এসেছিলেন অঢেল বিশ্বাস নিয়ে মিডিয়াতে। কাজ করবেন নিয়মিত। সেই বিশ্বাস থেকে অভিনয় করতে এসে নিয়মিত হয়েছিলেন তারা। কথায় আছে বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর। সেই সুবাদে অভিনয় করে কোটি ভক্তের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন শ্রাবস্তী দত্ত তিন্নি, মোজেজা আশারাফ মোনালিসা, সারিকা সাবরিন।
তবে একসময়কার এই তিন অভিনেত্রীর জীবনে একমাত্র প্রেমেই ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ঠিক যেভাবে জীবনে তারকাখ্যাতি এসেছিল তাদের ঠিক সেই ভাবেই প্রেমের জোয়ারে ভেসে গেছেন তারা। সেই প্রেমের নেশা থেকে মাদকাসক্তও হয়ে পরববর্তীতে রিহ্যাব এ ভর্তিও হয়েছিলেন। তবে এ বিষয়গুলো সবসময় গুঞ্জন বলেই উড়িয়ে দিয়েছিলেন এই তিন অভিনেত্রী। তবে গুঞ্জন হলেও পরবর্তীতে সেই প্রেম থেকে বিয়ে তারপর সংসারও করেছিলেন তারা। কিন্তু নাহ সেই সংসারও তাদের টেকেনি। এরপরপরই তারা সম্পূর্ণ অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিলেন মিডিয়া থেকে। মোনালিসা এখন আমেরিকা। তিন্নি হচ্ছেন অদৃশ্য মানবী আর সারিকা অনেক কষ্টে নিয়তিম হয়েছেন আবারও অভিনয়ে।
শ্রাবস্তী দত্ত তিন্নি: হঠাৎ হঠাৎ কোথায় যেন হারিয়ে যান তিনি। হয়তো ফিরে আসেন, দুয়েকটি কাজ করেন, আবার হারিয়ে যান। তার প্রেম আর সংসার জীবন নিয়ে নতুন করে কিছু বলার দরকার নেই। কারণ ইতোমধ্যেই পাঠক সবই জানেন। তিনি কি সুস্থ আছেন? নাকি কঠিন কোনো সমস্যা? কথাগুলো দর্শকদের। প্রায় বছর দেড়েক পর আবার ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছেন তিন্নি। নাটকে অভিনয় করছেন। নাম ‘কুয়াশার ভিতরে একটি মৃত্যু’। শুটিং হচ্ছে শ্রীমঙ্গলে। তিন্নির সঙ্গে আছেন সজল। জানা গেল, ঈদের জন্য তৈরি হচ্ছে নাটকটি।
মোজেজা আশরাফ মোনালিসা: বাংলাদেশের এক সময়কার জনপ্রিয় মডেল, অভিনেত্রী ও নৃত্যশিল্পী মোজেজা আশরাফ মোনালিসা। গালে টোল পড়া হাসি দিয়ে অনেক ভক্তের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। একসময় বিজ্ঞাপন, নাটক নিয়েই খুব ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই সময়ের স্রোতে ক্যারিয়ারের ভাটা পড়তে থাকে তার। এরপর শুধুই দীর্ঘশ্বাস। ২০১২ সালের জুনে আমেরিকা প্রবাসী ফাইয়াজ শরীফের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন মোনালিসা। একই বছরের ম্যাজিক ডে ১২.১২.১২ তে ঢাকার একটি রেস্টুরেন্টে মোনালিসা ও ফাইয়াজের বিবাবহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উভয় পরিবারের ঘনিষ্ঠজনেরা উপস্থিত ছিলেন। একেবারে হুট করেই পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ের সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়।
