আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবের বাংলাদেশে অফিস খোলার জন্য সরকারের দায়িত্বশীল বিভিন্ন মহল থেকে বলা হয়েছে।
দেশ ও সরকারবিরোধী প্রোপাগান্ডা নিয়ন্ত্রণ, অনলাইন জুয়া প্রতিরোধ এবং বিভিন্নজনের বিরুদ্ধে মানহানিকর কনটেন্ট প্রচার বন্ধের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বেশ কয়েক দফা ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে ফেসবুক ও ইউটিউব কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সাড়া দিচ্ছে না।
১৪ জুন জাতীয় সংসদ ভবনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে এ তথ্য মিলেছে। কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম এতে সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠকে কমিটির জাতীয় পার্টির সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, অনলাইন জুয়ার কারণে বহু পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। অনেক পরিবারে বিপর্যয় নেমে এসেছে। কোনোভাবেই অনলাইন জুয়ার সাইটগুলো বন্ধ করা যাচ্ছে না। অনলাইন জুয়ার বিজ্ঞাপন ফেসবুকে প্রচার হচ্ছে সবচাইতে বেশি।
পাশাপাশি ফেসবুক ও ইউটিউবে দেশবিরোধী প্রোপাগান্ডা, বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের বিরুদ্ধে মানহানিকর কনটেন্ট বেশি প্রচার হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে ভারতে অফিস খুলতে বাধ্য করেছে। ভারত ফেসবুক কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বাংলাদেশে বিপুলসংখ্যক মানুষ ফেসবুক ও ইউটিউব ব্যবহার করছে। অথচ আমরা তাদের অফিস খুলতে বাধ্য করতে পারছি না। অফিস না থাকায় আমরা কোনো তদারকিও করতে পারছি না। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকেন্দ্রিক ফেসবুকে নানা ধরনের অপপ্রচার ও গুজব ছড়ানো হবে। এসব প্রতিরোধের জন্য জাতীয় নির্বাচনের আগেই বাংলাদেশে ফেসবুক ও ইউটিউবের একটি অফিস খোলা জরুরি।
কমিটির আরেক সদস্য এ সময় বলেন, আমরা বিভিন্ন সময়ে দেখেছি ফেসবুক ও ইউটিউবে সত্য-মিথ্যা যা খুশি লিখে প্রচার করা হচ্ছে। ছবি প্রকাশ করা হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনীতিকে প্রভাবিত করার জন্য নানা তথ্য প্রকাশ করা হয়; যার আসলে সত্যতা মিলে না। খবর প্রকাশ করলে তার ভিত্তি বা সত্যতা না থাকলে বিভ্রান্তি তৈরি করে। সেই বিভ্রান্তি নিরসনের জন্য, বা যখনি কোনো বিতর্কিত সংবাদ হয়, সঠিক তথ্য ভিত্তিক না হয় তাহলে সেগুলো ফেসবুক ইউটিউব থেকে সরিয়ে দিতে পারে। বাংলাদেশে একটি স্থানীয় অফিস থাকলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সহজ হবে।
তাছাড়া বস্তুনিষ্ঠ তথ্যভিত্তিক কোনো কনটেন্ট প্রচার হলে তার গ্রহণযোগ্যতাও বাড়বে।
এ সময় বৈঠকে উপস্থিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান নিজেও সদস্যদের এসব বক্তব্যের সঙ্গে সহমত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, গুজব এবং অপপ্রচার বন্ধে সরকার সজাগ এবং সচেষ্ট। এ বিষয়ে আরও সজাগ এবং সতর্ক থাকতে হবে। পরে বৈঠকে সর্বসম্মতিক্রমে অনলাইন জুয়া, ফেসবুকে দেশবিরোধী অপপ্রচারসহ নানাবিধ সাইবার ক্রাইম বন্ধ করার লক্ষ্যে ফেসবুকের একটি স্থানীয় অফিস বাংলাদেশে স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বলা হয় কমিটির পক্ষ থেকে। জননিরাপত্তা বিভাগ এ নিয়ে কাজ করছে বলে জানানো হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পীর ফজলুর রহমান শনিবার যুগান্তরকে বলেন, বাংলাদেশে ফেসবুক ও ইউটিউব ব্যবহারকারী প্রচুর। তারা বাংলাদেশ থেকে কোটি কোটি টাকার বিজ্ঞাপন নিচ্ছে। অথচ অফিস খুলতে চায় না; এমনটি চলতে দেওয়া যায় না। ভারতের মতো বাংলাদেশেও ফেসবুক এবং ইউটিউবের স্থানীয় অফিস থাকতে হবে।
জানা গেছে, বৈঠকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন এ বিষয়ে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান ও সিনিয়র সচিব শ্যাম সুন্দর সিকদার।
তিনি বলেন, গুজব প্রতিরোধ, ধর্মীয় উসকানি বন্ধ ও অনলাইন জুয়া নিয়ন্ত্রণসহ নানা বিষয়ে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের কোয়াটারলি সভা হয়। আমরা তাদের যেসব পেজ বন্ধ করার অনুরোধ করি তারা সেটা রাখে। ওইসব সভায় আমরা বেশ কয়েকবার ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে বাংলাদেশে একটি স্থানীয় অফিস খোলার অনুরোধ জানিয়েছি। কিন্তু তারা আমাদের বলেছে এখনি তাদের পক্ষে অফিস খোলা সম্ভব নয়। বিভিন্ন সময়ে ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের যৌথ সভার কার্যবিবরণীতে বাংলাদেশে স্থানীয় অফিস খোলার বিষয়টি উল্লেখ রয়েছে।সুত্র যুগান্তর