মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে গোলাগুলি থেকে রক্ষা পেতে, এবার বাড়ি ঘরেই বাঙ্কার তৈরি করে থাকছেন তুমব্রুবাসী। রোববারও মিয়ানমারের এক সৈনিকের মরদেহ ভেসে এসেছে পালংখালীতে। তবে ২৪ ঘণ্টায় তেমন কোনো গোলাগুলির শব্দ না আসায় সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে কিছুটা স্বস্তি এসেছে।
ঘটনাস্থল বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু থেকেও আরো পাঁচ কিলোমিটার ভেতরে কাঁটাতারের বেড়া সংলগ্ন মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষীদের একটি নজরদারি চৌকি। সেখানে একটি টং ঘরের মধ্যে পাঁচজন বসে আছেন। মাঝেমধ্যে নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন।
যাদের মধ্যে আরাকান আর্মির ইউনিফর্ম পড়া একজন আর বাকিরা সাধারণ পোশাকে। তাদের সবাই অস্ত্রধারী। এলাকাবাসী বলছেন, এরা সবাই আরাকান আর্মির সদস্য। সাত দিনেরও বেশি সংঘাতের পর, এখন রাখাইন রাজ্যটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আরাকান আর্মি। তারাই পাহারা দিচ্ছে সীমান্তে।
ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তের বিভিন্ন সীমান্ত প্রাচীরে আরাকান আর্মির সদস্যদের সশস্ত্র অবস্থায় পাহারা দিতে দেখা গেছে। সেখানে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের সেনাবাহিনীর কোনও উপস্থিতি চোখে পড়েনি। ২৪ ঘন্টাতে তেমন কোন গোলাগুলির শব্দ শোনা না গেলেও স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক এখনো কাটেনি।
তুমব্রুর হেডম্যান পাড়ার সামনে মনিরুল ইসলামের একটি দোকান আছে। মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষীদের যে ক্যাম্প রয়েছে, ঠিক সেই পাহাড়ের নিচেই তার দোকান। জানালেন গুলি থেকে বাঁচতে রাস্তার নিচের পানি চলাচলের ব্র্যান্ডকে তিনি এখন বাঙ্কার হিসেবে ব্যবহার করছেন।
এলাকার অনেক বাড়িতেই এখন এ রকম বাঙ্কারের মতো গর্ত খুড়ে নিজেদের নিরাপত্তা নিজেরাই নিশ্চিত করেছেন এলাকাবাসী। খুব প্রয়োজন ছাড়া মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দাদের সীমান্তের কাছাকাছি নিজের জমিতেও যাওয়া নিষেধ করেছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদগুলো।
ঘুমধুমের ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, সীমান্তর পরিস্থিতি অবনতির পর এখন স্বাভাবিকভাবে মানুষের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। কিন্তু এখনও সীমান্তে বসবাসকারীদের মাঝে পুরোপুরি আতঙ্ক কাটেনি। বর্তমানে সীমান্তে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
এদিকে, তুমব্রু সীমান্তে বাংলাদেশের ভূখন্ডে পড়ে থাকা দুটি অবিস্ফোরিত গ্রেনেডযুক্ত রকেটের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সেগুলো নিষ্ক্রিয় করেছে সেনাবাহিনীর বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট। রোববার বিকেল চারটার দিকে তমব্রু সড়কের ২০০ গজ দূরে ব্রিজ ও সড়কের পাশে দুটি মর্টার শেল নিষ্ক্রিয় করা হয়।
শনিবার সকালে তুমব্রু সীমান্তের পশ্চিমকুলে ফসলের ক্ষেতে কাজ করার সময় অবিস্ফোরিত রকেট লঞ্চার দেখতে পায় স্থানীয়রা। পরে বিজিবি’কে জানানো হলে প্রায় ১১টায় দুটি রকেট লাঞ্চার উদ্ধার করা হয়। পরে সেটি একটি স্থানে নিরাপদে রেখে দেয়া হয়, চারপাশে টাঙ্গিয়ে দেয়া হয় লাল পতাকা।
অন্যদিকে, রোববার দুপুরে সীমান্তের বেশ কয়েক কিলোমিটার ভেতরে খালের মধ্যে ভেসে আসে একটি মরদেহ। নিহতের মাথায় হেলমেট, গায়ে ইউনিফর্ম ও লাইফ জ্যাকেট পরা। তাকে মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর সৈনিক বলেই মনে করা হচ্ছে।
উখিয়া থানার ওসি শামীম হোসেন জানান, উপজেলার বালুখালী কাস্টমস এলাকায় মরদেহটির দেখা মেলে। মাথায় জলপাই রংয়ের হেলমেট আর খাকি পোশাক পরা লাশটি মিয়ানমার থেকে ভেসে বলে মনে করা হচ্ছে। স্থানীয়রাও মনে করছেন মরদেহটি মিয়ানমার থেকে ভেসে আসার সম্ভাবনা বেশি।
গোলাগুলি কমেছে, জান্তা সরকারের আশ্রয়প্রার্থী বেড়ে ৩২৮গোলাগুলি কমেছে, জান্তা সরকারের আশ্রয়প্রার্থী বেড়ে ৩২৮
মিয়ানমারে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মি ও আরকান সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের হাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিপি), মিয়ানমার সেনাবাহিনী, পুলিশ, ইমিগ্রেশন সদস্য ও অন্যান্য সংস্থার ৩৩০ জন সৈন্য বিজিবির কাছে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করে। দু’দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আলোচনার পর তাদের ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়। এরিইমধ্যে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সুত্র: একাত্তর