নোয়াখালীতে ছিলেন চোরাই গাড়ি সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য। স্থানীয় প্রশাসন তৎপর হলে বেকার হয়ে পড়েন। রোহিঙ্গা আসার পর ব্যবসা করার উদ্দেশ্য স্ত্রীসহ চলে আসেন কক্সবাজারে। খুঁজতে থাকেন চাকরি। খুঁজতে খুঁজতে ২০২০ সালের পরে হোপ ফাউন্ডেশনে স্ত্রীর চাকরি হলেও বেকার হয়ে পড়েন তিনি। এতক্ষণ যার কথা বলছিলাম তার নাম আবুল হাসান মামুন। চোরাই গাড়ি সিন্ডিকেটের সদস্য,এরপর বেকার থেকে ভুয়া সার্টিফিকেটের মাধ্যমে হয়েছেন ফ্রেন্ডশিপ এনজিওতে সুপারভাইজার। একই এনজিওতে স্ত্রীকে পাইয়ে দিয়েছেন মিডওয়াইফ ইনচার্জের পদ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৫ মাস আগেও উখিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সন্নিকটে "সেভেন ক্যান্ডল" নামক একটি কুলিং কর্ণার করতেন মামুন। তার কুলিং কর্নারে আসা যাওয়ার সুবাদে সখ্য গড়ে তোলেন বিভিন্ন এনজিও কর্মকর্তাদের সাথে। সুচতুর মামুন বহিরাগত এসব এনজিও কর্মকর্তাদের সাথে সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে শুরু করেন এনজিওতে বহিরাগতদের নিয়োগ বাণিজ্য। প্রথম প্রথম সুবিধা করতে না পারলেও পরবর্তীতে কর্মকর্তাদের মোটা অংকের টাকা চুক্তিতে কাজ করা শুরু করেন। এক্ষেত্রে তিনি সফল হন। নোয়াখালী ফেনীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে বহিরাগত যুবকদের এনে সে চুক্তিতে চাকরি পাইয়ে দিতে সহায়তা করেন। এ সময় মামুন ফ্রেন্ডশিপ এনজিওতে তার দূর সম্পর্কের বেশ কয়েকজন আত্মীয় রয়েছে বলে প্রচার করতে থাকেন। সম্প্রতি ইউএনএফপির একটি প্রজেক্ট নিয়ে বেশ তোলপাড় হয়। এনজিও সংস্থা হোপ ফাউন্ডেশন থেকে স্বাস্থ্য খাতের একটি প্রজেক্ট চলে যায় ফ্রেন্ডশিপ এনজিওতে। হোপ ফাউন্ডেশনের ১০৫ জন কর্মীর চাকরি চলে যায়। এখানে তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহৃত হয় আবুল হাসান মামুন। ফ্রেন্ডশিপ কর্মকর্তাদের সাথে দেন দরবার করে অনেকে চাকরি পেলেও এসব স্থানীয় যুবক যুবতীর পাশাপাশি মামুনের সাথে চুক্তিতে বহিরাগত অনেক কর্মীও নিয়োগ প্রাপ্ত হয়। মামুন নিজেও কুলিং কর্নার ছেড়ে ভুয়া সার্টিফিকেটের মাধ্যমে ভাগিয়ে নিয়েছেন ফ্রেন্ডশিপ এনজিও-তে সুপারভাইজারের পদ, স্ত্রী শিরিনা মাহমুদকে পাইয়ে দিয়েছেন ফ্রেন্ডশিপ এনজিওতে মিডওয়াইফ ইনচার্জের পদ। এ নিয়ে হোপ ফাউন্ডেশনে একই প্রজেক্টে কাজ করা কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করলেও মামুন কৌশলে সবকিছু তার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করেন।
তথ্য অনুসন্ধান করতে গিয়ে তার বেশ কয়েকজন সহকর্মীর সাথে আলাপ করে জানা গেছে, নোয়াখালীতে মামুন ছিলেন চোরাই গাড়ি (টানা গাড়ি) সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য। স্থানীয় প্রশাসনের নজরে পরে গেলে গত ২০২০ সালের দিকে স্ত্রীসহ চলে আসেন কক্সবাজার। গত সেপ্টেম্বরে মাসে নোয়াখালী থেকে আনা তার চোরাই গাড়ি৷ (টানা গাড়ি) কক্সবাজার পুলিশের হাতে আটক হয়। বর্তমানে যে গাড়িটি সে নিজে চালাচ্ছে তাও কাগজপত্র বিহীন একটি চোরাই মটর সাইকেল বলে জানা গেছে। তার বিরুদ্ধে রয়েছে বিভিন্ন কর্মীর টাকা আত্মসাৎসহ একাধিক অভিযোগ।
