নজরদারিতে আসছে এনক্রিপট মেসেজিং অ্যাপস স্কাইপ, ভাইবার, হোয়াটস অ্যাপ, স্নেপচ্যাট ও ইমো। এছাড়া, সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুক, টুইটার ও প্রাইভেট ব্লগগুলোকেও একই কায়দায় মনিটরিং (পর্যবেক্ষণ) করা হবে। এজন্য কেনা হচ্ছে ‘ওপেন সোর্স ইন্টিলিজেন্স সলিউশন’ নামের যন্ত্র।
প্রথম পর্যায়ে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ-এর জন্য একটি ও ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের জন্য আরো একটি যন্ত্র কেনা হচ্ছে।
গত ৩১শে আগস্ট পুলিশ বিভাগের বিদ্যমান সাংগঠনিক কাঠামোতে (টিওএন্ডই) বিশেষ ধরনের যন্ত্র দুটি অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে চিঠি দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। এআইজি (ইকুইপমেন্ট) মো. কামরুল আহসান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, বর্তমানে আধুনিক যুগে অপরাধী বা জঙ্গিবাদের অপতৎপরতার কৌশল ভিন্নমাত্রায় রূপ নিচ্ছে। প্রতিনিয়তই অপরাধী বা জঙ্গিবাদীরা নানা কৌশলে তাদের অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে। গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠে সংঘটিত জঙ্গিবাদসহ ঢাকার কল্যাণপুর ও অতি সমপ্রতি নারায়ণগঞ্জে জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনার সময় ইন্টিলিজেন্স ইকুইপমেন্টের প্রয়োজনীয়তা বিশেষভাবে অনুভূত হয়। বর্তমানে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ নির্মূলে পুলিশ মুখ্য ভূমিকা পালন করে আসছে। জঙ্গিবাদ, সাইবার ক্রাইমসহ অপরাধের নতুন নতুন মাত্রা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
বর্তমান ডিজিটাল প্রযুক্তির যুগে বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠী, ক্রিমিনাল ও টেরোরিস্ট গ্রুপ প্রযুক্তির সুবিধা নিয়ে নানা ধরনের সাইবার ক্রাইম (সাইবার অপরাধ), অ্যান্টি-গভর্নমেন্ট অ্যাকটিভিটিস (সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ড), অ্যাবইউস (অপব্যবহার), টেরোরিস্ট প্লট, হ্যাকিং, পর্নোগ্রাফি অপরাধ করে যাচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া (ফেসবুক, টুইটার, প্রাইভেট ব্লগ ইত্যাদি) ও এনক্রিপট মেসেজিং অ্যাপস (স্কাইপ, ভাইভার, হোয়াটস অ্যাপ, স্নেপচ্যাট, ইমো ইত্যাদি) ব্যবহারের মাধ্যমে ক্রিমিনাল বা টেরোরিস্ট গ্রুপ তাদের পরিচয় গোপন রেখে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ও অ্যান্টি- গভর্নমেন্ট অ্যাকটিভিটিস পরিচালনা করছে।
এ ধরনের সাইবার ক্রাইম নজরদারি করার জন্য বাংলাদেশ পুলিশের প্রযুক্তিগত কোনো ধরনের যন্ত্রপাতি না থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য এ ধরনের অপরাধী শনাক্ত ও পরিকল্পনাকারীদের খুঁজে বের করা অনেকাংশেই অসম্ভব। পুলিশের চিঠিতে বলা হয়, বিভিন্ন ধরনের জঙ্গিগোষ্ঠী, ক্রিমিনাল ও টেরোরিস্ট গ্রুপের মতো জঘন্য অপরাধী গোষ্ঠী খুঁজে বের করা ও তাদের কর্মকাণ্ড নজরদারি করার জন্য বাংলাদেশ পুলিশের ‘ওপেন সোর্স ইন্টিলিজেন্স সলিউশন’ কেনা অতীব প্রয়োজন ও জরুরি। এর মাধ্যমে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া, প্রাইভেট ব্লগস, ওয়েবসাইটস, এনক্রিপট মেসেজিং অ্যাপস মনিটরিংয়ের মাধ্যমে অপরাধী ও পরিকল্পনাকারীদের গোপন আস্তানা, নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনা, জঙ্গি কর্মকাণ্ড খুঁজে বের করতে অত্যন্ত কার্যকরী ও সহায়ক হবে। চিঠিতে বলা হয়, অপরাধী বা জঙ্গিবাদীদের অপতৎপরতার দ্রুত, কার্যকর ও নিরাপদ অপারেশন পরিচালনার জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি হিসেবে দুইটি ‘ওপেন সোর্স ইন্টিলিজেন্স সলিউশন’ জরুরি ভিত্তিতে কেনার জন্য পুলিশের বিদ্যমান সাংগঠনিক কাঠামো (টিওএন্ডই)-তে অন্তর্ভুক্তি একান্ত প্রয়োজন।
এতে বলা হয়েছে, ‘ওপেন সোর্স ইন্টিলিজেন্স সলিউশন’ পুলিশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কাজে ব্যবহার অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর যন্ত্রপাতি। এমন অবস্থায় দেশের বর্তমান বিরাজমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে পুলিশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা কাজে অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনার জন্য পুলিশের বিদ্যমান সাংগঠনিক কাঠামোতে দুইটি ‘ওপেন সোর্স ইন্টিলিজেন্স সলিউশন’ অন্তর্ভুক্ত করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তারা প্রস্তাবটি পেয়েছেন। এখন দুটি যন্ত্র টিওএন্ডইভুক্ত করার জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাবেন তারা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র মিললে এরপর বিষয়টি অর্থ বিভাগে পাঠানো হবে।