মোহাম্মদ শফিক
কক্সবাজার ট্রাফিক বিভাগে ফ্রি স্টাইলে চলছে অনিয়ম দূর্নীতি। বিরাজমান অনিয়ম দূর্নীতি বন্ধে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সাক্ষী গোপালের ভুমিকায় থাকায় এ পরিস্থিতি উত্তরণের সকল প্রচেষ্টাই বার বার মার খাচ্ছে। কথায় বলে যে যায় লঙ্কায়, সে হয় রাবণ। কক্সবাজার ট্রাফিক বিভাগের অবস্থাও তাই। বিশেষ করে কক্সবাজার ট্রাফিক পুলিশের টিআই বজলু ও দেলোয়ার বিভিন্ন ধরনের যানবাহন আটক পরবর্তী বেপরোয়া চাঁদাবাজিতে লিপ্ত রয়েছে। গাড়ীর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র থাকার পরেও অহেতুক আটক করে জোর পূর্বক টাকা আদায়ের অহরহ ঘটনা ঘটিয়ে যাচ্ছে। শুধু টাকা আদায় নয় ট্রাফিক অফিসে গাড়ি নিতে আসলে দেলোয়ারের হাতে বিভিন্নœ চালকরা মারধর ও গালমন্দসহ নানান লাঞ্চিত’র শিকার হচ্ছে প্রতিদিন। ২৮জুন সন্ধায় পরে ট্রাফিক অফিসে এমন ঘটনা ঘটলে বিক্ষুদ্ধ হয়ে উটে বিভিন্ন ড্রাইভাররা। পরে ভুক্তভোগী চালকদের মধ্যে মনজুর নামে এক চালক ট্রাফিকের টিআই দেলোয়ার,বজলুর অনৈতিক কর্মকান্ড ও নানা নির্যাতনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার পুলিশ সুপার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।
অভিযোগ সুত্রে রামু উপজেলার উত্তর মিঠাছড়ি ইউনিয়নের আসকর খিল এলাকার বাসিন্দা সিএনজি চালক মনজুর জানান, তার একটি সিএনজি রয়েছে। সেটি চালিয়ে পরিবারের জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। গত ২৬ জুন রাত সাড়ে ১০টার দিকে একজন মুমূর্ষ রোগী নিয়ে রামু থেকে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে আসার পথে রাত ১১টার দিকে শহরের ভোলাবাবুর পেট্রোলপাম্প এলাকা থেকে ট্রাফিস সার্জেন্ট মুহিবুল্লাহ গাড়ীর কাজপত্র তল্লাশী করেন সিএনজি গাড়ীটি আটক করে পুরাতন পুলিশ লাইনে নিয়ে আসে। ২৭ জুন সন্ধ্যার পর গাড়ীর কাগজপত্র নিয়ে ট্রাফিক অফিসে দেখা করতে বলেন। ২৭ জুন সন্ধ্যার পর গাড়ীর মুল কাগজপত্র নিয়ে ট্রাফিক অফিসে টিআই বজলু ও টিআই দেলোয়ারের কাছে গেলেই জরিমানা বাবদ ৮হাজার ৭’শ টাকা দাবী করা হয়। তিনি দাবী করেন, তার গাড়ীর কাগজপত্রে কোন ধরনের ত্রুটি না থাকার পরেও অহেতুক জরিমানা করার কারণ জানতে চাইলে দু’টিআই উত্তেজিত হয়ে গালমন্দ করেন। পরে তাদের দাবীর মধ্যে ২৯০০টাকা দিতে তিন হাজার টাকার একটাকাও কম হবে না বলে সাশিয়ে দেয় এবং অশালিন ভাষায় গালমন্দ করে অফিস থেকে বের করে দেন। সর্বশেষ গতকাল ৩হাজার টাকা নিয়ে গাড়িটি ছেড়ে দেন।
একই ঘটনা জানালেন ঘোনারপাড়া এলাকার আরেক সিএনজি চালক নুরুল আমিন। গত ২১ জুন সন্ধ্যা সাড়ে ৪টায় তার সিএনজিটি আটক করে। গাড়ীর কাগজপত্র নিয়ে ট্রাফিক অফিসে যোগাযোগ করার পরেও গত ৬দিন পর্যন্ত কাল ক্ষেপন করে জরিমানা হিসেবে ৮হাজার ৭’শ টাকা দাবী করে। তবে বৈধ কাগজপত্র থাকার পরেও জরিমানার নামে অবৈধ টাকা আদায়ের ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ফোন করে অন্যায় ভাবে টাকা আদায় করার কারণে জানতে চাইলেই বেকায়দায় পড়া ট্রাফিক ইন্সপেক্টর দেলোয়ার গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় বিনা টাকায় সিএনজিটি ছেড়ে দেন। একই ঘটনার শিকার হয়েছেন, পিএমখালীর চালক আবদুল্লাহ, চালক মানিকসহ অর্ধশত লাইসেন্সধারী চালকরা। এধরনের ঘটনা প্রতিদিনই ঘটাচ্ছে। অতচ বৈধ কাগজপত্র থাকার পরেও আটক বাণিজ্য অব্যাহত রেখেছে।
