অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট অব পিসের সাউথ এশিয়া প্রোগ্রামসের ভিজিটিং এক্সপার্ট জেফ্রি ম্যাকডোনাল্ড। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের টম ল্যানটস হিউম্যান রাইটস কমিশনের প্যানেলে আয়োজিত আলোচনায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।
‘হিউম্যান রাইটস ইন বাংলাদেশ: অ্যান আপডেট’ শীর্ষক আলোচনাটি ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিনিধি পরিষদের এই সংস্থা আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের প্রচার, সুরক্ষা ও সমর্থনে কাজ করে।
ব্রিফিংয়ের আয়োজক কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট সদস্য জেমস পি ম্যাকগভর্ন ও রিপাবলিকান সদস্য ক্রিস্টোফার এইচ স্মিথ। তাঁরা এই কমিশনের কো-চেয়ারম্যান। ব্রিফিংয়ের সঞ্চালনায় ছিলেন লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের বিদেশি আইনবিশেষজ্ঞ তারিক আহমেদ।
জেফ্রি ম্যাকডোনাল্ড বলেন, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশে যে জাতীয় নির্বাচন হতে যাচ্ছে, তা হবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক বাংলাদেশি এবং আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক দেশটির সর্বশেষ দুটি জাতীয় নির্বাচন খুবই ত্রুটিপূর্ণ, সহিংসতাপূর্ণ ও অনিয়মে ভরা ছিল বলে মনে করেন। যে দলই জয়লাভ করুক না কেন, রাজনৈতিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা, জনপ্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি বাংলাদেশের মানুষের বিশ্বাস পুনরুদ্ধারে সে দেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দরকার।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংসদ নির্বাচনের প্রায় পাঁচ মাস বাকি আছে। সরকারের এমন একটি পরিবেশ তৈরি করার প্রয়োজন যাতে সব দল , ধর্ম ও মতাদর্শের জনগণ নির্বাচনের ওপর আস্থা রাখে।
আলোচনার সঞ্চালক তারিক আহমেদ বলেন, বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের একটি অনুপ্রেরণাদায়ক গল্প হিসেবে বর্ণনা করেছে। বিশ্বব্যাংকের তথ্যমতে, দেশটি রেকর্ড সময়ের মধ্যে দারিদ্র্য কমিয়েছে। চার দশকের মধ্যে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। অর্থনৈতিক সাফল্য সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ক্ষমতার ক্রমবর্ধমান কেন্দ্রীভূতকরণ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
আলোচনায় এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন অ্যান্ড এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টারের লিয়াজোঁ কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি আগের মতোই অত্যন্ত উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে। যদিও র্যাব ও এর শীর্ষ কর্মকর্তাদের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় একটা তাৎপর্যপূর্ণ প্রভাব দেখা গেছে। র্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কমেছে। পরিসংখ্যান বলছে, এই নিষেধাজ্ঞা অনেক জীবন বাঁচাতে সহায়ক হয়েছে। বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন আসন্ন। জনগণ ভোট দিতে উন্মুখ। কিন্তু একটি বিশ্বাসযোগ্য, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টিকে সরকার কঠিন করে তুলেছে। বাংলাদেশিদের যে মূল্য গুনতে হচ্ছে, তার মাত্রা কমিয়ে আনতে হিউম্যান রাইটস কমিশনকে পূর্ণ শক্তি ব্যবহারের আহ্বান জানান তিনি।
রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের ফেলো ক্রিস্টি উয়েদা বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে যেমনটা দেখা গিয়েছিল, ঠিক তেমনি ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশ সরকার নাগরিক অধিকার সংকুচিত করে চলেছে। তারা সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন, মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক ও সরকারের সমালোচকদের নিশানা করেছে। এসব মানুষ ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা প্রতিহিংসামূলকভাবে গ্রেপ্তার, হয়রানি ও ভীতির শিকার হচ্ছেন। মতপ্রকাশ ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ক্রমাগত সংকুচিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকার নিরপেক্ষ ও কার্যকর জবাবদিহিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ না করা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের চলমান নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা উচিত হবে না উল্লেখ করে উয়েদা বলেন, একই ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত অন্যান্য বাহিনীর বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি বিবেচনায় আনা উচিত। আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে গণতন্ত্রকে কার্যকর করতে নাগরিক স্বাধীনতার সুযোগ করে দেওয়ার ব্যাপারটিতে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়াবিষয়ক জ্যেষ্ঠ গবেষক জুলিয়া ব্ল্যাকনার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ফলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুম বাংলাদেশে তাৎক্ষণিকভাবে কমে এসেছে। কিন্তু এখনো লোকজনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পরে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে বা আদালতে হাজির করা হচ্ছে। কারা হেফাজতে নির্যাতনের কথাও শোনা যাচ্ছে। দেশটিতে জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় সহিংসতা বাড়তে দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে যে দাবি করছে, তা বিশ্বাস না করতে কংগ্রেসের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।