[caption id="attachment_45048" align="alignleft" width="541"] সাদিয়া নাবিলার
[/caption]সংস্কৃতিমনা পরিবারে জন্ম, তাই নাচ, গান আর অভিনয়ের পোকটা ছোট বেলা থেকেই ছিল সাদিয়া নাবিলার। তবে সব কিছুর আগে পড়াশোনা। যাই করা হোক না কেন এই জায়গাটায় কোন ছাড় দেয়া চলবে না। পরিবার থেকে এই জায়গাটায় যেমন চাপ ছিল, নিজের মধ্যেও ছিল পড়াশোনার স্পৃহা। তাই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পরই এই মেয়ে পাড়ি জমান অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায়। সময়টা ছিল ২০১২ সাল। সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করার তিন মাসের মাথায় উড়াল দেন। ভর্তি হন ইউনিভার্সিটি অব ক্যানবেরায়। তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে স্নাতক করেন। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশি এই তরুণীর অভিষেক হয় বলিউডের চলচ্চিত্রে।
‘পেরেশান পারিন্দা’ নামের এই হিন্দি ছবির পরিচালক দেবেশ প্রতাপ সিং; যা ছিল সাদিয়া নাবিলার ভাবনার অতীত। পুরো বিষয়টি স্বপ্নের মতো মনে করছেন তিনি।
বাংলাদেশের মেয়ে সাদিয়া অভিনীত ‘পেরেশান পারিন্দা’ ছবিতে আরও অভিনয় করেছেন সিঙ্গাপুর, নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার কয়েকজন শিল্পী। ছবির গল্প আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ে। এক নায়কের বিপরীতে দুই নায়িকা। সাদিয়ার বিপরীতে অভিনয় করেছেন মিরাজ শাহ, তিনি থাকেন অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল মতিনের মেয়ে সাদিয়া আন্দালিব নাবিলার জন্ম সৈয়দপুর। ছোটবেলা থেকে বেড়ে ওঠেন সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে। মা-বাবার সমর্থন ছিল পুরোপুরি। ছয় বছর আগে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার পরও এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত ছিল। একই বছরে যোগ দেন ক্যানবেরার ‘ভিক্টোরিয়াস মডেল এজেন্সি’তে। মডেল হিসেবে যাত্রা শুরু তখনই। ২০১৪ সালের শেষের দিকে ‘ক্যানবেরা স্কুল অব বলিউড ড্যান্সিং’-এ যোগ দেন নাচের প্রশিক্ষক হিসেবে। এখনো কাজ করছেন সেখানে।
সাদিয়া বলেন, ‘আমার স্বপ্নের শুরু হতে পারত ঢাকায়। কিন্তু এইচএসসি পাসের পর আমাকে অস্ট্রেলিয়া চলে আসতে হয়। ঢাকায় যাওয়ার সুযোগ হয়নি। বলতে পারেন, ভাগ্য সহায় হয় অস্ট্রেলিয়া আসার পর। ভিক্টোরিয়াস মডেল এজেন্সিতে দেড় বছর কাজ করার পর হাউস মডেলস নামের আরেকটি নামী প্রতিষ্ঠান থেকে ডাক পাই। নানা দেশের নানা সংস্কৃতির মানুষের সাথে যোগাযোগ তৈরি হয়। তত দিনে রুপালি পর্দায় কাজ করার স্বপ্নটা আরও ডানা মেলতে শুরু করে। পড়াশোনার ফাঁকে চলতে থাকে স্বপ্ন পূরণের মিশন।’