একই ঘটনা জানালেন, পিএম খালীর মোহছনিয়া এলাকার আবদুল্লাহ ড্রাইভার। গত কয়েক দিন আগে তার সিএনজি গাড়িটি আটক করে ট্রাফিক পুলিশ। পরে তার শুধু মাত্র একটি কাগজ ছাড়া অন্যান্য সব কাগজ পত্র সঠিক থাকার পরও টিআই দেলোয়ার ও বজলু ৮ হাজার ৭ টাকা দবী করে নানা হয়রানি করে। পরে ওই চালক সচেন মানুষের সহযোগিতা নিয়ে বিষয়টি পুলিশ সুপার শ্যামল কান্তি নাথকে অবগত করলে মাত্র ৫শ টাকা দিয়ে গাড়িটি ছাড়িয়ে দেয়।
একই মানিক নামের এক ড্রইভার তার একটি সিএনজি ট্রাফিক পুলিশ আটক করে। পরে সে অনেক দিন ট্রাফিক অফিসে ধন্যা দিয়ে শেষ পর্যন্ত কোন উপায়ন্তর না দেখে দেলোয়ার ও বজলুর দাবী কৃত ৮হাজার ৭ টাকা দিয়ে এই গাড়ি নিয়ে যায়।
সিএনজি চালক নুরুল আমিন, নুরুল আলম , মনজুর আলম , নুরুল হক, জানান তারা প্রথমে লিখিত ও মৌখিক ভাবে অভিযোগ করেন সহকারী পুলিশ সুপার ছত্রধর ত্রিপুরার কাছে। পরে তাদের মধ্যে একজন বাদি হয়ে ২৮জুন মঙ্গলবার দুপুরের দিকে পুলিশ সুপার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেয়। তারা জানান, পরিবহন সেক্টরের আতংক বিশেষ করে ট্রাফিক পুলিশ দেলোয়ার কে অতি শীঘ্রই কক্সবাজার থেকে বদলি না করলে তারা পরিবহন সমতির পক্ষ থেকে বৃহৎ আন্দোলনে নেমে পড়বে বলে হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন।
তারা আরো বলেন, ট্রাফিক অফিসের এই দ্ইু টিআই এর নামে কক্সবাজার শহরে ভোলাবাবুর পেট্রোল পাম্পসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত সিএনজি ও অন্যান্য প্রতিটি যানবাহন থেকে ১০০টাকা করে চাদা দেয় অবসর প্রাপ্ত পুলিশ পরিচয়ে জৈনক ব্যক্তি আবুল কালাম ও তোহা।
এদিকে অনুসন্ধানে পরিবহন সেক্টর সংশ্লিষ্টরা আরো জানান, কক্সবাজার ট্রাফিক বিভাগের এই দুনীর্তিবাজ টিআই দেলোয়ার গোপালগঞ্জের লোক পরিচয়ে পুরো শহরজোরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে তার বেপরোয়া চাঁদাবাজি ও হুমকি-ধমকির রোষানালে পড়ে অতিষ্ট হয়ে পড়েছে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা। শহরের বিভিন্ন স্থানে সকাল সন্ধ্যা নানা অজুহাত দেখিয়ে বিভিন্ন জাতের গাড়ী আটক করে পরে সুযোগ বুঝে টাকার বিনিময়ে কিছু গাড়ী স্পটে ছেড়ে দিলেও অবশিষ্ট আটককৃত গাড়ী পুলিশ লাইনে পাঠিয়ে দিয়ে শুরু হয় বাণিজ্য। এছাড়াও টিআই দেলোয়ার নিজেকে একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবেও দাবী করেন বলে ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে। কারো সাথে পরিচয়ের শুরুতেই তিনি গোপাল গঞ্জের বাসিন্দা এবং মুক্তিযোদ্ধা দাবী করে বেপরোয়া ভাব দেখায়। তিনি ব্যাপক সমালোচিত রামু ও উখিয়া থানার সাবেক ওসি গিয়াস উদ্দিন মিয়ার ভাই বলেও দাবী করে।
জানা গেছে, কক্সবাজার পরিবহন সেক্টরে ২ অভিযুক্ত কর্মকর্তার মাসিক চাঁদাবাজির পরিমাণ অর্ধকোটি টাকা। টমটম, মোটর সাইকেল, সিএনজি ও ডিজেল চালিত অটো রিক্সা, বাস-মিনিবাস, মাইক্রো-হাইয়েস, ট্রাক-মিনিট্রাক ও ফিটনেস বিহীন লক্কর ঝক্কর গাড়ী থেকে এ চাঁদা আদায় করেন। অনেকেই হুমকি-ধমকির ভয়ে সরাসরি ট্রাফিক অফিসে এসে তার হাতে মাসিক চাঁদাও দিয়ে থাকেন বলে সুত্রে প্রকাশ। তার চাঁদার খাতায় নাম না লিখিয়ে কোন চালক শহরে গাড়ি চালাতেও পারে না বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি শহরে কোন ভিআইপি গাড়ি প্রবেশ করলেও ট্রাফিকের চাঁদাবাজির ভোগান্তির শিকার হতে হয়।
এব্যাপারে অভিযুক্ত ট্রাফিক ইন্সপেক্টর বজলু ও দেলোয়ারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা চাঁদাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে গাড়ি ধরা। পরে কাগজ-পত্র সঠিক থাকলে ছেড়ে দেওয়া। যদি কাগজ পত্র সঠিক না থাকে থাহলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে উল্লেখিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন বলে জানান।