উখিয়া নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া গণতান্ত্রিক বিপর্যয় দেশের বহুমুখী রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দিয়েছে।বাংলাদেশ নির্বাচনের মওসুমে প্রবেশ করছে। এটা বহুদলীয় ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে পারে আবার একদলীয় শাসনকে আরও সংহত করতে পারে। এ অবস্থায় রোহিঙ্গা সমস্যার মতো বাংলাদেশের আরেকটি সমস্যার দিকেও আন্তর্জাতিক মনোযোগ দেয়া দরকার, সেটা হলো বাংলাদেশের অবনতিশীল গণতান্ত্রিক চরিত্র।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের অতি সাম্প্রতিক মানবাধিকার রিপোর্টে ২০০৮ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কঠোর রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তারা সমালোচকদের বিরুদ্ধে দমনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে মিডিয়া প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে হামলা, বিচারবিভাগকে দলীয়করণ এবং বিরোধী রাজনৈতিক নেতাদের কারাগারে পাঠানো। দেশের প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের বিরুদ্ধেও অভিযোগ রয়েছে, ২০১৩-১৪ সালে নির্বাচন বয়কটকালে তারা ব্যাপক মাত্রায় সহিংসতা চালিয়েছে এবং ওই সহিংসতায় বহু মানুষ নিহত হয়।
এই রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা সুষ্ঠু নির্বাচনকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। ফেব্রুয়ারিতে, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। দুর্নীতির এক মামলায় তাকে এই সাজা দেয়া হয়। বিরোধী দল এই মামলাকে পক্ষপাতমূলক মনে করে। এই রায়ের কারণে বেগম জিয়ার আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা না-ও হতে পারে। কারণ সংবিধানে রয়েছে কেউ কোন অপরাধে দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত হলে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। এই রায়ের ফলে বিএনপি নির্বাচন বয়কটও করতে পারে। ২০১৯ সালের জানুয়ারির আগেই এ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যে আরও যে সব সমস্যা রয়েছে, সেগুলো হলো দুর্নীতি, দুর্বল শাসনকাঠামো, দারিদ্র, জনসংখ্যা ও পরিবেশগত চাপ এবং ইসলামী জঙ্গিবাদ। ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইন্সটিটিউটের (আইআরআই) একটি জনমত জরিপে দেখা গেছে, কাগজে কলমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন হলেও বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। বাংলাদেশের জনগণ কর্মসংস্থানের নিদারুণ অভাব, উচ্চ দ্রব্যমূল্যসহ অন্যান্য বিভিন্ন অর্থনৈতিক অভিযোগ করেছে। তারা আরও বলেছে, ঘুষ এবং এ ধরণের আরও দুর্নীতির কারণে চাকুরি পাওয়া, আইনের শাসন, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং অন্যান্য সাধারণ সেবা পাওয়াটা সীমিত হয়ে গেছে।
এছাড়া, ব্যক্তিগত নিরাপত্তার অবস্থাও করুণ। বাংলাদেশের নারীরা বিশেষ করে বলেছেন, তারা যৌন হামলার ভয়ে থাকেন এবং এ ক্ষেত্রে বিচার পাওয়ারও সুযোগ নেই। নাগরিকদের কাছে দুর্নীতি, রাজনৈতিক সহিংসতা এবং অস্বচ্ছ নির্বাচনী প্রক্রিয়া প্রধান বেদনার বিষয়। তাই গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক দলগুলোর নেতিবাচক অবস্থার পরও গণতন্ত্রের ব্যাপারে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন বাংলাদেশীরা।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সুযোগ রয়েছে, তারা আসন্ন নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে নবায়ন করতে পারে। কার্যকর, দায়িত্বশীল এবং সক্রিয় সরকারী ও বিরোধীদল হিসেবে ভূমিকা রাখতে পারে। তবে, এ জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে এবং প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
পাঠকের মতামত