২০১৫ সালে সাদিয়ার ডাক পড়ে হাউস মডেলস থেকে। নামীদামি মডেলরা এই এজেন্সির অধীনে কাজ করেন। এদের নির্বাচন প্রক্রিয়াও বেশ কঠিন। বললেন, ‘ওরাই আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। আমি সানন্দে সাড়া দিই।’ বলিউডের ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পাওয়া সহজ হয়েছিল এক সুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার কারণে। গত বছর মার্চে অনুষ্ঠিত অস্ট্রেলিয়ায় ‘মিস ইন্ডিয়া ওয়ার্ল্ডওয়াইড ২০১৭’ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রথম রানার-আপ হন বাংলাদেশের মেয়ে সাদিয়া। এটি আয়োজন করে জি টিভি অস্ট্রেলিয়া। উপমহাদেশের প্রতিযোগীদের নিয়ে আয়োজিত এ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের সম্মানে এক নৈশভোজের আয়োজন করা হয় ক্যানবেরায়। সেখানে বলিউডের নায়ক জন অ্যাব্রাহামের সাথে একটি গানে পারফর্ম করেন সাদিয়া।
‘পেরেশান পারিন্দা’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য সাদিয়াকে এক মাসের বেশি সময় দিতে হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ দিন একটি কর্মশালায় অংশ নেন। বললেন, ‘আমি যেহেতু বাংলাদেশের মেয়ে, তাই আমাকে ভালোভাবে হিন্দি শিখতে হয়েছে। ১৫ দিন যাঁর সাথেই কথা বলতাম, হিন্দিতে বলতে হতো। এরপর শুটিং করেছি। ভারতীয় অনেকে শুটিংয়ের সময় আমার হিন্দি বলা নিয়ে ভেংচি কাটত। কিন্তু আমি তাতে দমে যাইনি।’
সাদিয়ার নানাবাড়ি ও দাদাবাড়ি শরীয়তপুরে। বাবা-মায়ের পাশাপাশি তাদের আত্মীয়দের কাছ থেকেও সমর্থন পেয়েছেন সাদিয়া। বললেন, ‘আমি অনেক ভাগ্যবতী, কারণ থাকা সত্ত্বেও অনেকে পরিবারের সমর্থন পায় না। অথচ আমার যেকোনো সমস্যায় পরিবার ছিল পাশে।’
ভারতে ছবিটি মুক্তি পেলেও এখন পর্যন্ত তা প্রেক্ষাগৃহে বসে দেখার সুযোগ হয়নি। তবে ছবির সাথে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন মিলে প্রজেক্টরে ছবিটি দেখেছেন। বললেন, ‘আমি একজন সাধারণ দর্শক হিসেবেই দেখেছি। বলিউডে নিজের ছবি, এ এক অন্য রকম অভিজ্ঞতা। স্বপ্নের মতো। সৈয়দপুরের স্কুলপড়ুয়া ছোট্ট মেয়েটির প্রথম ছবি, তা-ও বলিউডে মুক্তি পেয়েছে—এটা সত্যিই স্বপ্ন।’
অস্ট্রেলিয়ায় থাকলেও বাংলাদেশে যখন এসেছেন, কিছু কাজ করেছেন সাদিয়া। গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর গত বছর নভেম্বরে বাংলাদেশে আসেন। দুই মাস ছিলেন। তিনটি বিয়ের দাওয়াতে অংশ নিতে এসেছিলেন। যাওয়ার আগে এখানে কয়েকটি কাজ করেছেন। এর মধ্যে বিজ্ঞাপনচিত্র যেমন ছিল, তেমনি ছিল স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র। বলিউডের ছবিতে অভিষেক হলেও সাদিয়ার ইচ্ছা বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে কাজ করার। বললেন, ‘সুযোগ পেলে জাজ মাল্টিমিডিয়ার ছবিতে কাজ করতে চাই। নায়ক হিসেবে শাকিব খান কিংবা আরিফিন শুভ হলে খুব ভালো হয়।’
বাংলাদেশের ছবিতে কেন কাজ করবেন? সাদিয়া বললেন, ‘বাংলাদেশে এখন অনেক ভালো কাজ হচ্ছে। জাজ মাল্টিমিডিয়া উন্নত মানের ছবি বানাচ্ছে। অনেকে হয়তো ভাবছেন, বলিউডের ছবিতে অভিনয় করে অনেক কিছু করে ফেলেছি। আমি কিন্তু তা মনে করছি না। তবে এটাও ঠিক, অনেক কিছু জেনেছি। অন্য রকম অভিজ্ঞতা হয়েছে। এ অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে আমার দেশে কাজ করতে সহযোগিতা করবে।’
কথার একেবারে শেষ পর্যায়ে সাদিয়া বললেন, ‘বাংলাদেশে যদি কাজের সুযোগ বাড়ে, তাহলে ওখানেই সময় দেব।’