
বগুড়া জেলার সোনাতলা উপজেলার হলিদাবাগ এলাকার আবদুল হামিদের ছেলে মো. সবুজ মামুন। তার সাথে বন্ধুত্ব করেন কক্সবাজারের টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের আবদুল আমিন। ২ বছর ধরে বন্ধুত্বের সম্পর্ক নিবিড় হয়ে একে অপরের বাড়িতে বেড়ানো শুরু করেন। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বেড়াতে আসা বন্ধু ও তার ভাইপোকে অপহরণ করে তুলে দেন রোহিঙ্গা অপহরণকারী চক্রের সদস্যদের কাছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী মুক্তিপণও আদায় করে নেন। তবে শেষ পর্যন্ত পুলিশের হাতে ধরা পড়ে ভেস্তে গেলো সব কিছুই।
টানা ২ দিনের অভিযানে অপহৃত দুইজনকে উদ্ধারের পর মঙ্গলবার (৪ মার্চ) বিকালে এসব তথ্য জানিয়েছেন টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন।
উদ্ধার হওয়া অপহৃত মো. সবুজ মামুন (৩০) ছাড়া তার ভাইপো মেহেদি হাসান টিটু (৩০) বগুড়ার জেলার খান্দা ভিআইপি রোডের মৃত আহমদ আলী শেখের ছেলে।
এ ঘটনায় অপহৃতদের উদ্ধার করে ৩ জনকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভীবাজার এলাকার মৃত ইসলাম মিয়ার ছেলে খোরশেদ আলম (৩৫), হোয়াইক্যং ইউনিয়নের নয়াবাজার এলাকার মৃত আবুল হোসেনের ছেলে মো. ইউসুফ (৩০) ও মৌলভি বাজার এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে মো. ফয়সাল (১৯)।
পুলিশ জানায়, গত ২৬ জানুয়ারি বেড়াতে আসার পর বন্ধু আবদুল আমিন দুইজনকে জিম্মি করে তুলে দেন রোহিঙ্গা অপহরণ চক্রের সদস্যদের হাতে। এরপর দুই জনকে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে ভিডিও পাঠিয়ে মো. সবুজ মামুনের স্ত্রীর কাছে দাবি করা হয় ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ। দাবি করা মুক্তিপণের জন্য বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে পাঠানো হয় ১ লাখ ২৫ হাজার টাকাও। এরপরও বন্ধুত্বে ফাঁদে অপহৃত দুইজনের মুক্তি মিলেনি।
টেকনাফ থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন জানান, গত ২ মার্চ মামুনের বোন সুলতানা বেগম থানায় অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় বিষয়ে থানায় লিখিত এজাহার দায়ের করেন। এটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করতে পুলিশ তদন্ত শুরু করে। তদন্তের এক পর্যায়ে মো. সবুজ প্রকাশ মামুন ও মেহেদি হাসান টিটু দুইজন মিলে হ্নীলার আবদুল আমিনের বাড়িতে বেড়াতে এসে অপহরণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। মূলত আবদুল আমিনের বাড়িতে আসার পর রাতে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গা অপহরণকারী চক্রের হাতে হস্তান্তর করা হয়।
তিনি বলেন, এর পর মামুনের স্ত্রীর মোবাইল ফোনে পাঠিয়ে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি এবং বিকাশ ও নগদ অ্যাকাউন্টে প্রেরিত মুক্তিপণের ১ লাখ ২৫ হাজার টাকার সূত্র ধরে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অপহরণ চক্রের সক্রিয় ৩ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে উদ্ধার করা হয় অপহৃতদের।
গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ওসি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতরা কৌশলে মুক্তিপণ আদায় করে অপহরণ চক্রের সদস্যদের প্রদান করেন। এতে অনেকের নাম পাওয়া গেছে। তাদের ধরতে অভিযান চলছে। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ৩ জনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
ওসি জানিয়েছেন, বন্ধুত্বের ফাঁদে অপহরণে সহায়তাকারী আবদুল আমিনকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় অপহরণকারী একটি পুরো চক্রকে শনাক্ত করতে পেরেছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ মাসে টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা থেকে ২২৯ জনকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে, একই সময়ে উখিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৮৭ জনকে অপহরণ করা হয়
পাঠকের মতামত