নিউজ ডেস্ক::
বন্যায় রাবেয়া-রবিউল দম্পতির মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু বন্যার বানের পানিতে ভেসে গেছে। তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে অতি কষ্টে দিনাতিপাত করছেন ওই পরিবারটি। তার ওপর হাতিবান্ধা সিংগীমারী ইউনিয়নের এনজিও ‘আশা’ থেকে লোন নেয়ায় তাদের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছেন না।
এদিকে ওইসব এনজিও’র লোকজনেরাও সমিতির কিস্তি পরিশোধের জন্য চাপ প্রয়োগ করছেন। রাবেয়ার মতো শত শত বানভাসি মানুষ বন্যা পরবর্তী কষ্টের পাশাপাশি এনজিও’র লোনের টাকা পরিশোধের চিন্তায় ব্যাকুল। লালমনিরহাট জেলার বানভাসি মানুষের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় তাদের দুঃখ-কষ্টের এমন চিত্র ফুটে ওঠেছে।
যখন সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ বানভাসি লোকজনদের ত্রাণ তৎপরতায় ব্যস্ত ঠিক তখন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ‘আশা’ নামের একটি এনজিও সরকারি বন্ধের দিনেও তাদের কিস্তি উত্তোলনে ব্যস্ত কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে।
গত ২৫ আগস্ট শুক্রবার সরেজমিন গেলে দেখা যায় ‘আশা’ এনজিও সংস্থার পাঁচজনের একটি দল দুটি উপদলে ভাগ হয়ে হাতিবান্ধার মিলন বাজার নামক স্থানে তাদের কিস্তি উত্তোলন করছে। এ সময় সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে তারা তাদের কথার সুর পরিবর্তন করে সাংবাদিকদের বলেন, তারা কিস্তি নয় ফিল্ড ভিজিটে এসেছেন। কিন্তু সাংবাদিকরা এর সত্যতা খুঁজতে যখন আশার কিস্তি উত্তোলনের বিভিন্ন স্থানে যান, তখন ফিল্ড ভিজিটের আসল চেহারা ফুটে ওঠে।
কিস্তি উত্তোলনের তথ্য সংগ্রহে হাতিবান্ধার সিংগীমারী ইউনিয়নের গোলাপ এবং স্বর্ণলতা নামের আশার দুটি ভিওতে (কিস্তি উত্তোলনের জায়গা) গেলে কথা হয় স্বর্ণলতা দলের সভানেত্রী মেহেনারার সাথে।
তিনি সাংবাদিকদের জানান, আমাদের ঘরবাড়িতে প্রচুর পানি উঠেছিলো, পেটে ভাত জোটাতে পারছি না অথচ ‘আশার’ ম্যানেজার কিস্তি না নিয়ে যাবেন না বলছে। মেহেনারা আরো জানায়, কেউ যদি মারা যায় শুধু সেদিন কিস্তি দেয়া না গেলেও অন্যদিন দিতে হবে। তা ছাড়া বন্যা, খরা, ঝড়ে সব কিছু লণ্ডভণ্ড হলেও তাদের কিস্তির কোনো মাফ নেই।
লালমনিরহাট জেলার সিংগিমারী, গুড্ডিমারী সানিয়াজানসহ আরো অনেক স্থানে আশার লোকজন বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে সদস্যদের হুমকি দিয়ে বলছে কোনো অবস্থাতেই তাদের কিস্তি মাফ করা যাবে না।
আশা এনজিওর গোলাপ দলের অন্যান্য সদস্যরা সাংবাদিকদের কাছে বলেন, ভাই আপনারা কনতো হামরা ছাওয়া-পোওয়া নিয়া বানোত ভাসি আছি, কেমন করি লোনের কিস্তি দেমো ওমাকে (আশা সমিতি)। তারপরও ওমরা লোনের কিস্তি ছাইরবার চাবার নাগছে।
এ ব্যাপারে ভুক্তভোগীরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
সরকারি বিধি নিষেধ এবং প্রধানমন্ত্রী আদেশ থাকা সত্বেও কেন কিস্তি উত্তোলন করছেন এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আশা’র হাতীবান্ধা শাখার বি এম (শাখা ব্যবস্থাপক) ফারুক হোসেন জানান, ভাই আমি ছোট চাকুরী করি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আদেশ পালন করি মাত্র।
আশার এরিয়া ম্যানেজার (আরএম) কামরুজ্জামানের সঙ্গে আলাপ হলে তিনি কিস্তি উত্তেলনের ব্যাপারে জানান, আমি স্টেশনে অবস্থান করছি। অফিসে না যাওয়া পর্যন্ত কিছু বলতে পারবো না।
আশার জেলা ম্যানেজারের (ডিএম) সাথে মোবাইলে (০১৭১৪০৮৮৭০৯) কথা হলে তিনি জানান, যদি আমার কোনো কর্মকর্তা এবং লোন অফিসার বন্যাদূর্গত এলাকায় কিস্তি উত্তোলনের সাথে জড়িত থাকেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো. শফিউল আরিফ মঙ্গলবার সকালে এ ব্যাপারে বলেন, আমি আশার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে কথা বলে দেখছি। কেন তারা বন্যাদূর্গত এলাকায় নিষেধ থাকা সত্বেও কিস্তি উত্তোলন করছে। বিভিন্ন এনজিওগুলোকে সরকারি নির্দেশনার চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, তারা যেন বন্যাদূর্গত এলাকায় বন্যাকবলিত লোকজনের নিকট থেকে কিস্তি আদায় না করে। তারপরেও যদি তারা করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে ভূক্তভোগীদেরকেও জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান।