ডেস্ক রিপোর্ট::
ভারতের প্রখ্যাত আরবি সাহিত্যিক, লেখক, গবেষক, সাংবাদিক ও বহু গ্রন্থপ্রণেতা আল্লামা সাইয়েদ মুহাম্মাদ ওয়াজেহ রশিদ হাসানি নদভি আজ ভোরে ইন্তেকাল করেছেন। তিনি ইসলামী শিক্ষাঙ্গনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন।
ড. মাওলানা ওয়াজেহ রশিদ নদভি ১৯৩২ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশস্থ রায়বেরেলির তাকিয়া কিলানের সম্ভ্রান্ত ও অভিজাত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। ধর্মীয় ঐতিহ্য ও আল্লাহভীতির এক প্রবাদতূল্য তার পরিবার ও বংশ। শৈশবে বিশ্ববরণ্য দাঈ আল্লামা সাইয়েদ আবুল হাসান আলি নদবি (রহ.)-এর স্নেহ-মমতায় তিনি গড়ে উঠেন। মামা হওয়ার সুবাদে খুব কাছ থেকেই ক্ষণজম্মা মহাপুরুষের সান্নিধ্যে কাটে তার শৈশব-কৈশোর। ইসলামী জাগরণ, ঈমানি চেতনাবোধ, শিক্ষা-সংস্কৃতি, চিন্তা-গবেষণা, মার্জিত রুচিবোধ, শৈল্পিক-মাধুর্যপূর্ণ ভাবনা, আরবি-উর্দু রচনাশৈলীতে ছিলেন আলি নদবির অবিকল নমুনা। ইংরেজিতেও ছিলেন আপন মহিমায় ভাস্বর।
প্রাথমিক শিক্ষা সম্পন্ন করেন পারিবারিকভাবেই। ইসলামী শিক্ষা ও আরবি ভাষা শিক্ষা লাভ করেন লখনউর দারুল উলুম নদওয়াতুল উলামায়। এরপর আলীগড় মুসলিম ইউনিভার্সটি থেকে ১৯৫২ সালে ইংরেজিতে অনার্স সম্পন্ন করেন।
অল ইন্ডিয়া রেডিওতে আরবি বিভাগের উপস্থাপক হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু হয়। সেখানে তিনি ১৯৫৩ থেকে ১৯৭৩ পর্যন্ত সুদীর্ঘ ২০ বছর যাবত কর্মরত ছিলেন। এ দীর্ঘ সময়ে তিনি অনুবাদ, ভাষাতত্ত্ব, পশ্চিমা সভ্যতা-সংস্কৃতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান লাভ করেন। পাশাপাশি সাংবাদিকতার জগতে ভিন্ন এক ধারা তৈরি করেন। ইউরোপ-এশিয়ার সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাস ও বিশ্লেষণে তুখোড় হয়ে উঠেন এক সময়।
১৯৭৩ সাল থেকে রেডিওর চাকরি ছেড়ে দারুল নদওয়াতুল উলামায় অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হোন। এসময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদেও ছিলেন তিনি। তাই বড় বড় বিভিন্ন দায়িত্বও পালন করেন। নদওয়ার আরবি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ডিন ও ইসলামী দাওয়া ইন্সটিটিউটের প্রধান হিসেবে কাজ করেন। এছাড়াও আরবি ও উর্দু ভাষায় গবেষণাধর্মী রচনাকর্মও অব্যাহত রাখেন। নদওয়াতুল উলামার ঐতিহ্যবাহী আরবি মাসিক পত্রিকা ‘আল বাসুল ইসলামি’- এর সহ-সম্পাদক হিসেবে অদ্যবধি দায়িত্বরত ছিলেন। মাসিক আরবি পত্রিকা ‘আর রায়িদ’-এর প্রধান সম্পাদক হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এতোদিন তার একান্ত তত্ত্বাবধানে নিয়মিত প্রকাশিত হতো নদওয়ার একমাত্র ইংরেজি পত্রিকা ‘The Fragrance of East’।
তিনি ‘রাবেতুল আদব আল ইসলামি আল আলমি’ (আন্তর্জাতিক ইসলামি সাহিত্য সংস্থা)-এর সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে আসছেন। লখনউর ‘আল মুজাম্মাউল ইসলামী আল ইলমি’ (ইসলামি গবেষণা একাডেমি)-এর সেক্রেটারি জেনারেলও ছিলেন তিনি।
ভারতের অন্যতম খ্যাতিমান শিক্ষাবিদ ড. আবদুল্লাহ আব্বাস (রহ.)-এর মৃত্যুর পর থেকে ধারাবাহিকভাবে দারুল উলুম নদওয়ার শিক্ষাবিভাগীয় প্রধান হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। শিল্প-সাহিত্য, সভ্যতা-সংস্কৃতি, শিক্ষা ও সাংবাদিকতা, ইতিহাস ও জীবনীমূলক আরবী-উর্দু ভাষায় অনেক মৌলিক ও অনূদিত গ্রন্থ রয়েছে তার। তার প্রতিটি গ্রন্থ একটির চেয়ে অপরটি সেরা।
তার উল্লেখযোগ্য কিছু গ্রন্থ হলো : ০১. তারিখুল আদাবিল আরবি। ০২. আদাবুস সাহওয়াহ আল-ইসলামিয়্যাহ। ০৩. হারকাতুত তালিমিল ইসলামি ফিল হিন্দি ও তাতাওউরুল মানহাজ। ০৪. আদ দাওয়াতুল ইসলামিয়্যাহ ও মিনহাজুহা ফিল হিন্দ। ০৫. মুখতাসারুল শামায়িলিন নববিয়্যাহ। ০৬. ইলা নিজামিন আলামিয়্যিন জাদিদিন। ০৭. আল ইমাম আহমদ বিন ইরফান আশ শহিদ। ০৮. মিন সানায়াতিল মাওতি ইলা সানায়াতিল কারারাত। ৯- আ-লামুল আদাবিল আরবি ফিল আসরিল হাদিস। ১০. আশ-শাইখ আবুল হাসান নদবি কায়িদান হাকিমান। ১১. মাসাদিরুল আদাব আল-আরাবি।