সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতিমা বিসর্জন, সাপ্তাহিক ছুটি ও ঈদে মিলাদুন্নবী (স:) এর টানা ছুটি উপলক্ষে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে লাখো মানুষের ঢল নেমেছে।
বুধবার (৫ অক্টোবর) বিকেলে সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা শেষ হয়। শেষদিনে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আয়োজন সমুদ্র সৈকতে প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান। এতে পূজারীরা বিসর্জনের মাধ্যমে পূজার আনুষ্ঠানিক বিদায় দেন।
তবে হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশাপাশি দেবী দুর্গার এ বিসর্জনে দেখা গেছে দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ সব সম্প্রদায়ের মানুষকে।
বুধবার (৫ অক্টোবর) শারদীয় দুর্গাপূজার শেষ দিন বিজয়া দশমীতে সৈকতের লাবণি পয়েন্টে দেবী দুর্গাকে বিসর্জন দেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। অতীতের মতো এবারও ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালন করেছে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠানকে ঘিরে সৈকতের লাবণি পয়েন্টে বুধবার দুপুর ২টার পর থেকে জেলার কক্সবাজার সদর, উখিয়া, টেকনাফ, সদর, ঈদগাহ, চৌফলদন্ডী ছাড়াও নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে শোভাযাত্রা সহকারে প্রতিমা আসতে শুরু করে। প্রতিমায় ভরে যায় সমুদ্রসৈকতের অনুষ্ঠানস্থল। লাবণি পয়েন্টে বিকাল ৩টা থেকে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ। বিকাল প্রায় ৫টা পর্যন্ত সৈকতের বালুচরে রাখা দুর্গা প্রতিমা ঘিরে চলে ভক্তদের শেষ আরাধনা। শুধু তাই নয়, নাচে-গানে এক অন্যরকম আনন্দমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয় বিশ্বের দীর্ঘতম এ সৈকতে। অনুষ্ঠানকে ঘিরে সমাগম ঘটে পর্যটকসহ জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লাখো মানুষের।
আয়োজকরা জানান, শুধু সৈকতের লাবণি পয়েন্টে বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা শতাধিক প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে। একই সময়ে কক্সবাজারের রামুর বাঁকখাল নদী, চকরিয়ার মাতামুহুরী, টেকনাফের সাগর ও নাফনদী, উখিয়ার ইনানী সৈকত এবং রেজুনদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে। রামু ও চকরিয়ায় পৃথক প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে সৈকতের লাবণি পয়েন্টের উন্মুক্ত মঞ্চে শুরু হয় বিসর্জনের আনুষ্ঠানিকতা। কক্সবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি উজ্জল করের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক বেন্টু দাশের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, শিক্ষা উপমন্ত্রী আলহাজ্ব মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি। বিশেষ অতিথি ছিলেন-কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক এড. সিরাজুল মোস্তফা, জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ, পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম ও র্যাব ১৫ এর অধিনায়ক খায়রুল ইসলাম সরকার।
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌর মেয়র মো: মুজিবুর রহমান।
জেলা পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বেন্টু দাশ জানান, এ বছর জেলায় ৩০৫টি মণ্ডপে পূজা উদযাপন হয়েছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়েছে কক্সবাজার সৈকতে।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি উজ্জল কর জানান, দেশের সবচেয়ে বড় প্রতিমা বিসর্জন অনুষ্ঠান এটি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছরও এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ লাখো মানুষের সমাগম হয়েছে। গত বছর করোনা মহামারির কারণে এই উৎসবটি ব্যাপকভাবে পালন করা সম্ভব হয়নি।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুল ইসলাম জানান, তিন স্তরে নিরাপত্তা জোরদারের মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গোৎসব শেষ হয়েছে। শুধু সৈকত এলাকায় প্রায় কয়েকশ ফোর্স মোতায়েন করা হয়। যানজট নিরসনে সৈকতের কলাতলী থেকে আশপাশের সড়কগুলোতে ট্রাফিক পুলিশের বিশেষ ব্যবস্থা রাখা হয়।
