ইমরান হোসাইন, পেকুয়া.
পেকুয়া উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় ‘রোয়ানু’ আক্রান্ত তিন উপকূলীয় ইউনিয়নে ত্রানের জন্য হাহাকার চলছে। ঘূর্ণিঝড় আক্রান্তের চার দিন অতিবাহিত হলেও এখানো পর্যাপ্ত পরিমানে ত্রাণ বরাদ্ধ দেওয়া হয়নি। ফলে অর্ধাহারে-অনাহারে অত্যন্ত মানবেতরভাবে দিনাতিপাত করছে উপকূলীয় তিন ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ। এখনো খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে অসংখ্য পরিবার।
পেকুয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী আজগর জানান, ইতিমধ্যেই পেকুয়ার জন্য পৃথকভাবে ২৯টন চাল ও নগদ ২০হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। পেকুয়ায় ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট সরকারী দফতরে প্রেরণ করা হয়েছে। উক্ত ক্ষয়ক্ষতির তালিকা ক্ষতিগ্রস্থ লোকের সংখ্যা ৪৩হাজার ৫০জন বলে উল্ল্যেখ করা হয়ে হয়েছে। সে হিসেবে বরাদ্ধকৃত ত্রাণসামগ্রী জনপ্রতি নগদ অর্থ ৪৬পয়সা ও ৬শ ৭৪গ্রাম খাদ্যশয্য(চাল) পেয়েছেন।
অন্যদিকে সরকারীভাবে বরাদ্দের ত্রাণ চাহিদার তুলনায় খুবই অপ্রতুল বলে দাবী করেছেন ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। গত ২১মে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র বিষাক্ত ছোবলে মূহুর্তের মধ্যেই লন্ডভন্ড হয়ে যায় পেকুয়ার তিন উপকূলীয় ইউনিয়ন মগনামা, রাজাখালী ও উজানটিয়া। এছাড়াও এ তিন ইউনিয়নের অসংখ্য মৎস্য ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গিয়ে স্থানীয় মৎস্যচাষীদের ক্ষতি হয়েছে অর্ধশত কোটি টাকা। উপজেলা প্রশাসনের হিসেব মতে শুধুমাত্র চিংড়ির ক্ষতি চৌদ্দ কোটি পঞ্চাশ লক্ষ টাকা।
সরেজমিনে মগনামা ইউনিয়ন পরিদর্শন করে দেখা গেছে, গত ২১মে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র ছোবলে ইউনিয়নের বাইন্যা ঘোনা, ধারিয়াখালী, মঘঘোনা, শরৎঘোনা, মুহুরী পাড়া, পশ্চিমকূল, কাকপাড়া, জালিয়াপাড়া, হারুন মাতবর পাড়াসহ আরো কয়েকটি গ্রামের শত শত কাচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে শরৎ ঘোনা গ্রাম। বেড়িবাঁধ সংস্কারে পাউবো ও তাদের নিযুক্ত দূর্নীতিবাজ ঠিকাদারের গাফিলতির কারনে শরৎ ঘোনার পশ্চিমে, পশ্চিমকূল, জালিয়া পাড়া ও কাকপাড়া পাড়া, চেপ্টাখালী পয়েন্টে পাউবোর ৬৪/২ পোল্ডারের বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে সাগরের জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে।
জানা গেছে, গত এক বছর পূর্বে মগনামা, রাজাখালী ও উজানটিয়া ইউনিয়নে বেড়িবাঁধ সংস্কারে প্রায় একশত কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। কিন্তু কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদার ও পাউবোর দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা কৌশলে সরকারী টাকা লুটপাট করতে যথাসময়ে কাজ বাস্তবায়ন করতে এগিয়ে আসেনি। গত ২২মে দুপুরে পাউবোর কক্সবাজার নির্বাহী প্রকৌশলী ক্ষতিগ্রস্থ মগনামা ইউনিয়ন পরিদর্শনের সময় জনরোষে পড়েন। এসময় স্থানীয় সাংসদ হাজী মুহাম্মদ ইলিয়াছও উপস্থিত ছিলেন।
পাউবোর গাফিলতি ও কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদারের চরম অবহেলায় মগনামা, রাজাখালী ও উজানটিয়া ইউনিয়নের প্রায় ৩০হাজার মানুষের ভাগ্য আজ সাগরের লোনা জলের জোয়ার-ভাটার সাথে মিশে গেছে। অপরদিকে এ তিন ইউনিয়নের লবণচাষীদেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। লবণ মাঠের উপর মজুদ করে রাখা শত শত মণ কাচা লবণ জলোজ্বাসে ও জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে। উপজেলা প্রশাসনের হিসেব মতে শুধুমাত্র লবণে ক্ষয়ক্ষতি ৪০কোটি ৫০লক্ষ টাকা।
পেকুয়া উপজেলা প্রশাসনের প্রস্তুতকৃত ক্ষয়ক্ষতির সরকারী হিসেবে দেখা গেছে, গত ২১মে ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু’র ছোবলে পেকুয়া উপজেলার মগনামা, রাজাখালী ও উজানটিয়া ইউনিয়নের প্রায় আট হাজার পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ তিন ইউনিয়নে প্রায় দুই হাজার বাড়ীঘর বিধ্বস্থ হয়েছে। এছাড়াও ১২৩একর জমির ফসলাদির ক্ষতি হয়েছে। তিন ইউনিয়নে ৭১০একর লবণ চাষের জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ২০টি শিক্ষা প্রতিষ্টানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গ্রামীন সড়ক ব্যবস্থারও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ২৪ কিলোমিটার পাকা সড়কসহ ৫০কিলোমিটার সড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
পেকুয়া উপজেলার মগনামা ও রাজাখালী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন অভিযোগ করেছেন, ঘূর্ণিঝড় আক্রান্তের তিন দিন পেরিয়ে গেলেও কোন বেসরকারী এনজিও সংস্থা এলাকায় ত্রাণ বিতরণ তো দূরের কথা সরেজমিনে এলাকায় পরির্দশন করতে আসেনি। এনজিও সংস্থাদের এহেন ভূমিকায় স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। অথচ পেকুয়া উপজেলায় প্রায় অর্ধ শতাধিক এনজিও কথিত সামাজিক ব্যবসার আড়ালে জমজমাট সুদের ব্যবসার মাধ্যমে এ অঞ্চলের দরিদ্র লোকজনের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দূর্যোগ, বন্যা ও ঘূর্নিঝড় আক্রান্তের পর এলাকায় দূর্গত মানুষের সহায়তায় তাদের দেখা মেলেনা !