মানুষ প্রকৃতিগতভাবে ভ্রমণবিলাসী। আদিমকাল থেকে প্রকৃতি থেকে জ্ঞান অন্বেষণের জন্য মানুষ সব সময় অতিক্রম করেছে তার নিজস্ব গণ্ডি। সৃষ্টি রহস্য, মানুষ ও প্রকৃতির বিভিন্ন রূপ দর্শনের মাধ্যমে মানুষ যেমন নিজেকে জানে, তেমনি বিশ্বজ্ঞানও লাভ করে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ আজো জীবন ও জীবিকার প্রধান পেশা। শিক্ষাকে পরিপূর্ণতা প্রদানের জন্য ভ্রমণের বিকল্প নেই। ভ্রমণ যেমন মানুষকে আত্মনির্ভরশীলতা শেখায়, তেমনি স্রষ্টার সৃষ্টি-রহস্যও মানুষের সামনে তুলে ধরে।আর স্রষ্টার সেই সব সৃষ্টি রহস্যেগুলোর মধ্যে চক্ষু মনের প্রকৃতি রস ও জ্ঞান অন্বেষনের পিপাসা মেটানোর অন্যন্য একটি জায়গার নাম চির যৌবনা সেন্টমার্টিন বা নারিকেল জিঞ্জিরা।যতই দেখি ততই দেখতে মন চাই! তার যৌবনের শেষ নাই,রুপেরও শেষ নাই।আর সেই রুপে ভরা চির যৌবনা সেন্টমার্টিন যাওয়ার সুযোগ হয় বাংলা বিভাগের ছাত্র হওয়ার সৌভাগ্যে।তবে বাড়ি টেকনাফ হওয়ায় অনেকবার সেন্টমার্টিন যাওয়ার সুযোগ হয়।তারমাঝে এবারে যাত্রায় মনের মধ্যে ভিন্ন অদ্ভুদ নতুন এক অনুভূতির আনন্দ বিরাজ করে।নতুন রুপের নতুন সাজের সেন্টমার্টিনকে উপভোগ করার।নির্দিষ্ট দিনে কলেজের সবাই নির্দিষ্ট সময়ে কলেজ প্রাঙ্গন থেকে বাসে করে টেকনাফের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।টেকনাফ কেয়ারি ঘাটে পৌঁছে জাহাজে ওঠে সেন্টমার্টিনের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে তাই সবাই নির্দিষ্ট সময়ে কেয়ারি ঘাটে পৌঁছে যাই।কেয়ারি ঘাট মানে জাহাজের ঘাট।আমিও টেকনাফ থেকে সবার সাথে যুক্ত হলাম।সবাই একসাথে এলসিটি কাজল জাহাজে ওঠলাম।আসতে একটু দেরি হওয়ায় সবাই জাহাজে ওঠে নির্দিষ্ট সিট না পাওয়ায় সবার মনে একটু বিষন্নতা কাজ করলেও জাহাজ ছেড়ে দেওয়ার মুহুর্তের মধ্যে সবার মনে ফুড়ফুড়ে এক আনন্দের ধুলা বয়ে যায়।নদী এবং নদীর উপারে দাঁড়িয়ে থাকা মায়ানমার ও টেকনাফের দু ধারের সারি সারি পাহাড় আর সবুজ শ্যামল গাছ গাছালি ও রোদের লুকোচুরি খেলা দেখতে লাগলাম। তখন কুয়াশা একটু একটু কেটে গেছে। রোদ ঝলমল তরতাজা সকাল। সূর্যের তাপ তখনো ততটা বাড়েনি। কর্মব্যস্ত টেকনাফ বন্দরে কুলিদের হাঁক-ডাক। শান্ত নাফ নদীর বুকে কাঁপন উঠিয়ে মাছধরা নৌকাগুলো এগিয়ে যাচ্ছে সাগরের পানে। তীরে অনেক দূর পর্যন্ত ঘন সবুজ ম্যানগ্রোভ-বন ও পাহাড়ের তলাতে নাফ নদীর লুকোচুরি খেলা। মনে হলো গেয়ে উঠি ‘হৃদয় আমার নাচেরে।এভাবে দেখতে দেখতে নাফ নদী অতিক্রম করে বঙ্গোপ সাগরের বুক চিরে আমরা সেন্টমার্টিন পৌঁছে গেলাম।আমরা যেহেতু একরাত থাকব তাই সবাই মিলে আগে হোটেলে ওঠে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম।তারপর একটু বিশ্রাম নিয়ে ভ্রমণ পিপাসা ও মনের খোরাক মেটানোর জন্য সবাই চির যৌবনা সেন্টমার্টিনকে উপভোগ করতে হোটেল থেকে বের হলাম।সূর্যের প্রখরতা তখনো কমেনি। কিন্তু আমাদের ভেতরের উচ্ছাস এবং কৌতূহল মেটাতে গ্রুপ গ্রুপ করে কেউ হেঁটে কেউ ভ্যানে কেউ আবার সাইকেলে করে ভাগ ভাগ হয়ে গেলাম।আমরা কজন সাইকেল নিয়ে নেমে পড়লাম সমুদ্রের তীরে। প্রবাল, পাথর ঝিনুক, কেয়াবন, সমুদ্রগুল্ম দেখতে দেখতে সেই বিকেলে আমরা চলে এলাম দ্বীপের একেবারে মধ্যপ্রান্তে।সৌন্দর্য যেখানে বেশি মন কেড়ে নীলজলরাশি,ঝিনুকের বাঁক,অথৈ পানি,বালুকাময় ভূখন্ডের সবুজের পরিপূর্ণতা, সূর্যাস্তের রক্তলাল আভার হৃদয় আকুল ও মৃদু ধ্বনির আছড়ে পড়ার ঢেউ।আর দিনের শেষের ক্লান্ত শরীরের জড়া জীর্ণতা দূর করার জন্য জোসনা রাতের চাদেঁর হাসির সাথে তাল মিলিয়ে রাতের বার বি কিউ,গান কৌতুকের মুধুর আয়োজন ও জোসনা রাতের জোসনার সাথে সাগরের নীল জলরাশির মধুর প্রেম নতুন সাজে সজ্জিত করে তুলে চির যৌবনা সেন্টমার্টিনকে।পরের দিনের ছেঁড়া দ্বীপের ট্রলার ভ্রমনের নীল জল রাশির সচ্ছ পানির ভিতরের চাকচিক্য প্রবাল পাথরের মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ও স্যার, বড় আপু,বড় ভাইদের সেন্হসুলভ নিবির প্রমের গভীর ভালবাসা হৃদয়কে উদ্বেলিত করে দেয়।শিক্ষা সফর একদিকে যেমন মনের প্রকৃতি প্রেমের সুপ্ত বাতিগুলোকে জাগ্রত ও শিক্ষার আলোকে বিকশিত করে আবার অন্যদিকে স্যার,বড় আপু,বড় ভাই,বন্ধু-বান্ধবী,ছোট ভাই ও ছোট বোনদের সাথে গভীর ভালবাসার যোগসূত্রকে আরও বেশি কাছে আসার, আপন হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়।
ওসমান গণি
অনার্স ৩য় বর্ষ(বাংলা বিভাগ)
ককসবাজার সরকারী কলেজ