এদিকে সাপ্তাহিক ও পূজার ছুটি এবার একই দিনে পড়েছে। তাই কেউ পূজা উপলক্ষে, কেউ সপ্তাহ শেষে অবসর কাটাতে জড়ো হয়েছেন সৈকতে। বুধবার সকাল থেকে পর্যটকের ঢল নামে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে।
কলাতলী, সুগন্ধা ও লাবণী পয়েন্টে হাজার হাজার পর্যটক দেখা গেছে।
শহরের বিভিন্ন রাস্তায়ও ভিড় রয়েছে। রীতিমতো দেখা দিয়েছে যানবাহন সংকট। গণপরিবহণগুলো পর্যটকদের রিজার্ভভাড়া ধরতে গিয়ে স্থানীয়দের এড়িয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ প্রতিনিয়ত।
পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, টানা কয়েকদিনের ছুটিতে কয়েক শত কোটি ব্যবসা হতে পারে বলে আশা করছেন। পর্যটক আগমনে খুশি হোটেল ব্যবসায়ীরা।
হোটেল মোটেল মালিক সমিতি জানিয়েছেন, অক্টোবরের শুরু থেকে পর্যটক আগমণ ভালো দেখা দিয়েছে। সব হোটেলে প্রায় বুকিং হয়েছে। যেহেতু পর্যটন মৌসুম শুরু হয়েছে তাই এখন পছন্দ ভীড় হবে।
কক্সবাজার শালিক রেস্তোরাঁর মালিক নাছির উদ্দীন জানান, সকাল থেকে পর্যটকের সমাগম দেখা যাচ্ছে। অন্যদিনের চেয়ে আজ পর্যটকের চাপ বেশি। আশা করি এই চাপ আগামী ছুটিরদিন পর্যন্ত থাকবে।
ট্যুর অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশন এর সভাপতি রেজাউল করিম জানান, টানা কয়েকদিনের ছুটিতে লাখো পর্যটকের সমাগম এটা প্রতিবছর হয় তবে এবার পূজার বন্ধ একসাথে হওয়ায় আরো বেশি আসছে মানুষ। তিনি সেন্টমার্টিন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে দাবি করে বলেন, প্রতিবছর সহজে অল্পখরচে পর্যটকরা টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যায় কিন্তু এবছর একটি চক্রের হাতে জীম্মি হয়ে পর্যটকরা সেন্টমার্টিন যেতে পারবে না।
ঢাকার সাভার থেকে বেড়াতে আসা মনজুর-আফ্রিন দম্পতি জানান, কক্সবাজারে বিয়ের প্রথম আসছি। আসলে প্রাণ প্রকৃতি ও আল্লাহর অপরূপ দৃশ্য অবলোকন করতে সমুদ্র শহরে আসা দরকার। তবে তারা পরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্য তদারকি করতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান।
পাঁচ তারকামানের হোটেল কক্স-টুডের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার আবু তালেব জানান, দূর্গাপূজা ও সরকারী ছুটির কারনে কক্সবাজারে অনেক ভিআইপিরা এসেছেন। হোটেলে অনেক আগে থেকে প্রায় রুম বুকিং ছিল। সামনেও ভালো পর্যটক আসবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
হোটেল মোটেল মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, বিশ্ববাসীর নানারবাড়ি কক্সবাজারে পর্যটক ও স্থানীয় মানুষ প্রচুর আসছে। আগামী নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত ছুটি ছাড়াও প্রচুর পর্যটক আসবে।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মো: মুজিবুর রহমান বলেন, টানা কয়েকদিনের ছুটিতে ৩ লাখ পর্যটকের সমাগম হবে। পৌরসভার পক্ষ থেকে পর্যটদের নিরাপত্তার জন্য কাজ করা হচ্ছে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো: জিল্লুর রহমান বরেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ সবসময় প্রস্তুত। প্রতিটি পয়েন্টে সাদা পোশাকে কাজ করছে পুলিশ। পর্যটকদের সুবিধার জন্য সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট ট্যুরিষ্ট পুলিশের হেল্প ডেক্স বসানো হয়েছে। কোন মানুষ যাতে হয়রানী না হয় সেটাই পুলিশ বাহিনীর লক্ষ্য।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো: মামুনুর রশীদ বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতিমা বিসর্জন এবং সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে মোট ৫ দিনের ছুটি উপলক্ষে বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে লাখো মানুষের ঢল নেমেছে। এছাড়া ছুটি না হলেও পর্যটন মৌসুমে কক্সবাজারে হাজার হাজার পর্যটক আসবে।
প্রতিমা বিসর্জনে ও পর্যটক নিরাপত্তার জন্য সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়। পুলিশের পাশাপাশি জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারাও কাজ করছে। এ পর্যন্ত কক্সবাজারে কোন বিশৃংখলা দেখা যায়নি।
ছৈয়দ আলম, কক্সবাজার
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির (আইবিবিএল) চেয়ারম্যান ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেছেন, ২০১৭ সালের পর থেকে ...
পাঠকের মতামত