নুরুল আমিন হেলালী::
পর্যটন নগরী কক্সবাজারের প্রতিটি উপজেলায় গত কয়েক বছরে ব্যাঙের ছাতার মতো যত্রতত্র গড়ে উঠেছে অবৈধ প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার। এসব হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা প্রায়ই প্রতারণার শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য দপ্তর ও সিভিল সার্জন অফিসের যথাযথ নজরদারী না থাকায় ওই সকল ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ইচ্ছেমতো চালিয়ে যাচ্ছে তাদের অবৈধ ব্যবসা। এছাড়া এসব অবৈধ হাসপাতাল,ক্লিনিকের ব্যাবসার সাথে সরাসরি জড়িত রয়েছে সরকারী হাসপাতালে কর্মরত অধিকাংশ চিকিৎসক। খোঁজ নিয়ে জানা যায়,শহরে অবস্থিত কয়েকটি প্রাইভেট হাসপাতাল,ক্লিনিকে প্রশিক্ষিত নার্স কিংবা টেকনিশিয়ান থাকলেও জেলার বিভিন্ন উপজেলার আনাচে-কানাচে গড়ে উঠা অধিকাংশ প্রাইভেট হাসপাতাল,ক্লিনিক চলছে অশিক্ষিত নার্স আর অদক্ষ টেকনিশিয়ান দিয়ে। সরেজমিনে দেখা যায়, কক্সবাজারের উপশহরখ্যাত বাণিজ্যিক নগরী ঈদগাঁও বাজারে গত কয়েক বছরে গড়ে উঠেছে প্রায় ডজনখানেক অবৈধ ক্লিনিক,হাসপাতাল,প্যাথলজি ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার। এলাকার কতিপয় ডাক্তার ও অসাধু ব্যাবসায়ী সেখানে নির্বিঘেœ সেবার নামে চালিয়ে যাচ্ছে চিকিৎসা বাণিজ্য। এসব বাণিজ্যিক প্রতিষ্টানের প্রতারনা ধামাচাপা দিতে পরিচালক হিসেবে মাসিক মাসোহারা নিচ্ছে কিছু সুবিধা ভোগী বিভন্ন রাজনৈতিকদলের নেতা পরিচয়ী কতিপয় ব্যাক্তি,সিভিল সার্জন অফিসে কর্মরত কিছু অসাধুকর্তা ব্যাক্তি ও স্থানীয় প্রশাসন।
এসব অবৈধ ক্লিনিকের ভিতরে গিয়ে দেখা যায়, চিকিৎসার নামে বসানো হয়েছে রোগী প্রতারণার নতুন নতুন ফাঁদ। এসব হাসপাতাল, ক্লিনিকের সামনে ডজনখানেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নামের তালিকায় ৩/৪ জন চিকিৎসা বিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জনকারী ডাক্তারদের নামও রয়েছে। কিন্তু ভিতরের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। অন্যদিকে ডায়াবেটিস কেয়ার, প্যাথলজি সেন্টার, ডায়াগনষ্টিক সেন্টার নাম দিয়ে নির্ভিঘেœ চালিয়ে যাচ্ছে রোগি ভর্তি করে সবধরনের চিকিৎসা বাণিজ্য। কয়েকজন মালিকের সাথে এব্যাপারে জানতে চাইলে তারা জানান, রোগী ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেয়ার অনুমতি নাই তবুও রোগীদের প্রয়োজনে ভর্তি করিয়েছি। এসব ক্লিনিকের কয়েকজন রিসিপসনিস্ট জানায়, তাদের প্রতিষ্টানে গর্ভবর্তী মহিলাদের চেক-আপসহ আউট ডোর ইনডোর সব চিকিৎসা দেয়া হয়। ঈদগাঁও বাজারের ভিতরে অবস্থিত একটি প্রাইভেট ক্লিনিকের ভেতরে দেখা যায়, কুলচুমা, প্রমিলা, জেসমিন, জান্নাতু, খালেদাসহ কয়েক তরুণী সর্বদা সাদা এপ্রোণ পরে রোগীদের চিকিৎসা সহায়তা