তারা ফেসবুকে অতিরিক্ত পোস্ট দেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আসক্তির কারণ থাকে লাইক পাওয়া, অন্যের মনোযোগ আকর্ষণ করা বা কারও অনুমোদন পাওয়া।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারকারীদের আসক্তি নিয়ে করা সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশি সময় কাটান তাদের মধ্যে হতাশা ও উদ্বিগ্নতার লক্ষণ বেশি দেখা যায়। যখন অন্যরা সুখী জীবনযাপনের কিছু অনলাইনে পোস্ট করেন তখন নিজের ওপর রাগ করে বসেন। এতে হতাশা বাড়তে থাকে। যদিও এ ধরনের সমস্যা বাড়ছে তবুও সচেতনতার অভাবে এই আসক্তির জন্য চিকিৎসকের কাছে আসেন না অনেকে।
তারা ফেসবুকে অতিরিক্ত পোস্ট দেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আসক্তির কারণ থাকে লাইক পাওয়া, অন্যের মনোযোগ আকর্ষণ করা বা কারও অনুমোদন পাওয়া।
সাইকোথেরাপিস্ট প্রযুক্তা দেশপান্ডে বলেন, সামাজিক যোগাযোগের আসক্তির কারণে চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করতে আসেন মূলত ৪০ বছরের বেশি বয়সীরা। যদি শিশুদের ক্ষেত্রে এ ধরনের আসক্তি দেখা দিতে শুরু করে তবে অভিভাবকের উচিত হবে সেই অনাকাঙ্ক্ষিত সাইটটি বন্ধ করে দেওয়া এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় নির্ধারণ করে দেওয়া।
ফেসবুকে আসক্তি মাদকের চেয়েও খারাপ
এর আগে ২০১৯ সালে জার্নাল অফ বিহেভিয়ার অ্যাডিকশনস-এ প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, ফেসবুকে আসক্তি মাদকের চেয়েও ভয়ংকর প্রভাব ফেলে আমাদের মানসিক দক্ষতার ক্ষেত্রে। গবেষণায় ৭১ জন অংশগ্রহণকারীদের ফেসবুকে নির্ভরতা কতোটুকু তাই বোঝার চেষ্টা করা হয়েছে এর মাধ্যমে। দেখা গেছে তা অনেকটাই আসক্তির মতো, যা মাদকের মতো বিপদজনক বলা হয়েছে।
অংশগ্রহণকারীদেরকে 'লোয়া গ্যাম্বলিং টাস্ক' পরীক্ষা দেওয়া হয়। ব্যক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বিচার করতে প্রায়ই এই পরীক্ষা করে থাকেন মনোবিজ্ঞানীরা। এই পরীক্ষায় সফল হতে ব্যক্তিকে তাসের স্তুপের উপরিভাগের ধরন বিবেচনা করা সবচেয়ে ভালো স্তুপটি বাছাই করতে হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে যে অংশগ্রহণকারীরা যতো বেশি বাজে তাস বাছাই করেছেন তারা ততো বেশি সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করেন। যারা পরীক্ষায় ভালো করেছেন তারা সামাজিক মাধ্যম কম ব্যবহার করেন।
গ্যাম্বলিং টাস্কে আফিম, কোকেইন, মেথামফেটামিনসহ অন্যান্য মাদক অপব্যবহারকারী ব্যক্তিদেরকেও সামাজিক মাধ্যমে আসক্ত ব্যক্তিদের মতো সিদ্ধান্ত নিতে দেখা গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই গবেষণার প্রধান লেখক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ডার মেশি বলেন, বিশ্বের প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষ সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করেন এবং কিছু সংখ্যক ব্যক্তি এই সাইটগুলো অতিমাত্রায় ব্যবহার করেন। কিন্তু গ্রাহক যখন এর থেকে বের হতে পারে না তখন এটির ক্ষতিকর দিকও রয়েছে।
ফেসবুকে আসক্তির লক্ষণগুলো কি
১. নিজের সম্পর্কে অতিরিক্ত শেয়ার
২. যখন-তখন কারণ ছাড়াই ফেসবুকে ঢোকা
৩. প্রোফাইলের ছবিটি নিয়ে মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া
৪. ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিউজ ফিড পড়া এবং এগুলো নিয়ে সময় পার করা
৫. অনলাইনের জন্য বাস্তবের জীবনকে জলাঞ্জলি দেওয়া
৬. কাউকে বন্ধু করতে পাগলের মতো আচরণ করা
৭. ফোনের নোটিফিকেশন বা কোনো নোটিফিকেশনের চিহ্ন দেখলেই উত্তেজিত হয়ে ওঠা
৮. কোথাও গেলে সঙ্গে সঙ্গে চেক ইন করার মাধ্যমে নিজের অবস্থান জানিয়ে দেওয়া
৯. প্রায়ই মানুষকে ট্যাগ করা
১০. কাজের সময় লুকিয়ে গোপনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফেসবুক ব্যবহার করা
১১. কেউ যখন কোনো ফেসবুক পোস্টে কোনো মন্তব্য করে না তখন হতাশ হয়ে পড়া
১২. বন্ধু সংখ্যা বাড়ানোর জন্য অপরিচিতদের তালিকায় যুক্ত করার প্রবণতা
১৩. একেবারে মাঝ রাতে ঘুম থেকে ধড়ফড় করে উঠে ফেসবুক চেক করা
১৪. ফেসবুক ছাড়া জীবন অচল হয়ে পড়ছে এ রকম ভাবনা পেয়ে বসা
এই আসক্তির ফলে কি হচ্ছে
১. আবেগ-অনুভূতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে
২. হতাশা ও দুশ্চিন্তা পেয়ে বসে
৩. একাকী বোধ হয় ও নিজেকে দোষী ভাবতে শুরু করে আসক্ত ব্যক্তি
৪. কাজের সময় ঠিকঠাক থাকে না, কাজের আগ্রহ হারিয়ে যায়
৫. সময় জ্ঞান লোপ পায়, অসৎ পথে পরিচালিত হতে বাধ্য করে
৬. নিজেকে অন্যর সঙ্গে তুলনা করে ঈর্ষাবোধ হতে শুরু করে
৭. দায়-দায়িত্ব ভুলে মনোযোগ ডুবে থাকে ফেসবুকে
৮. সম্পর্ক নষ্ট হয়, ঘর ভেঙে যেতে পারে
এসবের পাশাপাশি শারীরিক সমস্যা তো আছেই। যেমন- ১. পিঠব্যথা ২. মাথাব্যথা ৩. স্পন্ডাইলিটিজ বা মেরুদণ্ডে সমস্যা ৪. ওজনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে কারও ওজন বেড়ে যায় আবার কারও ওজন কমে যায় ৫. ইনসমনিয়া বা ঘুমের ব্যাঘাত ৬. চোখে দেখতে সমস্যা।
সূত্র: ব্লুমবার্গ ও বিজনেস ইনসাইডার