প্রকাশিত: ২৫/০৭/২০১৯ ৯:২৪ পিএম , আপডেট: ২৫/০৭/২০১৯ ৯:২৫ পিএম

কাবা শরিফের নতুন গিলাফ ‘কিসওয়াহ’ তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। মসজিদে হারামের তত্ত্বাবধায়ক কমিটির সদস্যরা তৈরিকৃত নতুন গিলাফ বুধবার (২৪ জুলাই) পরিদর্শন করেছেন। জিলহজ মাসের প্রথম সপ্তাহে মসজিদে হারামের প্রধান খতিব শায়খ আবদুর রহমান সুদাইসের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে। কাবা শরিফে নতুন গিলাফটি পরানো হবে ১০ জিলহজ সকালে।

পবিত্র কাবা শরিফের গিলাফকে ‘কিসওয়াহ’ বলা হয়। কালো রেশমি কাপড়ে তৈরি গিলাফটির গায়ে স্বর্ণের সুতা দিয়ে আরবি ক্যালিওগ্রাফিতে লেখা থাকে- ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলাল্লাহ, আল্লাহতায়ালা, সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম, ইয়া হান্নান, ইয়া মান্নানসহ আল্লাহতায়ালার পবিত্র নামসমূহ।

কাবাঘরের গিলাফ তৈরির কারখানাটি মক্কা নগরীর উম্মুল জুদ এলাকায় অবস্থিত। এ কারখানায় মদিনায় হুজরায়ে নববীর গিলাফও তৈরি করা হয়। কাবার গিলাফ তৈরিতে ১ কোটি ৭০ লাখ সৌদি রিয়াল ব্যয় হয়। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৩৮ কোটি ১১ লাখ ৫৫ হাজার ৯১৪ টাকা।

১৪ মিটার দীর্ঘ ও ৯৫ সেমি প্রস্থ ৪১টি বস্ত্রখণ্ড জোড়া দিয়ে তৈরি করা হয় গিলাফ। চার কোনায় সৌন্দর্যবর্ধন করে বৃত্তাকারে লেখা থাকে সূরা ইখলাস। রেশমি কাপড়ের নিচে দেওয়া হয় মোটা সাধারণ কাপড়। একটি গিলাফে ব্যবহৃত রেশমি কাপড়ের ওজন ৬৭০ কিলোগ্রাম ও স্বর্ণের ওজন ১৫ কিলোগ্রাম।

কাবাঘরকে গিলাফ দিয়ে আচ্ছাদন করা কবে থেকে শুরু হয় সেই সম্পর্কে মতভেদ রয়েছে। ঐতিহাসিক সূত্রে জানা গেছে, হিমিয়ারের রাজা তুব্বা আবু কবর আসাদই পবিত্র কাবাঘর গিলাফের মাধ্যমে আচ্ছাদনকারী প্রথম ব্যক্তি।

১৩৪৬ হিজরিতে কাবাঘরের গিলাফ তৈরির জন্য একটি বিশেষ কারখানা স্থাপন করা হয়। ১৩৮১ হিজরিতে সৌদি হজ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে দক্ষ সৌদি কারিগরের মাধ্যমে রেশমি ও সোনালি সূতা দিয়ে গিলাফ তৈরি করে কাবার গায়ে পরানোর ব্যবস্থা করা হয়। ১৩৮২ হিজরিতে বাদশাহ ফয়সাল ইবনে আবদুল আজিজ নতুনভাবে পবিত্র কাবার গিলাফ তৈরির কারখানা প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেন। এরপর থেকে খাঁটি প্রাকৃতিক রেশমি রঙের সঙ্গে কালো কাপড় দিয়ে পবিত্র কাবার গিলাফ তৈরির ব্যবস্থা করা হয়।

প্রতি বছর হজের ৩ সপ্তাহ আগে কাবা শরিফের গিলাফ কিছুটা ওপরে সরিয়ে সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। যেন হাজিরা মনের আবেগে গিলাফের কোনো অংশ কেটে না নেয়।

প্রতি বছর ১০ জিলহজ তারিখে কাবায় নতুন গিলাফ পরানো হয়। আর পুরনো গিলাফটি খণ্ড খণ্ড করে বিভিন্ন মুসলিম দেশের প্রধান, ইসলামি স্কলার, কৃতি ব্যক্তিদের উপহার হিসেবে দেওয়া হয়। কাবার গায়ে ঠাঁই পেয়ে সাধারণ এক খণ্ড বস্ত্র হয়ে ওঠে মহামূল্যবান। তাই এই জিনিসের প্রতি সব দেশেরই আগ্রহ থাকে।

গিলাফ পরিবর্তনের কাজে মসজিদুল হারামের দায়িত্বপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক নেতৃত্ব দেন। এ সময় সৌদি বাদশার প্রতিনিধিসহ দেশটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন মুসলিম দেশের রাষ্ট্রদূতরা উপস্থিত থাকেন।

প্রতিবছর দু’টি করে (একটি সতর্কতামূলক) গিলাফ তৈরি করা হয়। হাতে তৈরি করতে সময় লাগে আট থেকে নয় মাস। অন্যটি মেশিনে মাত্র এক মাসে তৈরি করা হয়।

পাঠকের মতামত

দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রাখাইন, নতুন আশ্রয়প্রার্থীর আশঙ্কায় বাংলাদেশ

নজিরবিহীন সংকটে পড়তে যাচ্ছে প্রতিবেশী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য। খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় উন্নতির সম্ভাবনা না থাকায় ...