স্বদেশে ফিরতে মুখিয়ে আছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা ১২ লাখ রোহিঙ্গা। তারা নিজ দেশে ফিরতে আন্তর্জাতিক সহায়তা কামনার পাশাপাশি সৃষ্টিকর্তার সাহায্য প্রার্থনায় প্রতিনিয়ত করছেন দোয়া-মোনাজাত। তাদের অভিযোগ- প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বানচাল করতে মিয়ানমার সরকার নানানমুখী ষড়যন্ত্র করছে। এ ব্যাপারে তাদের দোসর হিসেবে কাজ করছে কিছু সন্ত্রাসী গ্রুপ।
সাবেক কূটনৈতিক ও সামরিক বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরতে চান। কিন্তু প্রত্যাবাসনে কোনো রোডম্যাপ তৈরি হয়নি। মিয়ানমার সরকার এখনো উদাসীন। সরকারের উচিত আন্তর্জাতিক এবং উপমহাদেশীয় রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে কাজে লাগিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করা।
একাধিক রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বাধাগ্রস্ত করতে মিয়ানমার সরকার ষড়যন্ত্র করছে। এক্ষেত্রে তারা কিছু রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী বাহিনীকে ব্যবহার করছে।
জানা যায়, মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ১১ লাখ রোহিঙ্গা। পাঁচ বছরের ব্যবধানে তা বেড়ে হয় ১২ লাখের বেশি।
আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরাতে বাংলাদেশ সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতার পাশাপাশি ক্যাম্প থেকেই তৎপরতা শুরু করেন রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতারা। এর মধ্যে ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট কয়েক লাখ রোহিঙ্গা নিয়ে বড় সমাবেশ করা হয়। এ সমাবেশের নেতৃত্ব দেন মাস্টার মহিবুল্লাহ। কিন্তু দুর্বৃত্তের হামলায় মুহিবুল্লাহ নিহত হওয়ার পর থমকে যায় সেই কার্যক্রম। এ বছর বড় পরিসরে না হলেও ২০ ক্যাম্পে ‘গো ব্যাক হোম’ কর্মসূচি পালন করেন রোহিঙ্গারা।
ওই সমাবেশে রোহিঙ্গারা স্বদেশে ফিরতে আকুতি জানান। তাদের বাপ-দাদার ভিটায় ফেরাতে আন্তর্জাতিক মহলের সহায়তা কামনা করেন। করেন দোয়া ও মুনাজাত। রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৭-এর বাসিন্দা হাবিব উল্লাহ বলেন, ‘আরাকানে আমাদের প্রচুর জায়গা-সম্পত্তি রয়েছে। এখানে আসার আগে আমাদের পরিবারে কখনো দারিদ্রতা ভর করেনি। কিন্তু গত পাঁচ বছর ধরে ক্যাম্পে এক প্রকার বন্দিজীবন যাপন করছি। এমন জীবন আমরা প্রত্যাশা করি না। আমরা চাই বাপ-দাদার ভিটায় ফিরে যেতে। এক বুক আশা নিয়ে স্বদেশে ফেরার প্রহর গুনছি। ’ টেকনাফের মধুরছড়ার মো. আলম বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারের পূর্ণ নাগরিক হিসেবে ফিরে যেতে চাই। জীবনের নিরাপত্তা চাই। নিজ দেশে স্বাধীনভাবে ঘোরাফেরা করতে চাই। কিন্তু মিয়ানমার সরকার প্রত্যাবাসনের নামে ধোঁকাবাজি করছে। আন্তর্জাতিক মহলের চাপের মুখেই তারা মাথা নত করেনি। ’
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালে রাখাইন রাজ্যে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর তল্লাশি চৌকিতে হামলার অভিযোগে রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এ সময় গণহত্যা, ধর্ষণ, বাড়িতে অগ্নিসংযোগ এবং নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। অভিযানের মুখে ২৫ আগস্ট বাংলাদেশে পাড়ি জমায় রোহিঙ্গারা। এ সময় কক্সবাজারের ৩৪ ক্যাম্পে ১১ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেন। বর্তমানে সে সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১২ লাখে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু মিয়ানমার সরকারের আন্তরিকতার অভাবে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করা যাচ্ছে না।সুত্র: বিডি প্রতিদিন