উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেবেন। সে ভাষণে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী বৃহস্পতিবার (২০ সেপ্টেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবতা দেখানোয় প্রধানমন্ত্রী এবারের জাতিসংঘ সফরে দুটি পুরস্কার গ্রহণ করবেন। ইন্টার প্রেস সার্ভিস নিউজ এজেন্সি এবং গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশন পুরস্কার দেবে।
একই দিনে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিয় গুতেরেসের সঙ্গেও বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৩তম অধিবেশনে যোগ দিতে ৬ দিনের সরকারি সফরে নিউইয়র্ক যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।
সেখানে যাওয়ার পথে শুক্রবার (২১ সেপ্টেম্বর) লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন তিনি।
শুক্রবার সকালে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইট ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। একই দিনে লন্ডনের স্থানীয় সময় ৩টা ৫৫মিনিটে বিমানটির হিথরো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে।
যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার নাজমুল কাওনাইন প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাবেন। লন্ডনের দুদিনের যাত্রাবিরতির পর প্রধানমন্ত্রী রোববার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে নিউইয়র্কের পথে লন্ডন ত্যাগ করবেন।
বিমানটির ঐদিনই স্থানীয় সময় ১টা ৪০মিনিটে নিউ জার্সির নিউইয়র্ক লিবার্টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের কথা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মাদ জিয়াউদ্দিন এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানাবেন। বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা পর্ব শেষে মোটর শোভাযাত্রা সহযোগে প্রধানমন্ত্রীকে নিউ ইয়র্কের গ্রান্ড হায়াত হোটেলে নিয়ে যাওয়া হবে। যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে তিনি সেখানেই অবস্থান করবেন।
জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের বিরতিতে প্রধানমন্ত্রীর একাধিক বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের কথা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত সংবর্ধনায় যোগ দেবেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট মাইক পম্পেওর সঙ্গেও স্বাক্ষাৎ করবেন।
প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র সফরের প্রথম দিন সন্ধ্যায় নিউ ইয়র্কের মিডটাউনের হোটেল হিলটনে প্রবাসী বাংলাদেশি আয়োজিত এক সংবর্ধনায় যোগ দেবেন। সফরের দ্বিতীয় দিনে তিনি জাতিসংঘ সদর দফতরে জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী মিশনের আয়োজনে অনুষ্ঠেয় ‘গ্লোবাল কল টু অ্যাকশন অন ড্রাগ প্রবলেম’ শীর্ষক হাই লেভেল ইভেন্টে যোগদান করবেন।
প্রধানমন্ত্রী সেখানে জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিয় গুতেরেস এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে ট্রাম্পের সঙ্গে ফটোসেশনেও অংশগ্রহণ করবেন। পরে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ইকোসক চেম্বাররের (ইসিওএসওসি) ইউএন হাইকমিশনার ফর রিফিউজিস আয়োজিত ‘গ্লোবাল কমপ্যাক্ট অন রিফ্যুজিস: এ মডেল ফর গ্রেটার সলিডারিটি অ্যান্ড কোঅপারেশ’ শীর্ষক হাইলেভেল ইভেন্টে অংশগ্রহণ করবেন।
জাতিসংঘ সদর দপ্তরের দ্বিপক্ষীয় সম্মেলন কক্ষে প্রধানমন্ত্রী নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটের সঙ্গে বৈঠকে করবেন। প্রধানমন্ত্রী হোটেল গ্র্যান্ড হায়াতে যুক্তরাষ্ট চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত গোলটেবিল মধ্যাহ্নভোজন বৈঠকেও অংশ নেবেন।
বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সাধারণ পরিষদের সম্মেলন কক্ষে নেলসন ম্যান্ডেলা পিস সামিটেও বক্তৃতা দেওয়ার কথা রয়েছে। নিউ ইয়র্কের কনভেন কনফারেন্স সেন্টারে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম আয়োজিত ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ইমপ্যাক্ট সামিট’এও তার যোগদানের কথা রয়েছে।
শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সদর দফতর কনফারেন্স রুমে ১১তে কানাডার প্রধানমন্ত্রী আয়োজিত মহিলা এবং নারী শিক্ষায় বিনিয়োগ সংক্রান্ত একটি গোলটেবিল আলোচনায় অংশ গ্রহণ করবেন।
এ ছাড়াও জাতিসংঘের বৈশ্বিক শিক্ষা বিষয়ক বিশেষ দূতের আয়োজনে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ৩ নম্বর কক্ষে অনুষ্ঠেয় ‘মেকিং ইমপসিবল পসিবল: আনলকিং হিউম্যান পটেনশিয়াল থ্রো দ্য ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স ফ্যাসিলিটি ফর এডুকেশন’ শীর্ষক হাই লেভেল ইভেন্টে অংশগ্রহণ করবেন। এদিন সন্ধ্যায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড জে ট্রাম্প আয়োজিত স্বাগত সংবর্ধনায় অংশগ্রহণ করবেন। সংবর্ধনাটি নিউ ইয়র্কের লোটিস্থ নিউ ইয়র্ক প্যালেস হোটেলে অনুষ্ঠিত হবে।
শেখ হাসিনা ২৫ সেপ্টেম্বর সাইবার নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক হাই লেভেল ইভেন্টে অংশ গ্রহণ করবেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন এবং জাতিসংঘের নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ক কার্যালয় (ইউএনওডিএ) যৌথভাবে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ৩নং কক্ষে এটির আয়োজন করবে। সাধারণ পরিষদ ভবনের নর্থ ডেলিগেট লাউঞ্জে জাতিসংঘের মহাসচিব আয়োজিত মধ্যাহ্ন ভোজে যোগদান করবেন তিনি। বিকেলে জাতিসংঘের অছি পরিষদ আয়োজিত জাতিসংঘ মহাসচিবের হাই লেভেল ইভেন্ট ‘অ্যাকশন ফর পিস কিপিং’ (এ ফোর পি) এ অংশগ্রহণ করবেন তিনি।
২৬ সেপ্টেম্বর, ইউনিসেফ-এর নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর, ইউএন হাই কমিশনার ফর রিফিউজিস (ইউএনএইচসিআর) ফিলিপ্পো গ্রান্দি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি মঘেরনিনি জাতিসংঘ সদর দপ্তরের দ্বিপক্ষীয় সম্মেলন কক্ষে পৃথকভাবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
একইস্থানে প্রধানমন্ত্রী এস্তোনিয়ার প্রেসিডেন্ট ক্রেস্টি কালিজুলেইদ’-এর সঙ্গেও বৈঠক করবেন।
২৭ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনা সৌদি আরবের স্থায়ী মিশন এবং ওআইসি সচিবালয়ের যৌথ উদ্যোগে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ১২ নং কক্ষে অনুষ্ঠেয় সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কিত হাইলেভেল সাইড ইভেন্টে অংশগ্রহণ করবেন।
প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে তার সভাকক্ষে বৈঠক করবেন। আন্তর্জাতিক কমিটি অব রেডক্রস (আইসিআরসি)-এর প্রেসিডেন্ট পিটার মওরার-এর জাতিসংঘের দ্বিপাক্ষিক সভাকক্ষে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে।
একইদিনে যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অব স্টেট মাইক পম্পেও-এর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের কথা রয়েছে।
‘নারীর ক্ষমতায়মের মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি’ শীর্ষক এই উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী।