পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) বিরুদ্ধে পুলিশের সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের অভিযোগ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, বাবুল আক্তার যে অভিযোগ করেছেন সেগুলো বাস্তবসম্মত কি না, তা তদন্ত হলেই বোঝা যাবে। পিবিআইর ওপর আমাদের ভরসা আছে।
শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরে আয়োজিত এক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
পিবিআইর ওপর আমাদের ভরসা আছে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আরও বলেন, সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তদন্তে কোনও ভুল করবে না পুলিশ ব্যুরো অব ইনস্টিগেশন (পিবিআই)।
পিবিআই এখন পর্যন্ত যা করেছে সবই বাস্তবসম্মতভাবে করেছে। বাবুল আক্তার যে প্রশ্নগুলো তুলেছেন তদন্তের পরই সবগুলোর উত্তর আপনারা পেয়ে যাবেন।
পিবিআই এর প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের বিরুদ্ধে বাবুল আক্তারের অভিযোগের ফলে তদন্তে কোনও প্রভাব পড়বে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, বাবুল আক্তার অত্যন্ত চতুর মানুষ। সে কখন কী বলে সেটা তার ব্যাপার। তদন্তের পরেই সবকিছু চলে আসবে।
ছয় পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা
এর আগে বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদারসহ ছয় পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেন স্ত্রী হত্যা মামলায় কারাগারে থাকা সাবেক এসপি বাবুল আক্তার।
পিবিআই হেফাজতে থাকার সময় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন দাবি করে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুন্নেছার আদালতে তিনি মামলার আবেদন করেন।
আবেদনে আসামি করা হয়েছে, পিবিআই চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের এসপি নাজমুল হাসান, চট্টগ্রাম মেট্রো ইউনিটের এসপি নাঈমা সুলতানা, পিবিআইয়ের সাবেক পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা, একেএম মহিউদ্দিন সেলিম ও সংস্থাটির চট্টগ্রাম জেলা ইউনিটের পরিদর্শক কাজী এনায়েত কবিরকে।
আবেদনে নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন, ২০১৩-এর ১৫(১) ধারা এবং সংশ্লিষ্ট আইনের ৫(২) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
আবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালের ১০ মে থেকে ১৭ মে পর্যন্ত সময়ে পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো ও জেলা অফিসে বাবুল আক্তারের ওপর নির্যাতন করা হয়।
স্ত্রী হত্যার ঘটনায় মিথ্যা স্বীকারোক্তি দেওয়ার জন্য বাবুল আক্তারের সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়। এ কারণে মামলাটি দায়ের করা হয়।
প্রসঙ্গত…
২০১৬ সালের ৫ জুন চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড় এলাকায় গুলি করে ও কুপিয়ে মাহমুদাকে হত্যা করে দুর্বত্তরা।
এ সময় তিনি বড় ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে জিইসি মোড়ে গিয়েছিলেন। ঘটনার সময় বাবুল ঢাকায় ছিলেন।
পরে তিনি চট্টগ্রামে গিয়ে ওই ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন।
বাবুলের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে তার শ্বশুরের করা মামলার অভিযোগপত্রে তাকে প্রধান আসামি করা হচ্ছে।
পিবিআইয়ের দাবি, বাবুল আক্তারের পরিকল্পনা ও অর্থায়নে মাহমুদা খানম মিতুকে হত্যা করা হয়। অন্য নারীর সঙ্গে সম্পর্কের জেরে তিনি স্ত্রী মাহমুদাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
এ জন্য সোর্সের (তথ্যদাতা) মাধ্যমে তিনি তিন লাখ টাকায় খুনি ভাড়া করেন।
অন্যদিকে বাবুল আক্তারের বাবা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ মিয়া অভিযোগ করেছেন, মিতু হত্যা মামলার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত না করে সাবেক এসপি বাবুল আক্তারকে জড়ানোতে বেশি সচেষ্ট তদন্তকারী সংস্থা পিবিআই।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে মিথ্যা সাক্ষী সাজিয়ে স্ত্রী হত্যায় জড়িত প্রমাণ করে বাবুলের সাজা হয়তো দেওয়া যাবে, কিন্তু এই তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে মিতু হত্যার প্রকৃত রহস্য উদঘাটন সম্ভব হবে না