দিচ্ছেন। তাদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা প্রথমে নিজেদের নার্স পরিচয় দিলে ও ডিপ্লোমা কোথায় করেছেন কিংবা প্রশিক্ষণ কোথায় নিয়েছেন জানতে চাইলে তারা এক পর্যায়ে স্বীকার করেন নার্সিংয়ের উপর প্রশিক্ষণ কিংবা ডিপ্লোমা তাদের নেই। পূর্বে তারা বিভিন্ন ক্লিনিকে ডাক্তারের সহকারী কিংবা আয়া ক্লিনারের কাজ করেছেন, সেখানকার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নার্স হিসেবে রোগীর সেবা দিচ্ছেন। অপরদিকে থেরাপী কক্ষে কিংবা প্যাথলজি কক্ষে টেকনিশিয়ান হিসেবে যারা সেবা দিচ্ছেন তাদেরও চিকিৎসা শাস্ত্রের উপর কোন লেখাপড়া নেই। এছাড়া অন্যান্য ক্লিনিক, প্যাথলজি সেন্টারগুলোর নার্স ও টেকনিশিয়ানদেরও একই অবস্থা। মোদ্দাকথা জেলার অধিকাংশ প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক, প্যাথলজি ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টার চলছে অশিক্ষিত নার্স ও অদক্ষ টেকনিশিয়ান দিয়ে। অভিযোগ রয়েছে ডায়াবেটিস কেয়ার কিংবা প্যাথলজি সেন্টার নাম থাকলেও সেখানে মহিলাদের গর্ভপাত, চেক-আপসহ সব ধরণের চিকিৎসা দিয়ে চলছে গলাকাটা বাণিজ্য। অনেকের সাথে আলাপে জানা যায়, এসব ক্লিনিক, প্যাথলজিসেন্টারে সেবার মান ভাল না থাকলেও ডাক্তারের পরামর্শে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয় পরে বিভিন্ন পরীক্ষার নামে গুণতে হয় হাজার হাজার টাকা। হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনষ্টিক সেন্টারে রোগীদের সেবা দেয়ার জন্যে ডিপ্লোমাধারী নার্স কিংবা পরীক্ষার জন্য ডিপ্লোমাধারী ল্যাব টেকনিশিয়ান রাখার নিয়ম থাকলেও তার কোনটাই এখানে নেই। বিশ্বস্থ সূত্রে জানা যায়, এই সমস্ত প্রাইভেট ক্লিনিকের সিলিং, ফ্যান, বাল্ব থেকে শুরু করে অধিকাংশ জিনিসপত্র নিম্নমানের ঔষুধ কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধিদের টাকায় কেনা। তাই ব্যবস্থাপত্রে নতুন ও নিম্নমানের ঔষুধ লেখেন বলে অভিযোগ অনেকের। উপরোক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা:পুচনু এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী কোন প্রতিষ্টানে চিকিৎসা দেয়ার জন্যে রোগী ভর্তি করলে অবশ্যই সেসব প্রতিষ্টানে কমপক্ষে দশজন ডিপ্লোমাধারী নার্স নিয়োগ করতে হবে এবং প্যাথলজি করতে চাইলে ডিপ্লোমাধারী টেকনিশিয়ান রাখতে হবে । সচেতন মহল মনে করেন, এসব ক্লিনিকে কর্মরত নার্স ও টেকনিশিয়ানদের যথাযথ প্রশিক্ষণ না থাকায় বিভিন্ন সময় রোগীরা প্রতারণার স্বীকার হচ্ছেন। এসব অর্থলোভী ডাক্তারদের চিকিৎসা বাণিজ্য মানসম্মত হয় কিনা এটা গ্রামের রোগীর বোঝার ক্ষামতা থাকে না। তাই এসব প্রতিষ্টানের বিরুদ্বে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অভিযান পরিচালনা করা জরুরী বলে জানান ভুক্তভোগীরা।