প্রকাশিত: ২৩/০১/২০১৭ ১১:৩৫ পিএম , আপডেট: ২৪/০১/২০১৭ ৩:৩৩ এএম
উখিয়া নিউজ ডটকম::

কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং ও টেকনাফের লেদা ক্যাম্প ছেড়ে চলে যাচ্ছে অনুপ্রবেশকারী অনেক রোহিঙ্গা। তারা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন এলাকায়। এতে আইন-শৃঙ্খলা অবনতির শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ক্যাম্প ছেড়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের অনেকেই আবার পাসপোর্ট করার চেষ্টায় রয়েছে। এজন্য তারা বিভিন্ন জেলায় পাসপোর্ট অফিস ঘিরে থাকা দালালদের শরণাপন্ন হচ্ছে।

বরিশালে আটক ৪ রোহিঙ্গা

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, গত সপ্তাহে বরিশাল সদর থেকে দুই তরুণীসহ চার রোহিঙ্গাকে গ্রেফতার করা হয়। দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট করতে তারা বরিশাল যান। কিন্তু ধরা পড়েনি দালালরা। বরিশালে গ্রেফতার রোহিঙ্গা ছৈয়দ হোসেন গত বুধবার কক্সবাজার থানায় সমকালকে জানান, গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি তিনি ১৮ বছর বয়সী মেয়ে ইয়াসমিনকে নিয়ে রাখাইন রাজ্যের মংডুর বলিবাজার এলাকা থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। এরপর এক আত্মীয়ের মাধ্যমে বরিশালে পাসপোর্ট দালাল চক্রের সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। ছৈয়দ হোসেন বলেন, ইয়াসমিনের পাসপোর্ট করতে তাদের সঙ্গে ২৮ হাজার টাকার চুক্তি হয়। দালালদের কথামতো আমরা বরিশাল গিয়েছিলাম। এরপর পুলিশের হাতে ধরা পড়ি। আমি মেয়েকে সৌদি আরবে পাঠাতে চাই।
বোন আমিনা খাতুনকে নিয়ে একই সঙ্গে গ্রেফতার হন মংডুর নাপুরা থেকে পালিয়ে আসা হোসেন আহমদ। তিনি বলেন, বরিশাল থেকে এর আগে আমার এক বোনের পাসপোর্ট করিয়ে দিয়েছে দালাল চক্রের সদস্যরা। তিনি আরও বলেন, বরিশাল পাসপোর্ট অফিসে যাওয়ার আগেই পুলিশ আমাদের গ্রেফতার করে। ওই সময় সরে পড়ে দালালরা।
উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পের স্বঘোষিত পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবু ছিদ্দিক জানান, গত তিন মাসে প্রায় ৪০ হাজার অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা ওই ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে তাদের অনেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে গেছেন। অনেকে খাসজমি ও বনভূমি দখল করে বাড়িঘর তুলছেন।
কুতুপালং ক্যাম্পের সামনে গত শুক্রবার সকালে গিয়ে দেখা যায়, মিয়ানমারের মংডু নাইচ্ছংপাড়া গ্রামের আলি আজগর কবিরাজ পরিবার নিয়ে সড়কের পাশে যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করছেন। তিনি বলেন, মরিচ্যা গরু বাজার এলাকায় আত্মীয় রয়েছে। আমরা সেখানে চলে যাচ্ছি। এর
কিছুক্ষণের মধ্যেই দেখা যায়, আরও এক রোহিঙ্গা পরিবার ক্যাম্প ছেড়ে যাচ্ছে। মংডুর কেয়ারিপাড়া থেকে আসা ওই পরিবারের সদস্য খুরশিদা খাতুন বলেন, ক্যাম্পে জায়গা সংকট। কাজ নেই তাই আয় রোজগারও নেই। কোনো সংস্থা থেকে সাহায্য-সহযোগিতাও দেওয়া হচ্ছে না। তাই জীবিকার সন্ধানে আমরা অন্যত্র চলে যাচ্ছি।
প্রতিদিনই কুতুপালং ক্যাম্প ছেড়ে রোহিঙ্গাদের অন্যত্র চলে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন ক্যাম্প ব্যবস্থাপনা কমিটির সেক্রেটারি মোহাম্মদ নুর। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা প্রথমে ক্যাম্পে এসে কয়েকদিন আশ্রয় নিলেও পরবর্তীতে অনেকেই চলে যাচ্ছেন। এখনও দেড় লাখের বেশি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থান করছেন। এত সংখ্যক রোহিঙ্গা এক স্থানে থাকার ফলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য বখতিয়ার আহমদ জানান, অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গারা অবাধে চলাচলের সুযোগ পাওয়ায় পছন্দের জায়গায় চলে যাচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেন, রোহিঙ্গাদের নিয়ন্ত্রণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কোনো দায়িত্ব পালন করছে না। কুতুপালং ক্যাম্প ইনচার্জ শামশুদ্দোজা জানান, শুধু নিবন্ধিত ১৩ হাজার রোহিঙ্গাদের বিষয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ ও আনসার দায়িত্ব পালন করছে। তিনি বলেন, অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের বিষয়ে আমাদের কোনো দায়দায়িত্ব নেই।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী সমকালকে জানান, গত সপ্তাহে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে ১৪ রোহিঙ্গা আটক হয়েছেন। এতে বোঝা যাচ্ছে, রোহিঙ্গারা সহজেই পাসপোর্ট পাচ্ছেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা এভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়লে তা হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

দেড় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নিয়ে হিমশিম প্রশাসন :উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালীতে দেড় লক্ষাধিক রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়ে বস্তি গড়ে তুলেছেন। তাদের নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে প্রশাসন। কুতুপালং এলাকায় নতুন করে নির্মিত শতাধিক বস্তিঘর সম্প্রতি ভেঙে দিলেও তারা আবার তা নির্মাণ করেছেন। উচ্ছেদ করতে গিয়ে পুলিশ ও বনকর্মীরা হামলার শিকার হয়েছেন। বালুখালী রোহিঙ্গা বস্তির মাঝি মোহাম্মদ হারুন জানান, কুতুপালং থেকে উচ্ছেদকৃত সাড়ে ৩ হাজার রোহিঙ্গা বালুখালী বস্তিতে আশ্রয় নিয়েছেন। এখন প্রায় ১০ হাজার রোহিঙ্গা রয়েছেন। প্রতিদিনই এখানে নতুন নতুন ঘর উঠছে।
উখিয়ার সদর বিট কর্মকর্তা আবদুল মন্নান জানান, প্রায় ৬০০ একর বনভূমি দখল করে বস্তি গড়ে তোলা হয়েছে। হামলার কারণে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রোহিঙ্গাদের বস্তি উচ্ছেদে সাহস পাচ্ছেন না। এ সুযোগে তারা গাছ কেটে বনভূমি দখল করছেন।

পাঠকের মতামত

যে কারনে তারেক রহমানকে ধন্যবাদ দিলেন মিজানুর রহমান আজহারী

চট্টগ্রামে মাহফিলে বক্তব্যকালে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ইসলামী স্কলার মিজানুর রহমান আজহারী। ...