নবীগঞ্জের লন্ডন প্রবাসী অধ্যুষিত ঘোলডুবা গ্রামের লন্ডনী পরিচয়ধারী লিটনের প্রেমের ফাদে পড়ে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার জাফরিন সুলতানা নামের এক কলেজ ছাত্রী গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। এঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় লিটনের মা রায়জান বিবি (৫০) ও তার মামা ওসমান গনি (৫৫) সিলেট জেল হাজতে রয়েছেন। গত ২০ অক্টোবর মামলায় আদালতে হাজিরা দিতে গেলে বিজ্ঞ আদালত তাদের জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। কলেজ ছাত্রী আত্মহত্যার পরপরই প্রতারক লিটন দেশ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে বলে জানা গেছে।আত্মহননকারী জাফরিনের চাচা আবুল হাসনাত সহ তাদের পরিবারের দাবি, ২০১৫ সালের মাঝামাঝি জাফরিন নাসরিনের সঙ্গে এমসি কলেজের মাস্টার্সের ছাত্র ও সুহেল নামে পরিচয় দেয়া এক ব্যক্তির সখ্যতা গড়ে ওঠে। তিনি নিজেকে লন্ডন প্রবাসী বলে পরিচয় দেন। এমনকি জাফরিনকে লন্ডন নিয়ে যাওয়াার আশ্বাস দেয়। এজন্য সুহেলের হাতে জাফরিন নগদ ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা এবং পরে সুহেলের মামা ও মায়ের উপস্থিতিতে আরো ২৪ ভরি স্বর্ণালঙ্কারও তুলে দেন।
এর পর থেকে সুহেল নামধারী লিটন প্রেমিক জাফরিনের সাথে দুরত্বে থাকে। এদিকে জাফরিন তার পরিবারের চাপের মুখে সবকিছু খুলে বলে। পরে প্রতারক সুহেলকে জাফরিন তার দেওয়া স্বর্ণ ও টাকা ফেরত দেওয়ার তাগিদ দেয়। এতে সুহেল তা ফেরত দেওয়ার কথা বলে সময় ক্ষেপন করতে থাকে। এরই মধ্যে জাফরিনের পরিবার জানতে পারেন সুহেল তার ভুয়া পরিচয় দিয়েছে। এবং তার ঠিকানাও ভুল। এ ঘটনায় জাফরিনের বাবা ২০১৬ সালের ৩ ফেব্র“য়ারি বিদেশ নিয়ে যাওয়ার মিথ্যা প্রলোভন ও টাকা আত্মসাতের ঘটনায় আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। জাফরিনের সঙ্গে মোবাইলে কথোপকথন রেকর্ডও পুলিশের হাতে তুলে দেন তিনি। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে সুহেলের আসল নাম লিটন। তার বাড়ি নবীগঞ্জ উপজেলার ঘোলডুবা গ্রামে। তবে সে বসবাস করে তার নানার বাড়ি ভুরিরবাক গ্রামে।
এদিকে তার প্রতারনার ফান্দে জাফরিন সুলতানা আত্মহত্যার পথ বেঁেচ নেন। গত ৪ মে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় জাফরিনের পিতা নুরুল হক ওরফে রুনু মিয়া আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে সিলেট আদালতে প্রতারক লিটন তার মা রায়জান বিবি ও মামা ওসমান গনিকে আসামী করে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। এই মামলার পর পরই লিটন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়। উক্ত মামলায় লিটনের মা ও মামা আদালতে হাজিরা দিতে গেলে বিজ্ঞ আদালত তাদের জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে প্রেরন করেন। আদালত লিটনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করেন।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, লিটন সিলেট সহ বিভিন্ন এলাকায় তার একাধিক নাম ও লন্ডন প্রবাসি পরিচয় দিয়ে বেড়াতো। লিটন একই ভাবে অনেকে মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে। এলাকার অনেকে লিটনকে নিরব ঘাতক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। স্থানীয় লোকজনের সাথে আলাপকালে, বেড়িয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য! লিটনের বিরুদ্ধে এধরনের একাধিক ঘটনার বিচার গ্রামবাসীর নিকট এসেছে। তার বাবাও একাধিক বিয়ে করে ছিলেন বলে গ্রামবাসী জানান।
লিটন নবীগঞ্জ উপজেলার কুর্শি ইউনিয়নের ভুবিরবাক গ্রামে মামা আঃ গনির বাড়িতে মা রায়জান বিবিকে নিয়ে বসবাস করতো। প্রতারক লিটনের ফাঁসি দাবী করেন, জাফরিনের পরিবার।