কিন্তু বিয়ের পরেই হারিয়ে যেতে থাকেন মিডিয়া থেকে। পাড়ি জমান আমেরিকাতে। ভালোই চলছিল তার নতুন জীবন নতুন সংসার। কয়েক মাস যেতে না যেতেই খবর আসে যে স্বামীর সংসারে থাকছেন না তিনি। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদেরও একটি খবর রটে তখন। এরপর থেকে মোনালিসা নিজের মত করে আলাদা হয়ে যান। গেল বছর দেশে এসে কয়েকটি নাটকে অভিনয় করে আবারও চলে যান আমেরিকায়। বর্তমানে আমেরিকায় একা থাকলেও ভালো আছেন বলে জানান।
সারিকা সাবরিন: সারিকার পূর্ব পুরুষদের বাড়ি কলকাতায়, বাবা ঘর বেঁধেছিলেন সাতক্ষীরায় আর এখন পুরো পরিবারই ঢাকার বাসিন্দা। হুট করেই অমিতাভ রেজার পরিচালনায় একটি বিজ্ঞাপনচিত্র দিয়ে ২০০৮ এর দিকে মিডিয়ায় হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন মডেল ও অভিনেত্রী সারিকা। পত্রিকার বিনোদন পাতায়, টেলিভিশন, পর্দায়, বিলবোর্ডে এবং সাধারণ মানুষের মনে অল্প সময়েই জায়গা করে নিয়েছিলেন তিনি। ব্যস্ততা বেড়ে যায় টেলিভিশন নাটকে। জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠতে থাকে। প্রস্তাব আসে চলচ্চিত্রেরও। সারিকা যেন সত্যিই তারা হয়ে আকাশে ভাসতে থাকলেন। কিন্তু তিনি হয়তো জানেন না আকাশের তারাও মাঝে মাঝে খসে পড়ে। সে দৃশ্য খুব বেশি মানুষের দেখা হয় না। তারকাদের পতনও নিরবেই ঘটে। সারিকা নামের এ তারকার পতনও অনেকটা নীরবেই ঘটেছে।
৮ বছর আগে বান্ধবী সুমাইয়ার একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে হোটেল ওয়েস্টিনে মাহিমের সঙ্গে সারিকার পরিচয়। সেদিনই সারিকাকে ভীষণ ভালো লেগে যায় মাহিমের। কিছু দিনের মধ্যেই সারিকার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে যায় মাহিমের। ২০১৩ সালে এসে মাহিম অনুভব করেন সারিকা কেবল একজন বন্ধু নন, এর চাইতে বেশি কিছু। অপেক্ষা না করে তিনিই প্রথম সারিকাকে ভালোবাসার কথাটি জানিয়ে দেন। পুরনো বন্ধুর মুখে ভালোবাসার কথা শুনে অবাকই হয়েছিলেন সারিকা। তিনিও মনে মনে মাহিমকে ভালোবেসে ফেলেছিলেন বলে মাহিমের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেননি। এরপর এক বছর প্রেম করে বিয়ের কাজটা সেরেই ফেললেন ৭ বছরের পুরোনো বন্ধুর সাথে। মাহিম করিম পেশায় ব্যবসায়ী। ২০১৪ সালের ১২ আগস্ট রাতে ঘরোয়া আয়োজনে তার বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী সারিকা-মাহিমের ঘর আলোকিত করে ২০১৪ সালের ৪ মে কন্যা সন্তানের মাও হন তিনি। এরপর শুরু হয় সংসার জীবনের নতুন অধ্যায়। কিন্তু সেই প্রেমের কারণেই সংসারটি টিকেনি। মাঝখানে নানা নেশার মধ্যে থাকলেও তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। বর্তমানে আবারো তিনি অভিনয়ে নিয়মিত হয়েছেন। তিনি নিয়মিত হলেও আবারও গুঞ্জন উঠেছে তিনি নতুন করে প্রেমে মজেছেন।
প্রেম যেমন একজন মানুষকে সঠিক পথ দেখাতে পারে আবার ঠিক ভুল মানুষের পাল্লায় পড়ে ভেঙে যেতে পারে হৃদয়। এই তিন অভিনয় শিল্পী ছাড়া আরও অনেকেই আছেন অভিনয় থেকে দূরে। তবে তারা বেশির ভাগই পাড়ি দিয়েছেন দেশের বাইরে। সে গল্প আরেকদিন লেখা যাবে।