আহসান সুমন::
“আমার সব থেকে ভালো বন্ধু হলো আয়না, কারন আমি যখন কাঁদি তখন সে হাঁসে না”। তাছাড়া “প্রত্যেক নতুন জিনিসকেই উৎকৃষ্ট মনে হয়। কিন্তু, বন্ধুত্ব যতোই পুরাতন হয়, ততোই উৎকৃষ্ট ও দৃঢ় হয়”। এসব বাণী শুধুই বন্ধুতার জন্য।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখায় আরেকটু ভালভাবে স্পষ্ট হয়েছিলো বন্ধুতা কি। তিনি লিখেছিলেন- “আসবে আবার আশিন-হাওয়া, শিশির-ছেঁচা রাত্রি, থাকবে সবাই-থাকবে না এই মরণ-পথের যাত্রী! আসবে শিশির-রাত্রি! থাকবে পাশে বন্ধু স্বজন, থাকবে রাতে বাহুর বাঁধন, বঁধুর বুকের পরশনে আমার পরশ আনবে মনে-বিষিয়ে ও-বুক উঠবে-বুঝবে সেদিন বুঝবে”।
“তোমার সখার আসবে যেদিন এমনি কারা-বন্ধ, আমার মতন কেঁদে কেঁদে হয়তো হবে অন্ধ-সখার কারা বন্ধ! বন্ধু তোমার হানবে হেলা ভাঙবে তোমার সুখের মেলা, দীর্ঘবেলা কাটবে না আর, বইতে প্রাণের শান-এ ভার মরণ-সনে বুঝবে, বুঝবে সেদিন বুঝবে”।
‘পুরো পৃথিবী একদিকে, আর আমি অন্য দিক/সবাই বলে করছো ভুল, আর তোরা বলিস ঠিক/তোরা ছিলি, তোরা আছিস/ জানি তোরাই থাকবি/বন্ধু বোঝে আমাকে, বন্ধু আছে আর কি লাগে ?’ শিল্পী তপুর গাওয়া গানটাও মনে পড়ে। বন্ধুত্ব ঠিক যেন ঠিক এমনই।
মানুষ যুগ যুগ ধরে এই বন্ধুত্বকে উদ্যাপন করেছে। কিন্তু আগস্টের প্রথম রোববার মানে আজ যে বন্ধু দিবস সেটা এল কি করে ? মজার ব্যাপার হচ্ছে, বন্ধু দিবস দুই বন্ধুর অমর কোনো কাহিনী নয়। সম্পূর্ণ ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যেই এর প্রচলন শুরু হয়েছিল।
১৯৩০ সালে এই কাজটি করেছিলেন বিশ্বখ্যাত উপহারসামগ্রী ও কার্ড বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান হলমার্কের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা জয়েস হল। তিনি প্রতিবছর ২ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রে বন্ধুত্ব দিবস উদ্যাপনের বিষয়টি সামনে আনেন। এদিন কার্ড আদান-প্রদানের মাধ্যমে বন্ধু দিবস পালন করার প্রচলন শুরু হয়। অবশ্য তাঁর সে প্রচেষ্টা অতোটা সফল হয়নি। ১৯৪০ সাল নাগাদ মানুষ বুঝতে পারে, এটা কোনো মহৎ উদ্দেশ্য নয়, বরং হলমার্কের কার্ড ব্যবসা বাড়ানোর ফন্দি মাত্র। এরপর থেকে বন্ধু দিবস উদ্যাপন একরকম বন্ধই হয়ে যায়। জয়েস হলের উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্রে হালে পানি না পেলেও ইউরোপ-এশিয়ার বিভিন্ন দেশে একসময় ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে বন্ধু দিবস উদ্যাপনের রেওয়াজ। তবে এই দিবস উদ্যাপনের ব্যাপারটিতে মোড় ঘুরিয়ে দেন প্যারাগুয়ের চিকিৎসক যার্মন আর্থেমিও ব্রেচ। তিনি ১৯৫৮ সালের ২০ জুলাই বিশ্বব্যাপী বন্ধু দিবস পালনের প্রস্তাব দেন। এরপরই বিশ্বব্যাপী ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে বন্ধুত্ব, ঐক্য ও ভালোবাসা ছড়িয়ে দিতে গঠন করা হয় ‘বন্ধুত্ব ক্রুসেড’। পরবর্তী সময়ে জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান ৩০ জুলাইকে বন্ধু দিবস ঘোষণা করেন। জাতিসংঘ জুলাইয়ের ৩০ তারিখ বন্ধু দিবস পালন করলেও বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আগস্ট মাসের প্রথম রোববার বন্ধু দিবস হিসেবেই পালিত হয়। সবাইকে বন্ধু দিবসের শুভেচ্ছা…।
# তথ্যসূত্র কৃতঙ্গতা : ফ্রেন্ডশিপ ডে ওয়েবসাইট ও ইন্ডিয়া টুডে।
লেখক ঃ জেলা প্রতিনিধি, এসএ টেলিভিশন।
বার্তা সম্পাদক, দৈনিক আজকের কক্সবাজার।
ফোন : ০১৮১৮-১৩১৩৩৭
পাঠকের মতামত