সরওয়ার আলম শাহীন, উখিয়া নিউজ ডটকম::
মিয়ানমার থেকে সেদেশের সেনাবাহিনী,পুলিশ ও রাখাইন সম্প্রদায়ের নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গার চর নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর অবস্থানের পর ঠেঙ্গারচর বিরোধী কয়েকটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট রোহিঙ্গাদের কক্সবাজার থেকে ঠেঙ্গার চর নিয়ে যাওয়া ঠেকাতে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে বলে ক্যাম্প সুত্রে জানা গেছে। এছাড়াও ঠেঙ্গারচর নিয়ে যাওয়ার আংশকায় বস্তিতে থাকা রোহিঙ্গারা প্রভাবশালী মহল ও দালালদের সহয়তায় সুযোগ বুঝে যে যেভাবে পারছে বস্তি এলাকা ছেড়ে গাড়ী যোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাড়ি জমাচ্ছে। রোহিঙ্গাদের উপর আইনশংখলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রন না থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিমত।
সরজমিন বালুখালী ও কুতুপালং বস্তি পরিদর্শন করে দেখা গেছে, মিয়ানমার থেকে সীমান্ত পেরিয়ে এসে রোহিঙ্গারা বালুখালী বস্তিতে প্রবেশ করেছে। মালেয়শিয়া থেকে আসা ত্রান সামগ্রী পাওয়ার আশায় সম্প্রতিক সময়ে সীমান্ত পয়েন্টগুলো দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বেড়েছে বলে সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাস করা জাফর ইকবাল সহ একাধিক গ্রামবাসী জানান। বালুখালী বস্তিতে সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গা আলী হোসেন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বৃদ্ধির কথা স্বীকার করে বলেন, বস্তিতে অবস্থান করা রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে থাকা তাদের আত্বীয় স্বজনদের কাছে মালেয়শিয়া থেকে বিপুল পরিমান ত্রান সামগ্রী আসার কথা পৌছে দিচ্ছে। তারা বাংলাদেশে বিভিন্ন এনজিওগুলোর দেওয়া সুযোগ সুবিধার কথাও বলে বেড়াচ্ছে মোবাইলের মাধ্যেমে। এতে দলে দলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ সীমান্ত পেরিয়ে বালুখালী ও কুতুপালং বস্তিতে প্রবেশ করছে। আলী হোসেনের মতে,প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ টি রোহিঙ্গা পরিবার বালূখালী ও কুতুপালং বস্তিতে প্রবেশ করছে। সুত্রে জানা গেছে, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে উৎসাহ যোগাচ্ছে এলাকার কয়েকটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। এসব সিন্ডিকেট দালালদের মাধ্যমে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে কাজ করে যাচ্ছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গারা যাতে ঠেঙ্গার চর না যায় তারও দিক নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের। ঠেঙ্গারচর নিয়ে রোহিঙ্গাদের ভেতর ঠেঙ্গারচর বিরোধী মনোভাব তৈরীর পাশপাশি আন্তজার্তিক ভাবেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উক্ত প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। এতে রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ দুটি এনজিও সংস্থাও জড়িয়ে পড়েছে বলে স্থানীয় জনগনের অভিযোগ। বালুখালী গ্রামের রওশর আলীর মতে, বালুখালী ও কুতুপালং বস্তিতে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের জন্য কোটি কোটি টাকার প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছে কয়েকটি এনজিও সংস্থা,তাছাড়া স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী সরকারী বনবিভাগের জায়গায় রোহিঙ্গাদের জন্য ঝুপড়ি ঘর বানিয়ে মাসিক লাখ লাখ আয় করে যাচ্ছে। তারা কিছুতেই চাচ্ছেনা রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গারচর নিয়ে যাওয়া হৌক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা জানান, সরকারের সিদ্ধান্তে তারা যে কোন এলাকায় বসবাস করতে রাজি,তবে আমাদের মাঝিরা বলেছে ঠেঙ্গারচর নাকি ১২ মাস পানির উপর ভাসে। তাই রোহিঙ্গারা ঠেঙ্গার চর যেতে উৎসাহী নয়। এদিকে সরকার ঠেঙ্গার চর নিয়ে কঠোর অবস্থান নেওয়ায় সুযোগ বুঝে বস্তি ছেড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে বসবাসকারী নিকটাত্মীয় স্বজনদের কাছে যাওয়াসহ মিশে যাচ্ছে লোকালয়ে।অসংখ্য রোহিঙ্গা পরিবার প্রতিদিন কুতুপালং বালুখালী বস্তি ছেড়ে অন্যত্রে চলে যাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তি ব্যবস্থাপনা কমিটির সেক্রেটারী মোহাম্মদ নুর জানায়, কুতুপালং বস্তির ঠিকানায় এসে রোহিঙ্গারা প্রথমে কয়েকদিন আশ্রয় নিলেও পরবর্তীতে অধিকাংশ রোহিঙ্গা কাউকে না জানিয়ে অন্যত্রে চলে যাচ্ছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য বখতিয়ার আহমদ জানান, অনিবন্ধিত ও সদ্য অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা অবাধ বিচরণ করার সুযোগ পেয়ে তাদের পছন্দের জায়গায় চলে যেতে সক্ষম হচ্ছে। যেহেতু এসব রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার তেমন কোন দায়ী দায়িত্ব নেই বললেই চলে। একথার সত্যতা স্বীকার করে ক্যাম্প ইনচার্জ শামশুদ্দোজা জানান, তিনি শুধু নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ করছে। এদের খাদ্য সামগ্রী সরবরাহ দিচ্ছেন ইউএনএইচসিআর। আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ ও আনসার সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। অনিবন্ধিত রোহিঙ্গার ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে ক্যাম্প ইনচার্জ জানান, তাদের ব্যাপারে তার কোন দায় দায়িত্ব নেই। তবে আইনশৃঙ্খলার অবনতি হলে ক্যাম্প পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, অনিবন্ধিত রোহিঙ্গারা তাদের ইচ্ছামত চলাফেরার সুযোগ পেয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাড়ি জমাচ্ছে। এমনকি বিদেশেও অনেক রোহিঙ্গা চলে যাচ্ছে। সম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম বিমান বন্দর থেকে ১৪ জন রোহিঙ্গাকে আটকের ঘটনা তারই উদাহারন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা ছড়িয়ে ছিটিয়ে নিরাপদ অবস্থান নেওয়াটা দেশ ও জাতির জন্য একদিন হুমকি হয়ে দাড়াঁতে পারে। তাছাড়া সরকার এসব রোহিঙ্গাদের ঠেঙ্গারচর পাঠানোর কার্যক্রম শুরু করলে তখন কিন্তু অধিকাংশ রোহিঙ্গা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে। তাই প্রশাসনের উচিত এই মুহুর্তে অনুপ্রবেশকারী অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণ করা ।