩০০টি ট্রাক ওপারে অপেক্ষায় আছে। এছাড়া ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ১১টি ট্রাকে এ পর্যন্ত ২৭৫ টন পেঁয়াজ দেশের বাজারে ঢুকেছে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, আমদানির খবরে দেশের বৃহৎ ভোগ্যপণ্যের বাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। এক রাতের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে কেজিপ্রতি পেঁয়াজের দাম কমেছে ৩০ টাকার মতো। ভালো মানের পেঁয়াজ ৬০-৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর নিুমানের পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েনি। খুচরা বাজারে আগের মতোই ৯০ টাকার কাছাকাছি দামে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা বলছেন, আমদানির অনুমতি প্রদানের খবরে পেঁয়াজ বিক্রি অনেকটা কমে গেছে।