৪৮০ রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই শেষে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদল কক্সবাজারের টেকনাফ ছেড়েছেন।
বুধবার সকালে প্রতিনিধিদলটি কাঠের ট্রলারে চড়ে টেকনাফ থেকে রাখাইন রাজ্যের মংডুতে ফিরে গেছেন। এর আগে গত সাত দিনে ১৭৭ পরিবারের ৪৮০ জন রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই সম্পন্ন করেছে প্রতিনিধিদলটি।
কিন্তু রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কিংবা টেকনাফে এসে রোহিঙ্গা তথ্য যাচাই নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।
তবে প্রত্যাবাসন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন রোহিঙ্গারা। তাঁদের দাবি, শিগগিরই প্রত্যাবাসন শুরুর মতো কোনো পরিবেশ তৈরি হয়নি।
গত সাত দিনে মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের মুখোমুখি হয়েছে টেকনাফের শানবন, জাদিমোরা ও লেদা আশ্রয়শিবিরের অন্তত ১৫২ জন রোহিঙ্গা। এর মধ্যে একাধিক রোহিঙ্গা ধারণা করছেন, শিগগিরই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হবে না।
কারণ, প্রত্যাবাসন শুরু করার মতো পরিবেশ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নেই।
কয়েকজন রোহিঙ্গা নেতা বলেন,চীনের চাপে মিয়ানমার প্রত্যাবাসন শুরু করার জন্য অল্পসংখ্যক রোহিঙ্গার তথ্য যাচাই করতে টেকনাফে প্রতিনিধিদল পাঠালেও এর সঙ্গে ইউএনএইচসিআরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
এ ছাড়া কয়েক দিন আগে ইউএনএইচসিআর বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য অনুকূল নয়। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে জোর করে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো হলে বিশ্বব্যাপী প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হবে।মঙ্গলবার টেকনাফ স্থলবন্দরের মালঞ্চ সম্মেলনকক্ষে মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের কাছে সাক্ষাৎ দেন ১৮ পরিবারের ২৭ জন রোহিঙ্গা।
তাঁদের একজন নজির আহমদ (৪৪) বলেন, কমিটির সদস্যরা জানতে চেয়েছিলেন—তাঁর বাড়ি রাখাইন রাজ্যের কোন গ্রামে, সেখানকার ইউপি চেয়ারম্যানের নাম কী, রাখাইনে থাকতে পরিবারে কয়জন সন্তান ছিল, বাংলাদেশের আশ্রয়শিবিরে কতজন সন্তান জন্ম নিয়েছে, মিয়ানমারে ফিরতে রাজি কি না?
সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া শেষে কাগজে স্বাক্ষর অথবা টিপসই নেওয়া হয়। কমিটির সদস্যরা তাঁদের ছবিও তুলেছেন। তবে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা রোহিঙ্গাদের কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি বলে দাবি করেন তিনি।
টেকনাফের জাদিমোরা আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা গফুর আলম (৫১) বলেন, সাক্ষাৎকারটি তাঁর কাছে লোকদেখানো মনে হচ্ছে। আগামী ২৪ এপ্রিল আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের জান্তা সরকারের গণহত্যা মামলায় বক্তব্য উপস্থাপন করার কথা রয়েছে।
এর আগে কয়েক শ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ থেকে রাখাইন রাজ্যে ফিরিয়ে নিয়ে গণহত্যার মতো বর্বর ঘটনাকে ভিন্ন খাতে নেওয়া চক্রান্ত চলছে।
রোহিঙ্গারা কাউকে এই সুযোগ নিতে দেবে না। আগে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিতে হবে, তারপর রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফিরে যাবে। রাখাইন রাজ্যের কোনো আশ্রয়শিবিরে বন্দিজীবন কাটাতে রাজি নন তাঁরা।
তবে রোহিঙ্গা তথ্য যাচাইয়ের এই উদ্যোগ বিফলে যাবে না, জানিয়ে আরআরআরসি মিজানুর রহমান বলেন, ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের বিষয়টি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা না। একবার প্রত্যাবাসন শুরু হলে, একটা সময় সবাইকে ফিরে যেতে হবে। তবে প্রত্যাবাসন হতে হবে সম্মানের সঙ্গে স্বেচ্ছায় এবং টেকসইমূলকভাবে। ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের সুযোগ নেই।
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছেন ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর, দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর নিপীড়নের মুখে। তবে দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ বছরেও একজন রোহিঙ্গাকে মিয়ানমার ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।
পাঠকের মতামত