চলছে পর্যটন মৌসুম। তাই বর্তমানে পর্যটকে সরগরম কক্সবাজার। বড়দিনের ছুটিতে প্রায় লক্ষাধিক পর্যটক কক্সবাজারে এসেছে বলে ধারণা পর্যটন ব্যবসায়ীদের। এতে বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে ব্যবসায়ীরা।
সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) সকালে সমুদ্রসৈকতের লাবণী, সুগন্ধা, কলাতলী পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড়। এই তিন পয়েন্টে প্রায় ২০ হাজার পর্যটক ছিল সেসময়। তাদের মধ্যে কেউ সমুদ্র স্নান আবার কেউ জেডস্কি, বিচ বাইক ও ঘোড়ায় চড়তে ব্যস্ত। অনেকেই কিটকটে বসে সমুদ্রের অপরূপ সৌন্দর্য দর্শন করছে। বালিয়াড়িতে নাটাই ঘুরিয়ে অনেকেই হারিয়ে গেছে শৈশবে। রঙ—বেরঙের ঘুড়ি উড়িয়ে তাদের সাথে যেন সখ্যতা নীল আকাশের। পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব ও প্রিয়জনদের সাথে আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতেছেন।
ভারতীয় পর্যটক রাহুল পেটেল। তিনি একজন ব্লগার। নিজের ইউটিউব চ্যানেলে ভ্রমণ অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। তিনি বলেন, ‘কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত বিশাল ও চমৎকার। তবে এখানে অধিকাংশ পর্যটক বাংলাদেশের। তাই এখানে বিদেশি পর্যটক বাড়াতে নিরাপত্তাসহ নানা সুযোগ—সুবিধা বাড়ানো দরকার।’
ঢাকার আরামবাগ থেকে আগত আফাজ মাহমুদ ও সেলিনা মাহমুদ নামের এক পর্যটক দম্পতি মনের আনন্দে সূযার্স্তের ছবি তুলছিলেন। তারা জানান, মন যেন চায় বারে বারে কক্সবাজারে আসি। ১২ মাস এই সৈকতে থাকে বিভিন্ন রূপ। শীতকালের প্রকৃতিটা আরও লোভনীয়। তাই কক্সবাজারে না এসে পারা যায় না।
চট্টগ্রামের আনোয়ারা থেকে আগত শিক্ষন নারায়ণ দাশ বলেন, ‘ইট পাথর ও কংক্রিটের শহর ছেড়ে পরিবারের সাথে নিরিবিলিতে সময় কাটাতে কক্সবাজারে আসা। তবে বড়দিনের ছুটিতে এখানে পর্যটকে ঠাসা। সবার আনন্দ মিশেলে পরিবেশটা উৎসবে পরিণত হয়েছে। যা দেখে ভালোই লাগছে।
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ছাড়াও ইনানী পাথুরে বিচ, হিমছড়ি, দরিয়া নগর, পাটুয়ার টেক, সেন্টমার্টিন, সোনাদিয়া, আদিনাথ মন্দির, রামু বৌদ্ধ বিহারসহ দর্শনীয় স্থানগুলোতে এখন পর্যটকদের ভিড়।
ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অফ কক্সবাজারের (টুয়াক) সভাপতি তোফায়েল আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল কবির পাশা বলেন, ‘সেন্টমার্টিন ও কক্সবাজার শহরে পর্যটকের সংখ্যা বেশি। পর্যটন মৌসুম জুড়ে পর্যটকের আনাগোনা থাকবে। তাদের ভ্রমণ আনন্দময় করতে টুয়াকের সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।’
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার ও সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ জানান, গত অক্টোবর থেকে হরতাল ও অবরোধের কারণে পর্যটন ব্যবসায় ধস নেমেছিল। এখন পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। বড়দিন ও থার্টিফার্স্ট নাইটে আশানুরূপ ব্যবসা হবে। ইতোমধ্যে থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ রুম বুকিং হয়ে গেছে। অবশিষ্ট রুম কয়েকদিনের মধ্যে বুকিং হয়ে যাবে।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. আপেল মাহমুদ বলেন, ‘পর্যটকেরা কক্সবাজারবাসীর অহংকার। তারা এখানে এসে হয়রানি হলে কক্সবাজারের সুনাম ক্ষুণ্ণ হবে। তাই পর্যটকদের নিরাপদে ভ্রমণের দায়িত্ব সবার। তাদের কোনো রকম হয়রানি করা হলে তা সহ্য করা হবে না। এজন্য নিরলসভাবে কাজ করছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।’
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, ‘পর্যটকদের কক্সবাজারে নিরাপদে ভ্রমণের সকল ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের আলাদা পর্যটন সেল রয়েছে। সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিচ কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সমুদ্র সৈকতসহ পর্যটন জোনে কাজ করছে। পর্যটক হয়রানি রোধে পরিকল্পিত উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পাঠকের মতামত