তার সাথে হোপ ফাউন্ডেশনে কাজ করা মিওয়াইফ শিরিন জানান, মামুন ২০২১ সালে বিভিন্ন মিডওয়াইফ থেকে হাইকোর্টে রিট করবে বলে কয়েক লাখ টাকা নিয়েছিল যা এখনো ফেরত দেয়নি। এছাড়াও বেশ কয়েকজন কর্মী নাম না প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ফ্রেন্ডশিপে সুপারভাইজার নিয়োগ পাওয়ার পর মামুন সাহেব বলেছেন তাকে ম্যানেজ করা ছাড়া হোপ ফাউন্ডেশন এনজিওতে একই প্রজেক্টে থাকা কোন কর্মী ফ্রেন্ডশিপ এনজিওতে নিয়োগ পাবে না। শুধু তাই নয় ফ্রেন্ডশিপ এনজিও-তে অন্যান্য পদে নিয়োগ পাওয়া কর্মীদের বেতন কমিয়ে সুপারভাইজার পদে মামুন তিন গুন বেতন বাড়িয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন একাধিক কর্মী। হোপ ফাউন্ডেশনে একই প্রজেক্টে সুপারভাইজার পদে যেখানে বেতন ছিল ২৩ হাজার টাকা, সেখানে ফ্রেন্ডশিপ এনজিও তে গিয়ে একই প্রজেক্টে সুপারভাইজার পদে চাকরির বেতন ধরা হয় ৫৭ হাজার টাকা।
এসব বিষয়ে অভিযুক্ত আবুল হাসান মামুনের সাথে আলাপকালে তিনি তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ভাই সবে মাত্র চাকরি হয়েছে, আমি সবকিছু গুছিয়ে নিচ্ছি। কর্তৃপক্ষ আমার উপর যে দায়িত্ব দিয়েছেন তা পালন করার চেষ্টা করছি।
কোন এনজিওতে চাকরি না করে ভুয়া সার্টিফিকেটের মাধ্যমে ফ্রেন্ডশিপ এনজিওতে সুপারভাইজারের মত গুরুত্বপূর্ণ পদে কিভাবে চাকরি পেলেন? এ প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে মামুন বলেন, চাকরি না পাওয়া বেশ কয়েকজন কর্মী তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন,এসব কিছু তাদের ষড়যন্ত্রের অংশ। তবে ফ্রেন্ডশিপ এনজিওর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে তার সম্পর্ক থাকার কথা অস্বীকার করেননি তিনি।
তিনি আরো বলেন, আমি চাকরির ক্ষেত্রে স্থানীয়দের প্রাধান্য দিচ্ছি, কিন্তু কর্তৃপক্ষ নিয়মের বাইরে যেতে চান না। তাই নিয়ম মাফিক সব করা হচ্ছে। বেতন যা বেশি ধরা হয়েছে তা কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত, এখানে আমার কোন হাত নেই।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে ফ্রেন্ডশিপ এনজিওর প্রজেক্ট ম্যানেজার ডাক্তার আশিক আনোয়ার বলেন, ইউএনএফপি থেকে পাওয়া প্রজেক্টে যাচাই-বাছাই করে কর্মী নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। আমরা অক্টোবরের ১ তারিখ থেকে সেন্টারগুলো চালু করেছি। কিছু কর্মী ইতিমধ্যে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সুপারভাইজার হিসেবে মামুনকে নিয়োগ দেয়ার ব্যাপারে ফ্রেন্ডশিপ এনজিওর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ডাক্তার লামিয়া ভালো বলতে পারবেন বলে জানালেও অফিশিয়ালি বক্তব্যের জন্য কমিউনিকেশন অফিসারের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ করেন।
এ বিষয়ে ফ্রেন্ডশিপ এনজিওর কমিউনিকেশনের দায়িত্ব থাকা জুনায়েদ আলী সাকির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আপনার কিছু জানার থাকলে কি,কি প্রশ্ন আছে আমাকে লিখিত আকারে দেন আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে লিখিত আকারে আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো।